১৫ বছরে শার্শা-বেনাপোল সীমান্তে প্রাণ হারিয়েছেন ৫১ বাংলাদেশি প্রকাশিত: ১:৩৪ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৫ • ‘২০১০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যশোরের শার্শা ও বেনাপোল পোর্ট থানায় ৫১ জন বাংলাদেশি নাগরিকের মরদেহ উদ্ধারের খবর আছে। এর মধ্যে শার্শা সীমান্তে ৮ জন ও বেনাপোল সীমান্তে ৪২ জন। ২০২১ সালে বেনাপোল সীমান্তে এক নারী নিহত হন।’ • ‘একমাত্র সবার সচেতনতাই ভবিষ্যতে সীমান্ত হত্যা বা যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ভূমিকা রাখতে পারে বলে তিনি মনে করেন।’ সীমান্ত হত্যা বন্ধে দফায় দফায় বাংলাদেশ ও ভারতের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে প্রতিশ্রুতি দিয়েও কথা রাখেনি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে গত ১৫ বছরে শুধুমাত্র যশোরের শার্শা-বেনাপোল সীমান্তেই বাহিনীটির হাতে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয়েছেন ৫১ জন। এসময় পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন আরও শতাধিক বাংলাদেশি ও ভারতীয় নাগরিক। সীমান্ত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮, ২০১৯, ২০২১ ও ২০২৩ সালে এই দুইটি সীমান্তে কোনো হত্যাকাণ্ডের খবর না থাকলেও এসময় পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন আরও শতাধিক বাংলাদেশি নাগরিক। শুধু সাধারণ মানুষই নন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যও রক্ষা পাননি বিএসএফের হাত থেকে। গত বছরের ২২ জানুয়ারি বেনাপোলের ধান্যখোলা সীমান্তের বিপরীতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন বিজিবির সৈনিক রইস উদ্দীন। তার গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে।ওইদিন ভোর আনুমানিক সাড়ে ৫টার দিকে বিজিবি যশোর ব্যাটালিয়নের ধান্যখোলা বিওপির জেলেপাড়া পোস্ট সংলগ্ন এলাকায় ভারত থেকে আসা একদল গরু চোরাকারবারীকে সীমান্ত অতিক্রম করে আসতে দেখে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর টহল দল ‘চ্যালেঞ্জ’ করে। চোরাকারবারিরা তখন দৌড়ে ভারতের দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় বিজিবি টহল দলের সদস্য সিপাহী মোহাম্মদ রইস উদ্দীন চোরাকারবারীদের পেছনে ধাওয়া করতে করতে ঘন কুয়াশার কারণে দলবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। প্রাথমিকভাবে তাকে খুঁজে পাওয়া না গেলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায়, তিনি বিএসএফের গুলিতে আহত হয়ে ভারতের অভ্যন্তরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরের দিকে ওই বিজিবি সদস্য মৃত্যুবরণ করেন। নিহত সিপাহী রইস উদ্দীনের মরদেহ পতাকা বৈঠকের পর ২৪ জানুয়ারি সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে ৪৯ বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে বিএসএফ। এছাড়া সর্বশেষ ১৮ ডিসেম্বর বেনাপোলের পুটখালী সীমান্তে তিন বাংলাদেশিকে হাত-পায়ের রগ কেটে হত্যার অভিযোগ রয়েছে বিএসএফের বিরুদ্ধে। প্রায় দুই মাস হতে চললেও এখনো জানা যায়নি কীভাবে তাদের মৃত্যু হলো। সে বিষয়ে এখনও পুলিশ কিছু জানাতে পারেনি। তবে নিহতদের পরিবারের দাবি, ভারতীয় বিএসএফের নির্যাতনে তাদের মৃত্যু হয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন করে এসব হত্যাকাণ্ডের একটিরও বিচার হয়নি। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, মাথা উঁচু করে সীমান্ত হত্যার কড়া জবাব দিতে না পারলে এ ধারা অব্যাহত থাকবে। সীমান্ত সূত্রে জানা যায়, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় শার্শা-বেনাপোল সীমান্ত পথে গবাদিপশু পাচার, আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা বা ভালো কাজের খোঁজে দুই দেশের মানুষ সীমান্ত পারাপার করে থাকেন। এছাড়া সীমান্তের শূন্যরেখার কাছে কৃষিকাজ কিংবা মৎস্য আহরণের জন্যও অনেককে সীমান্ত পথ অতিক্রম করতে হয়। ভুল করে কেউ ভারতীয় সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার কাছে গেলে বা অরক্ষিত সীমান্ত সামান্য অতিক্রম করলেই শুরু হয় বিএসএফের পৈশাচিক আচরণ। সীমান্তে চোরাচালান ও বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধের কারণ দেখিয়ে বিএসএফের বিতর্কিত শুট অন সাইট (দেখামাত্র গুলি) নীতি সীমান্তে বহাল রয়েছে। তবে এখন গুলির পরিমাণ কমলেও নির্যাতন চালিয়ে হাত-পায়ের শিরা কেটে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার ঘটনা বেশি ঘটছে। তবে তাদের এ আক্রোশের শিকার কেবল বাংলাদেশিরাই। এসব হতাহতের একটি বড় অংশ হলো গবাদিপশু ব্যবসায়ী। গত ১৫ বছরে শার্শা-বেনাপোল সীমান্তেই ৪১ বাংলাদেশি হত্যার শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে এখনও পরিচয় মেলেনি ৬ জনের। SHARES জাতীয় বিষয়: বাহিনীটিরশতাধিকহত্যাকাণ্ডের