ইতিহাসের গতিপথ বদলে দেওয়া বদর যুদ্ধের পটভূমি

প্রকাশিত: ১:০৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৮, ২০২৫

নবিজি হজরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নবুয়ত লাভের পর মক্কায় প্রায় ১৩ বছর ইসলাম প্রচার করেন। মানুষকে সত্যের দাওয়াত দেন। সত্য দীন গ্রহণ করতে বলেন। আল্লাহর দীন গ্রহণ না করলে দুনিয়া ও আখেরাতের শাস্তির ব্যাপারে সাবধান করেন।

কিছু মানুষ নবিজির (সা.) দাওয়াতে সাড়া দিয়ে ইসলাম গ্রহণ করলেও মক্কার বেশিরভাগ মানুষ বিশেষত নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা ইসলাম গ্রহণ করেনি। তারা বরং ইসলামের দাওয়াতি কার্যক্রমে যথাসাধ্য বাঁধা সৃষ্টি করেছে। মুসলমানদের আল্লাহর দীন পালন করতে বাঁধা ‍দিয়েছে। তাদেরকে নানাভাবে কষ্ট দিয়েছে।

মুসলমানদের নিপীড়িত অবস্থা দেখে নবিজি (সা.) প্রথম পর্যায়ে মুসলমানদের হাবাশায় হিজরতের অনুমতি দেন। কিছু মুসলমান হাবাশায় হিজরতও করেন। তারপর মদিনাবাসীর সাথে আলোচনা ও চুক্তি হলে নবিজি (সা.) মুসলমানদের মদিনায় হিজরত করার নির্দেশ দেন। নিজেও মদিনায় চলে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকেন।

নবিজি (সা.) মক্কা ছেড়ে চলে যাবেন বুঝতে পেরে আবু জেহেলের নেতৃত্বে মক্কার কাফেররা নবিজিকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাদের সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেন এবং নবিজিকে নিরাপদে মদিনায় পৌঁছে দেন।

মদিনায় যাওয়ার পথেই মক্কার সীমালংনকারী অত্যাচারী কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অনুমতি দেওয়া হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হল তাদেরকে, যাদেরকে আক্রমণ করা হচ্ছে। কারণ তাদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে বিজয় দানে সক্ষম। (সুরা হজ: ৩৯)

নবিজির (সা.) মদিনায় হিজরতের পর থেকেই মক্কার কাফেরদের সাথে মুসলমানদের যুদ্ধ অঘোষিতভাবে শুরু হয়ে যায়। নবিজি (সা.) মদিনার গোত্রগুলোর সাথে শান্তিচুক্তি স্থাপন করেন এবং মক্কার কাফেরদের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের সিদ্ধান্ত নেন। মক্কার বাণিজ্য কাফেলাগুলো মদিনার পাশ দিয়ে সিরিয়ায় যেতো। নবিজির (সা.) নির্দেশে সাহাবায়ে কেরাম তাদের বাণিজ্য কাফেলাগুলোকে বাঁধা দেওয়া শুরু করেন। হিজরতের বছরই মক্কার বেশ কয়েকটি বাণিজ্য কাফেলার ওপর নবিজির (সা.) নেতৃত্বে বা নির্দেশে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

হিজরতের দ্বিতীয় বছরও মক্কার বাণিজ্য কাফেলার ওপর এ রকম অভিযান অব্যাহত থাকে। দ্বিতীয় হিজরির রজব মাসে এ রকম একটি অভিযানে মক্কার এক গোত্র প্রধান আমর ইবনুল হাযরামি নিহত হন। এ ঘটনা মক্কার কাফের সর্দারদের ক্ষুব্ধ করে তোলে। ইতিহাসবিদ ইবনে খালদুনের মতে, এই ঘটনা বদর যুদ্ধের প্রেক্ষাপট তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।