২১ অগাস্ট মামলা: রাষ্ট্রপক্ষের আপিল শুনানির জন্য উঠবে মঙ্গলবার

প্রকাশিত: ১২:৫৩ অপরাহ্ণ, মে ৪, ২০২৫

বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ২১ অগাস্ট গ্রেনেড মামলায় ৪৯ আসামিকে খালাসের হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের আবেদন আগামী মঙ্গলবার শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় আসবে।

রোববার শুনানির জন্য লিভ টু আপিলটি কার্যতালিকায় ছিল। কিন্তু শুনানি না করে মঙ্গলবার দিন ধার্য করে দেয় বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নের্তৃত্বাধীন তিন বিচারকের আপিল বেঞ্চ।

ওইদিন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নের্তৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হবে।

রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল জব্বার ভুইয়া এবং খালাসপ্রাপ্তদের পক্ষে আইনজীবী এসএম শাহজাহান, কায়সার কামাল, শিশির মনির এদিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত ২৭ এপ্রিল আবেদনটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় এলেও বেঞ্চ পুনর্গঠন না হওয়ায় শুনানি পিছিয়ে যায়।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যার ওই ঘটনা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আলোড়ন তোলে।

সে সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তখন বিরোধী দলীয় নেতা।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২১ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ওই হামলা চালানো হয়। হামলায় অংশ নেয় হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের (হুজি) জঙ্গিরা। তারা সহযোগিতা নেয় বিদেশি জঙ্গিদের। আর এই ষড়যন্ত্রের পেছনে ছিল তখনকার চারদলীয় জোট সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ‘ইন্ধন’। হামলায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেড আনা হয় পাকিস্তান থেকে।

২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর দণ্ডবিধি ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়ের করা দুই মামলার রায় দেন ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন।

সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১১ পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয় সেই রায়ে।

এরপর আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি করে ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর রায় দেয় বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাই কোর্ট বেঞ্চ।

তাতে জজ আদালতের রায় বাতিল করে যারা আপিল করেছেন এবং যারা করেননি, সবাইকে এ মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয়।

আসামিদের সবাই খালাস পাওয়ায় অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। তাদের প্রশ্ন ছিল, গ্রেনেড হামলায় নিহত ২৪ জনের পরিবার কি তাহলে সুবিচার পাবে না?

সেই প্রশ্নের উত্তর আসে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ১৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত ৭৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে।

সেখানে বলা হয়, ২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলা ছিল দেশের ইতিহাসে ‘একটি জঘন্য ও মর্মান্তিক’ ঘটনা, যেখানে অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা আইভী রহমানও ছিলেন।

“নিহতদের আত্মার প্রতি সুবিচার নিশ্চিত করতে এই হত্যাকাণ্ডের সঠিক ও স্বাধীন তদন্ত হওয়া প্রয়োজন, যা এ পর্যন্ত এই মামলায় সম্পূর্ণভাবে অনুপস্থিত রয়েছে।

“এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মনে করি, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এই মামলাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো উচিত, যাতে সঠিক এবং দক্ষ তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে পুনরায় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যায়।”

আদালতের রায়ের এই পর্যবেক্ষণের আলোকে যথাযথ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে এই আদেশের অনুলিপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়।

এরপর চলতি বছর ১৯ মার্চ হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। সেখানে হাই কোর্টের রায় বাতিল চাওয়া হয়।