থামছেই না যমুনা, ঘর-বাড়ি-স্কুলসহ গিলতে চাচ্ছে কিল্লাও

প্রকাশিত: ১:১৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ১, ২০২৪

সাফিয়া বেগম। যমুনার নদীর ভাঙন বিধ্বস্ত এলাকার কোথায়ও স্থায়ীভাবে বসবাসের সৌভাগ্য হয়নি। যেখানেই মাথা গুঁজতে গেছেন সেখানেই উত্তাল যমুনা এসে তার আশ্রয় গিলে খেয়েছে। ভাঙনের সঙ্গে লড়াই করতে করতে এখন ক্লান্ত তিনি। এর সঙ্গে রয়েছে সংসারের অভাব-অনটন। এ পর্যন্ত তাকে সাত বার ভিটে-মাটি হারাতে হয়েছে। এবার বর্তমান আশ্রয়ের কয়েক হাত দূরেই দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। যেকোনো সময় নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে তার শেষ আশ্রয়স্থল। তাই বসত ভিটার একমাত্র দো-চালা টিনের ঘরটি ইতোমধ্যে সরিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন ষাট ঊর্ধ্ব সাফিয়া। কিন্তু বসত-ভিটার মায়া ছাড়তে না পারায় সারাদিনই নাতি-নাতনি নিয়ে পড়ে থাকছেন ভাঙন কবলিত যমুনার পাড়ে।

সরেজমিনে শিবালয় উপজেলার যমুনা নদীর দুর্গম আলোকদিয়া চরে গিয়ে দেখা গেল, সাফিয়া বেগম কাঠফাটা রোদ আর তীব্র গরমে একটি তালাই বাশের ছাউনির নিচে নাতি-নাতনি নিয়ে বসে আছেন। তার চোখে মুখে ভয় আর হতাশার ছাপ। যমুনা নদী তার জীবনটাকে তছনছ করে দিয়েছে। সাফিয়া বেগম সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘রাক্ষুসী যমুনা আমাগো সব তছনছ কইর‌্যা দিছে। সাতবার বাড়ি ঘর ছাড়া করছে। ছোট ছোট নাতি নাতনি নিয়ে কই যামু, কই থাকুম, কি খামু জানি না। জীবন ভর ভাঙনের সাথে লড়াই করতে করতে এহন ক্লান্ত হয়ে গেছি।’

তিনি জানান, বসত ভিটার মায়া ত্যাগ করতে কষ্ট হয় বলেই নাতি-নাতনি নিয়ে সারাদিন নদী পাড়ের শূন্য ভিটায় পড়ে থাকেন। আর সন্ধ্যা হলে পরিবারের লোকজন নিয়ে পাশের মুজিব কিল্লায় চলে যান। কিন্তু যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে, তাতে সাফিয়া বেগমের মনে শঙ্কা জাগে ‘মনে হয় মুজিব কিল্লাও থাকব না’।

যমুনার ভাঙন বিধ্বস্ত চর এলাকায় শুধু সাফিয়া বেগমই নন, তার মতো শতাধিক পরিবার ইতোমধ্যে ভিটেমাটি হারিয়ে মানবতার জীবন-যাপন করছেন। তাদের বেশিরভাগই আশ্রয় নিয়েছেন নদী তীরবর্তী মুজিব কিল্লাসহ চরের উঁচু জায়গায়। যমুনায় তাদের ঠিকানা গিলে খাওয়ায় জীবনযাত্রায় দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

আলোকদিয়া চরে বছর তিনেক আগে যখন মুজিব কিল্লার আংশিক নির্মাণ করা হয় তখনও নদী ছিল প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে। কিন্তু গত দুই বছরে ভাঙরের তীব্রতা ভয়াবহ রূপ নেওয়ায় যমুনা এখন মুজিব কিল্লা থেকে মাত্র ৩০০ গজ দূরে। ভাঙনের তীব্রতা বাড়লে অসহায় মানুষের আশ্রয়স্থল মুজিব কিল্লাও যেকোনো মুহূর্তে চলে যাবে যমুনা গর্ভে। অবশ্য ইতোমধ্যে ভাঙনের আশঙ্কায় মুজিব কিল্লাটি নিলামে বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

শুধু তাই নয়, নদী পাড়ের টেঙ্গুরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিরও একই অবস্থা। বিদ্যালয়টি বিলীন হয়ে গেলে চরাঞ্চলের ১৩০ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনও অনিশ্চয়তার দিকে চলে যাবে। কথা হয় যমুনার ভাঙন বিধ্বস্ত এলাকার আরও বেশ কয়েকজন মানুষের সঙ্গে। তারা জানান তাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা। ঘরবাড়ি হারিয়ে তাদের অনেকেই মানবেতর জীবন যাপন করলেও দেখার কেউ নেই।