ময়লা সরালেও আবার আগের চেহারায় ফিরে যায় খাল প্রকাশিত: ১০:১৩ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ৬, ২০২৪ বছর না পেরোতেই আবারও পুরনো চেহারায় ফিরে গেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের খালগুলো। ময়লা আবর্জনার স্তূপে একেবারে বিবর্ণ রূপ ধারণ করেছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে বিশাল ভূমিকা রাখার কথা এই খালগুলোর, কিন্তু আবর্জনা জমে সেখানে স্বাভাবিক পানিপ্রবাহই বন্ধ। যার ফলে বর্ষা শুরুর আগে হালকা বৃষ্টিতেই পানি জমে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত বছরের জুলাইয়ের শেষ দিকে করপোরেশনের আওতাধীন কাজলা খাল, মাতুয়াইল কবরস্থান খাল, মৃধা বাড়ি খাল, শ্যামপুর খালের ২৪ ফুট রাস্তার সম্মুখ প্রান্ত থেকে মোহাম্মদী ব্রিজ পর্যন্ত পরিষ্কার করা হয়। শ্যামপুর খালের ২৪ ফুট রাস্তার সামনের প্রান্ত থেকে বটতলা পর্যন্ত, শাজাহানপুর ঝিল থেকে বাসাবো কদমতলা শুকনগর খাল, মান্ডা খালের শুকনগর থেকে শাপলা ব্রিজ হয়ে আমিন মোহাম্মদ ব্রিজ পর্যন্ত, স্টাফ কোয়ার্টার থেকে ডগাইর সাংবাদিক বাড়ি খাল, সুখনগর-নন্দীপাড়া-ত্রিমোহনী (জিরানি) খালে এবং জিয়া সরণি খালে বিশেষভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম চালানো হয়। কিন্তু বছর না পেরোতেই আবারও মানুষের ফেলা ময়লা-আবর্জনায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে খালগুলো। সরেজমিনে দেখা যায়, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯টি খালের সবকটিতেই কমবেশি আবর্জনার স্তূপ জমে আছে। গৃহস্থালির বর্জ্য থেকে শুরু করে দোকানপাটের বর্জ্য সবকিছু স্থান পেয়েছে এসব খালে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৬৩ নম্বর ওয়ার্ডের দিকে এগিয়ে যেতেই পথে পড়ে কাজলা খাল। ময়লার স্তূপের কারণে এই খালে পানি প্রবাহ বন্ধ। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে রাজধানীতে হওয়া বৃষ্টির কারণে এই এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ঘূর্ণিঝড়ের এক সপ্তাহ পরেও জলমগ্ন ছিল এলাকাটি। কারণ এখানে পানি প্রবাহের স্বাভাবিক পথ নেই। পলিথিন, প্লাস্টিক, ভাঙা চেয়ার, ছেঁড়া কাপড়, তোষক, বাঁশের চাটাই কী ভাসছে না ওই খালে। মাতুয়াইল ও মৃধা বাড়ি খালেরও একই অবস্থা। এই খালের পাড় দিয়ে যাওয়ার সময় মানুষ ময়লার গন্ধে নাক চেপে ধরতে হয়। স্থানীয় বাসিন্দা সোহানুর জানান, বাসা বাড়ির পয়োবর্জ্য সরাসরি এসে খালের পানিতে পড়ে। ময়লার স্তূপ জমে থাকায় খালের পানি প্রবাহ বন্ধ। যার জন্য পয়োবর্জ্য আর ইউরিনের গন্ধে মানুষকে এখান দিয়ে হাঁটার সময় নাক চেপে হাঁটতে হয়। বাসাবো কদমতলা শুকনগর খালের অবস্থাও শোচনীয়। দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা পানিতে মরা কুকুর, পলিথিন-প্লাস্টিকে একেবারে বাজে অবস্থা সেই খালের। সেখানকার বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, কয়দিন আগে এখানে গাড়ি এক্সিডেন্টে একটা কুকুর মারা গেছে। দুদিন ধরে পড়ে ছিল, সিটি করপোরেশনের লোকেরা নেয় নাই। পরে এখানকার কয়েকজন কোনোরকমে খালের মধ্যে ঠেলে ফেলে দিছে। খালে পানিতে স্রোত না থাকায় ওটা ওখানেই পড়ে আছে। এজন্য চারপাশে গন্ধ ছড়াচ্ছে। শ্যামপুর খাল ও নন্দীপাড়ার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া জিরানি খাল দেখে বোঝার উপায় নেই এই দুটো খাল নাকি ময়লার ভাগাড়। দূর থেকে মান্ডা খাল দেখতে একটা সবুজ মাঠের মতো। অবশ্য শ্যামপুর, জিরানি, মান্ডা ও কালুনগর খাল পুনরুদ্ধারের কাজ ইতোমধ্যেই শুরু করেছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। তবে সঠিক সময়ে এই কাজ শেষ করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে। নন্দীপাড়ার বাসিন্দা আতাউর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শুনেছি খাল সংস্কার আর দখলমুক্ত করার অভিযান শুরু করেছে সিটি করপোরেশন। কিন্তু এদিকে এখনও কোনও কাজ করতে দেখিনি। খাল দখলমুক্ত করতে পারবে কিনা এ নিয়ে সংশয়ে আছি। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অনেক খালের জমি কমবেশি দখলে চলে গেছে উল্লেখ করে এই বাসিন্দা আরও বলেন, যারা খাল দখল করেছে তারা সবাই স্থানীয় প্রভাবশালী। সিএস (ক্যাডেস্ট্রাল সার্ভে) এবং আরএস (রিভিশনাল সার্ভে) ম্যাপ অনুযায়ী দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উচিত সবগুলো খালে নতুন করে সীমানা চিহ্নিত করা। সীমানা চিহ্নিত করে দখল হয়ে যাওয়া খাল মুক্ত করতে পারলে খাল আরও বেশি প্রশস্ত হবে। তখন পানির স্বাভাবিক প্রবাহের সমস্যাটা কমবে। SHARES জাতীয় বিষয়: আবর্জনারখালগুলোময়লা