কোমরের ব্যাথায় ক্যানসারের ওষুধ, আইসিইউতে কৃষক

প্রকাশিত: ১১:৪৭ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ৬, ২০২৪

সুকণ্ঠ মণ্ডল, কোমরে ব্যথা নিয়ে স্থানীয় ডিসপেনসারিতে (ওষুধের দোকান) যান। রোগ সারাতে ৯টি ওষুধ দেওয়া হয় ডিসপেনসারি থেকে। তবে সুস্থতার বদলে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। বর্তমানে আইসিইউতে ভর্তি সুকণ্ঠ। চিকিৎসক জানিয়েছেন, তাঁর দুটি কিডনিই নষ্ট। স্বজনদের দাবি, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় মৃত্যুপথযাত্রী সুকণ্ঠ।

গত ১৫ জুন কোমর ব্যথা নিয়ে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের জলিরপাড়ের প্রত্যাশা ফার্মেসিতে যান কৃষক সুকণ্ঠ। দোকান মালিক প্রসুন বালা তাঁকে প্রেসক্রিপশন ও ওষুধ দেন। প্রেসক্রিপশনে দেখা যায়, ৯ ধরনের ওষুধের মধ্যে মিথোট্রেক্স-টেন নামের একটি ওষুধ সকালে ও রাতে খেতে বলা হয়েছে। এরপর থেকেই সুকণ্ঠের শরীরের বিভিন্ন স্থানে উঠতে শুরু করে ফুসকুড়ি।

পরিবারের সদস্যরা বলছেন, ওই ওষুধগুলো খাওয়ার পর থেকে শরীর কালো হয়ে যায় সুকণ্ঠের। গালের ভেতরের পুরোটাই ঘা হয়ে গেছে।

এই অবস্থায় প্রথমে স্বজনেরা ফরিদপুরে ও পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় সুকণ্ঠকে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে নেন। ভর্তি করা হয় বারডেম হাসপাতালের আইসিইউতে। চিকিৎসকেরা বলেন, সুকণ্ঠের দুটি কিডনিই অকেজো। চলছে ডায়ালাইসিস।

চিকিৎসকের বরাত দিয়ে স্বজনেরা বলেন, ওই ওষুধ খেয়ে তাঁর লিভার নষ্ট হয়ে গেছে। দুটো কিডনিই কাজ করছে না। সমস্যা হয়েছে হাড়েরও।

ডিসপেনসারি থেকে মিথোট্রেক্স নামের যে ওষুধ সুকণ্ঠকে দেওয়া হয়েছিল তা আর্থরাইটিস ও ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহার হয়। এই ওষুধ রোগীকে দেওয়ার আগে নিতে হয় নানা সতর্কতা। সপ্তাহে একটি ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম হলেও সুকণ্ঠকে দেওয়া হয়েছে দিনে দুটি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক আহমেদুল কবীর বলেন, ‘যে কোয়াক এই ওষুধগুলো লিখেছেন এবং যেসব ওষুধগুলো লিখেছে দেখলাম এগুলো প্রতিটিই অনেকটা হোমোসাইড টাইপের। সতর্কতা না নিয়ে রোগীকে এসব ওষুধ দিলে রোগী মারা যেতে পারে।’

এক সময় ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করলেও এখন জেনারেল প্র্যাকটিশনার বনে গেছেন প্রসূণ বালা। লিখছেন সব ধরনের রোগের প্রেসক্রিপশন।

অভিযুক্ত ডিসপেনসারি মালিক প্রসূণ বালার দাবি, রোগীর চাপেই তিনি ওই ওষুধ (মিথোট্রেক্স) লিখেছেন। প্রসূণ বালা বলেন, ‘আমি রোগীকে বলি যে, এই ওষুধ দেওয়ার এখতিয়ার আমার নেই। তারপরও আপনার জোরাজুরিতে দিচ্ছি। এরপর আমি আমার মোবাইল ফোন নম্বরও তাঁকে দেই। বলি যে, কোনো সমস্যা হলে যেন আমাকে জানায়।’

এদিকে, ভুল চিকিৎসার বিচার চেয়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দিয়েছে সুকণ্ঠের পরিবারের সদস্যরা।