জুলাই আন্দোলনে আহত সামিউলের এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়া নিয়ে শঙ্কা

প্রকাশিত: ১২:৩১ অপরাহ্ণ, জুন ১৫, ২০২৫

গত বছরের জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে গুরুতর আহত হওয়া বাগেরহাটের সামিউল শেখের জীবন এখন অনিশ্চিতের পথে। আর মাত্র ১১  দিন পর তার উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষা শুরু হবে। কিন্তু উন্নত চিকিৎসার অভাবে তার শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে। জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে সামান্য আর্থিক সহায়তা পেলেও, সরকারি অনুদান বা স্বাস্থ্য কার্ড না পাওয়ায় তার পরিবার এখন হতাশায় ভুগছে।

বাগেরহাট সদর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের বাগদিয়া গ্রামের আইয়ুব আলী শেখের একমাত্র ছেলে সামিউল। ৪ আগস্ট বাগেহাট কোট চত্বরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে ছাত্রলীগের কর্মীদের নির্মম হামলার শিকার হন তিনি। রামদা, রড ও পাইপ দিয়ে তাকে এলোপাথাড়ি আঘাত করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে বাগেরহাট সদর থানায় নিয়ে যায়, কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে তার পরিবারকে তার অবস্থান সম্পর্কে জানানো হয়নি, যা তাদের মানসিক যন্ত্রণায় ফেলেছিল।

পরে রাত ১২টার দিকে সামিউলের মা রুবিয়া বেগম থানায় ছুটে গিয়ে ছেলেকে উদ্ধার করেন। বাগেরহাট সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়ার পর বাড়ি ফিরলেও, আঘাত এতটাই গুরুতর ছিল যে তাকে আরও কয়েকবার  চিকিৎসা নিতে হয়েছে। মাথায় শিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বাম হাতের মাংসপেশি কেটে গেছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন যা আর কখনো পুরোপুরি ঠিক হবে না। পিঠের শিরা ও মাংসপেশিতেও মারাত্মক জখমের কারণে তাকে দীর্ঘদিন বিছানায় বিশ্রামে থাকতে হয়েছে। এখনো তিনি হাত দিয়ে ঠিকমতো কিছু ধরতে পারেন না, বসতে পারেন না, সারাদিন শুয়ে কাটে।

সামিউল কাঁপা কণ্ঠে বলেন, এই মাসের ২৬ তারিখেই আমার এইচএসসি পরীক্ষা। এখন পর্যন্ত ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারি না। সুস্থভাবে বসতে, বা খেতে কিছু পারি না। যে বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমি রাস্তায় নেমেছিলাম, আজ সেই বৈষম্যই আমার জীবন ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এতগুলো দিন পার হয়ে গেল, কিন্তু এখনো উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা হলো না। সরকার অন্যদের চিকিৎসার জন্য সহায়তা করেছে, আমাকে কেন করছে না? জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে এক লাখ টাকা পেয়েছি, যা আমার চিকিৎসার খরচের কাছে সামান্য। আমাকে ‘সি’ ক্যাটাগরিতে ফেলে দেওয়া হয়েছে, এখন পর্যন্ত কোনো স্বাস্থ্য কার্ড পাইনি। আমি যদি সুচিকিৎসা না পাই, হয়তো কখনো সুস্থভাবে দাঁড়াতে পারব না।

সামিউলের বাবা আইয়ুব আলী শেখ বলেন, আমার ছেলে গণঅভ্যুত্থানে আহত হয়েছে, অথচ ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও সে এখনো সুস্থ হয়নি। বাগেরহাট, খুলনা, ঢাকা ও ঢাকা নিরোসায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসা করাচ্ছি, কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। ওর পরীক্ষা সামনে, কিন্তু ও কীভাবে পরীক্ষা দেবে? আমরা সরকারের কাছে সামিউলের উন্নত চিকিৎসার দাবি জানাই।