৫৩ বছর ধরে পাক বাহিনীর ছোড়া গুলি শরীরে বইছেন রাশিদা

প্রকাশিত: ১:১৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৮, ২০২৪

সময়টা ১৯৭১ সালের ২৪ আগস্ট দুপুরবেলা। তখনও মুক্তিযুদ্ধ চলছে। নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার চিথোলিয়া পাল বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে পাশের গোপালাশ্রম গ্রামে হানা দেয় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামস বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় পালাতে গিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে অনেকে শহীদ হন, আহত হন আরও অনেকে। গুলিতে আহতদের একজন গোপালাশ্রম গ্রামের রাশিদা আক্তার।

একাত্তরে যুদ্ধের সময় সেই ২০ বছরের তরুণী রাশিদার বয়স এখন ৭৩ বছরের বৃদ্ধা। পাকিস্তানি বাহিনীর ছোড়া গুলি তার পিঠের ডান পাশে কাঁধের নিচে লাগে। সেই গুলি আর বের করা যায়নি। ৫৩ বছর ধরেই রাশিদা নিজের শরীরে সেই গুলি বহন করে চলেছেন। ফলে মাঝে মধ্যেই ভুগতে হয় অসহনীয় ব্যথায়। গুলিবিদ্ধ হবার পর ডান চোখেও ঠিকমতো দেখতে পান না তিনি। আর্থিক অসচ্ছলতায় ন্যূনতম চিকিৎসাও জুটেনি তার কপালে। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে শরীরের ভেতরে থাকা গুলির ধকল আর সইতে পারছেন না বলে বৃদ্ধা রাশিদা আক্তার ও তার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।

ওই দিনের ঘটনা জানতে চাইলে রাশিদা বলেন, ‘ওই দিন স্বামী আমার বাবার বাড়িতে ছিল। ওই দিন দুপুরবেলা গোলাগুলির শব্দ শুনলাম। আমার চাচা শ্বশুর বলল, বাড়িতে থাইকো না, মনাং গ্রামে চলে যাও। বাড়ি থেকে নৌকায় যাওয়ার সময় একটা গর্তের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় পা পিছলে বাচ্চা নিয়ে গর্তে পড়ে যাই। তখন আমার চাচা শ্বশুর হাত ধরে টাইনা আমারে উপরে ওঠায়। উঠানোর পর উনি একটা নৌকা আনলো। আমি আমার ছেলেকে নিয়া রওনা দিলাম মনাং গ্রামে যাওয়ার জন্য। সঙ্গে আমার জা, আমার চাচি শাশুড়ি আরও অনেক আছিল। নৌকায় ওঠার পর চাচা শ্বশুর নৌকা চালাচ্ছিল। হঠাৎ করে তার মাথায় একটা গুলি লাগল। গুলি লাগার পর ধপাস করে পড়ে গেলেন উনি।

হঠাৎ করে আমার পিঠে ধপাস করে কী একটা লাগলো। আমি আমার চাচি শাশুড়িকে কইলাম আমার পিঠে কী হয়েছে? তারা একটু কাপড়টা সরাইয়া দেখল গুলি লাইগা এত বড় গর্ত হইয়া গেছে। এই ঘটনা মনাং গ্রামের লোকজন আগাইয়া আইসা আমাদের নিয়ে গেল।’