‘যে দেশে নাই তরু-সেই দেশটা হয় মরু’

প্রকাশিত: ১২:১৩ অপরাহ্ণ, মে ৪, ২০২৪

মানুষ পৃথিবীতে আসার পূর্বেই বৃক্ষের সৃষ্টি হয়। আদিকাল থেকেই মানুষ ও প্রাণীকূল তাদের খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল। আধুনিক সভ্যতা ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে চাপ পড়েছে বৃক্ষের উপর। বিলুপ্ত হচ্ছে উদ্ভিদ ও প্রাণীকূল। আর এ প্রতিক্রিয়ায় দেখা দিচ্ছে, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, খরা, সাইক্লোন, ঘূর্ণিঝড় সহ নানাবিধ প্রাকৃতিক দূর্যোগ। হুমকিতে পড়ছে আমাদের প্রতিবেশ, পরিবেশ ও মানবজাতি। বায়ুমন্ডলের কার্বন ডাই অক্সাইড ও অক্সিজেনের ভারসাম্য রক্ষায় যে পরিমান বৃক্ষরাজি থাকা দরকার সে পরিমাণ না থাকায় বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড ক্রমাগত বাড়ছে। ফলে গ্রীনহাউজ গ্যাসের প্রতিক্রিয়ায় পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে, মরু অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা বাড়ছে। আর এতে সর্বাধিক হুমকিতে রয়েছে বাংলাদেশের মতো উপকূলবর্তী বদ্বীপসমূহ।

পরিবেশ সুরক্ষায় প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের দেশে বৃক্ষরাজি অনেক কম। তাই সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছর বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়, যেমন পরিবেশ মেলা, বৃক্ষমেলা, সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি, বসতবাড়ী বনায়ন কর্মসূচি, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, ফলদ-বনজ-ভেষজ বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম, ফলদ বৃক্ষমেলা প্রভৃতি। এসব মেলা থেকে সবধরণের গাছের চারাই সংগ্রহ করা যায়। পাশাপাশি পাওয়া যায় বাগানের নানাবিধ উপকরণ ও সেবা।

বর্ষাকাল গাছের চারা লাগানোর উৎকৃষ্ট সময়। সাধারণত উর্বর, নিষ্কাশনযোগ্য ও উঁচু স্থানে গাছের চারা রোপণ করা উত্তম। বসতবাড়ির দক্ষিণপাশে রোদ ও আলোর জন্য ছোট এবং কম ঝোপালো গাছ যেমন সুপারি, নারিকেল, নিম, সজনে, দেবদারু, পেঁপে, পেয়ারা, লেবু, জাম্বুরা, ডালিম গাছ লাগানো যেতে পারে। তবে উত্তরপাশে বড় ও উঁচু গাছপালা থাকলে ঝড়-তুফান প্রতিরোধ হয়। তাই এখানে আম, কাঁঠাল, জাম, মেহেগনি, সেগুন, বাঁশ ইত্যাদি গাছ রোপন করা ভালো। আবার বসতবাড়ীর পূর্ব ও পশ্চিম পাশে মাঝারি উঁচু গাছ যেমন কুল, সফেদা, আম্রপালি, লিচু, খেজুর, তাল, আতা, বেল পেয়ারা প্রভৃতি লাগালে সারাদিন বসতবাড়ীর আঙ্গিনায় আলো পাওয়া যায়। বসতবাড়ীতে গাছ লাগানো নিয়ে বেশ কিছু খনার বচন প্রচলিত রয়েছে। যেমন- উঠান ভরা লাউ শশা, খনা বলে লক্ষির দশা। হাত বিশেক করি ফাঁক-আম কাঠাঁল পুতে রাখ। নারিকেল বার হাত সুপারি আট, এর থেকে ঘন হলে তখনি কাট। পূবে হাঁস-পশ্চিমে বাঁশ, উত্তরে কলা-দক্ষিণে খোলা।

গাছ লাগানোর জন্য সতেজ, সবল, রোগমুক্ত, সোজা, কম শাখা প্রশাখা বিশিষ্ট চারা নির্বাচন করতে হবে। নার্সারি থেকে চারা সংগ্রহের পর কয়েকদিন ছায়াযুক্ত স্থানে রেখে দিয়ে চারাকে হার্ডেনিং করে নিতে হবে। এতে চারা গাছ মরে যাওয়ার ঝুঁকি কমে। গাছভেদে নির্দিষ্ট দূরুত্বে চারাগাছ রোপণ করতে হবে। গাছের চারা রোপণের পূর্বে মাটি গর্ত করে জৈবসার দিয়ে মাটি প্রস্তুত করে নিতে হবে। চারার পলিথিন ব্যাগ অপসারন করে আলতোভাবে গোড়ার মাটির চাকাসহ সোজা করে বসিয়ে দিতে হবে। তারপর চারার চারপাশে ফাঁকা জায়গায় প্রথমে উপরের উর্বর মাটি এবং পরে নিচের মাটি দিয়ে ভালোভাবে পূরণ করে দিতে হবে। চারা লাগিয়ে শক্ত খুঁটি দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। চারপাশে বাঁশের খাঁচা দিয়ে বেড়া দিতে হবে। চারার গোড়ায় প্রয়োজনে সেচ দিতে হবে। মাটির আদ্রতা রক্ষায় গোড়ার আগাছা পরিষ্কার করে খড় কুটো বা কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। কোন কারণে চারাগাছ মারা গেলে দ্রুত নতুন চারা ঐ গর্তে রোপণ করতে হবে। সাধারণত বছরে দু’বার বর্ষার পূর্বে ও পরে গাছের গোড়ায় সুষম সার দিতে হয়। সার দেয়ার পর পানি ছিটিয়ে দিতে হবে। এছাড়াও গাছের মৃত ডালপালা ছাটাই করতে হবে। এছাড়াও রোগবালাই ও পোঁকামাকড়ের আক্রমণ হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।