২০০৯ এর চ্যাম্পিয়নরা কি পারবে আবারও শিরোপা ঘরে তুলতে?

প্রকাশিত: ৪:১৬ অপরাহ্ণ, মে ১৮, ২০২৪

আর মাত্র দুই সপ্তাহ। এরপরই যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে শুরু হবে ব্যাটে-বলের সেই লড়াই। যেখানে চার-ছক্কার জোর যার বেশি, দাপটটাও তাদেরই বেশি। আর তাই এবার আসন্ন এই টি-২০ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে প্রতিটি দলই তাদের সেরা খেলোয়াড়দের নিয়েই দল সাজিয়েছে।

অন্যান্যবার ১০টি দল নিয়ে এই টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হলেও এবার তা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। আর এতে করে বদলেছে খেলার সমীকরণও। যার জন্য সব দিক বিবেচনা করেই দল গুছিয়েছে প্রতিটি দল। ইতোমধ্যেই বৈশ্বিক এই টুর্নামেন্টকে কেন্দ্র করে ২০ দলের মধ্যে ১৯টি দল তাদের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে। একমাত্র ব্যতিক্রম পাকিস্তান। আসরের সপ্তাহ দুয়েক বাকি থাকলেও আনুষ্ঠানিকভাবে দল ঘোষণা করতে পারেনি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)

তবে পাকিস্তানি কিছু সংবাদ মাধ্যম বলছে, আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করতে আরও চার-পাঁচ দিন সময় নেবে পিসিবি। কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছে, ইনজুরি ও পুনর্বাসনের মাধ্যমে সেরে ওঠা কিছু খেলোয়াড়ের অনিশ্চয়তা।

জানা গেছে, চোট থেকে সেরে উঠতে পুনর্বাসনে থাকা পেসার হারিস রউফ ১৫ সদস্যের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছেন। সেই সাথে ট্রাভেলিং রিজার্ভ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান ধরতে পারেন পেসার হাসান আলী, অলরাউন্ডার সালমান আলী আগা ও ইরফান খান।

তবে বাকি সব দলের স্কোয়াড ঘোষণার পরও পাকিস্তান দল ঘোষণা না করায় নানা প্রশ্নের মুখে পড়েছে পিসিবি। এ নিয়ে শুরু চলছে ব্যাপক সমালোচনা। যদিও ২৭ মে পর্যন্ত সময় আছে ক্রিকেট বোর্ডের হাতে।

পাকিস্তানের বিশ্বকাপ দল নিয়ে ইতোমধ্যেই নানা গুঞ্জন চলছে ক্রীড়াঙ্গনে। কে বা কারা থাকছেন দলে তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা থাকলেও বিভিন্ন সূত্র বলছে, ওপেনিংয়ে মোহাম্মদ রিজওয়ান ও বাবর আজম জুটিই নিশ্চিতভাবে থাকছেন। তবে যেহেতু বৈশ্বিক এই টুর্নামেন্টে চার-ছক্কার দাপট বেশি, সেহেতু প্রতিপক্ষ ও পিচ বিবেচনায় এখানে পরিবর্তন আসতে পারে।

এ বিষয়ে কথা বলেছেন দেশটির তারকা ক্রিকেটার শোয়েব মালিক। তিনি বলেন, কোনো ম্যাচ যদি হাই স্কোরিং হয়, তা হলে ঝুঁকি নিয়ে অতিমাত্রায় আক্রমণাত্মক সাইম আইয়ুবকে ওপেনিংয়ে নামিয়ে দেওয়া উচিত। আর যদি ম্যাচ খুব বেশি রানের না হয়, তা হলে বাবর আজম–মোহাম্মদ রিজওয়ানের ওপেনিং জুটি ঠিক রয়েছে।

নাসাউ কাউন্টি স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে শোয়েব মালিককে প্রশ্ন করা হয়েছিল পাকিস্তানের ওপেনিং জুটি নিয়ে। তখন তিনি বলেন, ‘দেখুন, সাইম আইয়ুব উচ্চ ঝুঁকি নিয়ে খেলা একজন খেলোয়াড়। যে কোনো ব্যাটসম্যান, যারা বেশি ঝুঁকি নিয়ে খেলে, তাদের ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করার সুযোগ কম।’

শোয়েব মালিক এরপর আইয়ুবকে নিয়ে বলেন, ‘ওর মধ্যে অমিত প্রতিভা আছে। আপনাকে দেখতে হবে যে হাই স্কোরিং ম্যাচ হয় কিনা, যদি সেটিই হয়, সাইম আইয়ুবকে দিয়ে ওপেন করাতে হবে। আর যদি হাই স্কোরিং ম্যাচ না হয়, তখন এটা কন্ডিশনের ওপর নির্ভর করবে। ম্যাচ যদি হয় ১৬০–১৭০ রানের, তাহলে আমার মনে হয় বাবর ও রিজওয়ানেরই ওপেন করা উচিত।’

তবে শুধু ওপেনিং জুটি নয়, মিডল অর্ডার, ফিনিশার থেকে শুরু করে বোলিং সবখানেই এবার বেশ ভালোভাবে নজর দিচ্ছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। গেল আসরে শিরোপার দ্বারপ্রান্তে গিয়েও ফেরত আসার যে আক্ষেপ, সেটি এবার কাটিয়ে উঠতে চায় তারা।

পাকিস্তানের গণমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, মিডল অর্ডার সামলাতে দলে জায়গা পেয়েছেন আজম খান, ইমাদ ওয়াসিম ও ইফতিখার আহমেদের মতো প্রতিভাবানরা। এছাড়া প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের ভড়কে দিতে শাহিন আফ্রিদির ইউনিটে রয়েছেন দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা মোহাম্মদ আমির, নাসিম শাহ, আব্বাস আফ্রিদি ও পুনর্বাসনে থাকা হারিস রউফ। সবমিলিয়ে পাকিস্তানের বোলিং ইউনিট যে এবার যেকোন দলের ব্যাটারদের নড়বড়ে করে দিতে পারে তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা এটা দেখার যে, ২০০৯ এর চ্যাম্পিয়নরা আবারও শিরোপা নিজেদের ঘরে তুলতে পারে কি না।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তান দলের পারফরম্যান্স অনুযায়ী খুব একটা ভরসা করতে পারছে না ভক্ত সমর্থকরা। কারণ সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডের সাথে সিরিজে প্রতিপক্ষের ‘এ’ ক্যাটাগরির দলের সাথে জিততেও যে বাবর-রিজওয়ানদের ঘাম ঝরেছে। তবে এক্ষেত্রে কিছু পজিটিভ দিকও রয়েছে এটা নিঃসন্দেহেই বলা যায়। কারণ দীর্ঘদিন ধরে রান খরায় থাকা ব্যাটাররা এ সিরিজের মধ্য দিয়ে আবারও নিজেদের খাতায় রান তুলতে পেরেছেন। যদিও স্ট্রাইক রেটের দিক থেকে কেউই সেভাবে চমক দেখাতে পারেননি। তবে তারপরেও ভক্ত-সমর্থকদের প্রত্যাশা আসন্ন বিশ্বকাপে নিজেদের সেরাটা দিয়েই লড়াই করবে পাকিস্তান।

উল্লেখ্য, আগামী ২ জুন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মাঠে গড়ালেও ৯ জুন নিউইয়র্কের নাসাউ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচে মাঠে নামবে পাকিস্তান। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ ভারত। গ্রুপের বাকি দলগুলো হচ্ছে- আয়ারল্যান্ড, কানাডা ও স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র।

পাকিস্তানের সম্ভাব্য বিশ্বকাপ একাদশ:
বাবর আজম (অধিনায়ক), ফখর জামান, মোহাম্মদ রিজওয়ান, উসমান খান, আজম খান, ইমাদ ওয়াসিম, শাদাব খান, সাইম আইয়ুব, ইফতিখার আহমেদ, আবরার আহমেদ, শাহিন আফ্রিদি, মোহাম্মদ আমির, নাসিম শাহ, আব্বাস আফ্রিদি ও হারিস রউফ। রিজার্ভ : সালমান আলী আগা, হাসান আলী ও ইরফান খান।