২০ দিন ধান কেটে ছয় মাসের ‘খোরাকি’

প্রকাশিত: ১:২৭ অপরাহ্ণ, মে ৬, ২০২৪

কৃষক যেমন সারাবছরের একমাত্র ফসল গোলায় তোলার জন্য বৈশাখের শুরু থেকেই হাওরের দিকে তাকিয়ে থাকেন; ঠিক তেমনি শ্রমিকরাও এই সময়ে অন্যসব কাজ ফেলে ছুটে আসেন ধান কেটে ‘খোরাকি’ সংগ্রহের জন্য।

হাওরের ধান কাটতে বড়জোড় ১৫ থেকে ২০ দিনের মতো সময় লাগে। এই সময়ে দিনরাত কাজ করে কেউ কেউ পাঁচ-ছয় মাসের ‘খোরাকি’ সংগ্রহ করতে পারেছেন বলে শ্রমিকরা জানিয়েছেন।

তাদের ভাষ্য, এখন হাওরে বাইরের শ্রমিক খুব একটা না আসায় স্থানীয় শ্রমজীবীদের এই সময়ে ব্যাপক চাহিদা থাকে। ফলে কাজ পেতে যেমন অসুবিধা হয় না; তেমনি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকদের কিছু সুবিধাও বেড়েছে।

হাওরের সাধারণ কৃষক ও শ্রমিকদের কাছে ‘খোরাকি’ মানে, ন্যূনতম তিন বেলা পেটভরে ভাত খাওয়ার মতো ধান বা চাল গোলায় থাকা। ভাতের জন্য প্রয়োজনীয় চালের বাইরে উদ্বৃত্ত কিছুটা অংশ বিক্রি করে ডাল, তেল, লবণ, মসলাপাতি ক্রয় করা হয়। যেন ‘কর্মহীন বর্ষাকাল’ কিংবা ‘চৈত্রের নিদানে’ ঘরের মানুষকে না খেয়ে থাকতে না হয়।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের দেখার হাওরে সদড়গর গ্রামের শ্রমিক আমির আলী একটি দলের নেতৃত্ব দেন। তার দলে তিনিসহ মোট নয়জন শ্রমিক। তারা এবার ধান কেটেছেন ইসলামপুর গ্রামের একজন কৃষকের।

আমির আলী বলছিলেন, “ইবার দিনমাদান ভালো থাকলেও খুবই গরম। গরমে ধান কাটতে কষ্ট হইছে। ইবার ধান কাইটা ১২-১৩ মণ ধান সংগ্রহ করেছে প্রত্যেকে। এইডা দিয়া ৪-৫ মাসের ভাতের চিন্তা দূর হয়েছে।

“এখন অন্য কাজ করে সংসারের বাদবাকি কাজ করতে পারব”, বলেন এই শ্রমিক।

হাওরের শ্রমজীবী মানুষ এখন আর শুধু কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করেন না। ধান কাটা শেষ হলে বর্ষাকালে স্থানীয়ভাবেই তারা বিকল্প কর্মসংস্থানে যুক্ত হন কিংবা শহরে গিয়ে কাজ করেন। ফলে এক-দুই দশক আগেও যে শ্রমিককে শুধু কৃষির ওপর নির্ভর করে বাঁচতে হত; এখন অধিকাংশ শ্রমিকের কাছেই কৃষি বছরের একটি ‘নির্দিষ্ট সময়ের কাজে’ পরিণত হয়েছে। যা তাকে বাড়তি উপার্জন দেয়।