জেমস অ্যান্ডারসন, একজন চূড়ান্ত টেস্ট ক্রিকেটারের বিদায়

প্রকাশিত: ১১:৩৬ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৩, ২০২৪

আগেই জানা গিয়েছিল লর্ডসেই শেষবার সবুজ গালিচায় মাঠে নামতে যাচ্ছেন জেমস মাইকেল অ্যান্ডারসন। এরপর এল বিদায়ের সেই ক্ষণ। আর কখনও যে সুইং বোলিংয়ের সুনিপুণ শিল্পীকে দেখা যাবে না ২২ গজের ক্রিকেটে।

তাই তো শেষবার, বিদায়বেলায় নিজে যেমন আবেগে ভেসেছেন, তেমনি আবেগ ছুঁয়ে গেছে অ্যান্ডারসনের ভক্ত-সমর্থক আর সতীর্থদেরও। অ্যান্ডারসন যে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট ম্যাচটি খেলে ফেলেছেন। আবেগ তো ছুয়ে যাওয়ারই কথা।।

ক্রিকেট এরকম কাউকে আর কোনোদিন দেখবে কিনা কিংবা এরকম আর কখনও দেখা যাবে না কিনা। সেটা অনেকটাই অনিশ্চিত। তার মত নিবেদন দিয়ে কতজনই বা পারে এই খেলাটাকে এতোটা আপন করে নিতে।

২১ বছর একটানা খেলে খেলে গেছেন জেমস মাইকেল অ্যান্ডারসন। দীর্ঘ এই সময়টতে অ্যান্ডারসনের ক্যারিয়ারে কত বদল এসেছে, চারপাশের ক্রিকেটের দুনিয়া কত পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু শুধু ওই ছন্দময় মসৃণ রান আপ আর ডিউক বলের নান্দনিক কারুকাজে অ্যান্ডারসনের মুগ্ধতাগুলো যে রয়ে গেছে।

আর তাই তো ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ যখন খেলে ফেললেন অ্যান্ডারসন তখন একসময়কার তার প্রতিদ্বন্দ্বী শচীন টেন্ডুলকারের কথাগুলো যে মুগ্ধতা ছড়ালো। কিংবদন্তি টেন্ডুলকার এক্সে লিখেছেন, এই যে জিমি! অসাধারণ ২২ বছরের স্পেলে তুমি ভক্তদের একের পর এক বিস্ময় উপহার দিয়ে গেছ। ছোট্ট করে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এই অ্যাকশন, গতি, নিখুঁততা, সুইং আর ফিটনেস নিয়ে তোমাকে বোলিং করতে দেখাটা ছিল আনন্দের।

এর আগে লর্ডস টেস্টের দ্বিতীয় দিনে অ্যান্ডারসনের কথাও কি কম মুগ্ধতা ছড়িয়েছিল ক্রিকেট দুনিয়ায়। অ্যান্ডারসন তখন বলেছিলেন, তাঁর কাছে মুখোমুখি হওয়া সবচেয়ে কঠিন ব্যাটসম্যান ছিলেন শচীন রমেশ টেন্ডুলকার। ১৮৮টি টেস্ট খেলা অ্যান্ডারসনের চেয়ে ভারতের কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকারই (২০০) সবচেয়ে  বেশি টেস্ট খেলেছেন।

দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ৪২ ছুই ছুই অ্যান্ডারসন টেস্টে নিয়েছেন ৭০৪ উইকেট। যেটা টেস্ট ক্রিকেটে তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি করেছে তাঁকে। তার আগে রয়েছে শ্রীলঙ্কার মুত্তিয়া মুরালিধরন (৮০০) এবং অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়ার্নের (৭০৮) উইকেট। আর পেসারদের মধ্যে তিনিই সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি।

২১ বছরের ক্যারিয়ারে ১৮৮ টেস্ট খেলা অ্যান্ডারসন ডেলিভারি করেছেন ৪০ হাজার ৩৭ টি। এই সময়ে ৩২ বার ইনিংসে ৫ উইকেট আর ৩ বার নিয়েছেন ম্যাচে ১০ উইকেট।

৪০১ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা অ্যান্ডারসন তিন সংস্করণ মিলিয়ে ৫০ হাজার ৪৩ ডেলিভারি করেছেন। আর এই সময়ে সব ফরম্যাট মিলিয়ে ৯৯১টি আন্তর্জাতিক উইকেট নিয়েছেন অ্যান্ডারসন।।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সফলতম পেসার অ্যান্ডারসন। টেস্ট ইতিহাসের সফলতম পেসার, বিশেষজ্ঞ পেসারদের মধ্যে টেস্ট ইতিহাসের দীর্ঘতম ক্যারিয়ার এই অ্যান্ডারসন যে ইংল্যান্ডের ওয়ানডে ইতিহাসেরও অন্যতম সফলতম বোলার।।

হ্যা, এটাই শেষ! তাই তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শেষ দিনে মাঠে নামার আগে নিজের দল ইংল্যান্ড আর প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়দের গার্ড অব অনার পেয়েছেন জেমস অ্যান্ডারসন। আর বিদায়ী টেস্টে অ্যান্ডারসনের বিদায়টাও রঙিন হয়েই থাকল, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে যে ইনিংস ও ১১৪ রানের জয় পেয়েছে বেন স্টোকের দল।

২১ বছরের ক্রিকেট কারিয়ারের ইতি ঘটল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে লর্ডসে প্রথম টেস্ট ম্যাচের মধ্য দিয়ে। যে যাত্রা শুরু করেছিলেন ২০০৩ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। সেই যাত্রার আজ ইতি ঘটল।

দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময় ধরের ইংল্যান্ডের হয়ে খেলা সেই অ্যান্ডারসন বিদায়বেলায় তাই বলেও গেলেন, যা অর্জন করেছি, তা নিয়ে গর্বিত।

তবে ক্যারিয়ারের শেষ দিনেও খারাপ লাগার একটা কথা বলেছেন অ্যান্ডারসন। ম্যাচ শেষে যেটা জানালেন নিজেই। অ্যান্ডারসন ম্যাচ শেষে অনুভূতি জানাতে গিয়ে সবার আগে ক্যাচ মিসের প্রসঙ্গই তুলেছিলেন, ‘খারাপ লাগছে, ক্যাচটা ফেলে দিয়েছি। তবে ক্যারিয়ারের শেষ বলেও অ্যান্ডারসন পেয়ে যেতে পারতেন উইকেট। কিন্তু ক্যাচ মিস করায় সেটা আর সম্ভব হয়নি।

সুইং বোলিংয়ের সুনিপুণ শিল্পী অ্যান্ডারসন ক্যারিয়ারের শেষ বেলায় জানালেন একটা ক্যাচ মিস নিয়ে আক্ষেপের কথা। তাহলেই ভাবুন, কতটা শৃঙ্খলা, নিবেদন, নিষ্ঠার প্রতিশব্দ হতে পারে এই মানুষটা। এই অ্যান্ডারসনই তো আদি সংস্করণের আদর্শ বিজ্ঞাপন? তাই নয় কি?

এটাই যে শেষ। ইংল্যান্ডের হয়ে আর কখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট যাবে না জেমস অ্যান্ডারসনকে, দেখা যাবে সবুজ গালিচায় তার নিবেদন। আর তাই তো শেষ সময়ে সতীর্থ, প্রতিপক্ষ থেকে লর্ডসের হাজার হাজার দর্শক—জেমস অ্যান্ডারসনকে কুর্নিশ জানাতে কারও কোনো কমতি ছিল না।

জেমস মাইকেল অ্যান্ডারসন, একজন চূড়ান্ত টেস্ট ক্রিকেটারের বিদায়। সব ভালো কিছু একসময় শেষ হয়। আর অ্যান্ডারসনদেরও তো বিদায় বলতে হয়।