পাকিস্তানে লাগামহীন সন্ত্রাসবাদ: মারাত্মক ঝুঁকিতে চীনা বিনিয়োগ

প্রকাশিত: ১১:০২ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ৩০, ২০২৪

১৬ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ— ১০ দিনে পাকিস্তানে পাঁচটি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে তিনটি ঘটেছে দেশটির উত্তর-পশ্চিম খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে। দুটি ঘটেছে দক্ষিণ-পশ্চিম বেলুচিস্তান প্রদেশে। এসব হামলায় কমপক্ষে ১৮ জন নিহত হয়েছেন।

পাঁচটি হামলাই ছিল আত্মঘাতী বোমা হামলা। নিহতদের মধ্যে ১২ জন সামরিক বাহিনীর সদস্য, পাঁচজন চীনা নাগরিক এবং একজন পাকিস্তানি নাগরিক। পাকিস্তানে গত বছর থেকে সন্ত্রাসী হামলা নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সিরিজ হামলার লক্ষ্যবস্তু ও তীব্রতা দেখে বিশ্লেষকরা বলছেন, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে পাকিস্তানের লড়াইয়ে একটি নতুন অধ্যায়ের ইঙ্গিত এটি।

শেষ তিনটি হামলা পরপর এত দ্রুত ঘটেছে যে, মনে হচ্ছে পাকিস্তানে চীনা স্বার্থকে বিশেষভাবে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে। প্রথমে সশস্ত্র যোদ্ধারা পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে গোয়াদর বন্দরে হামলা চালায়। এই বন্দরটি চীনের সহায়তায় নির্মাণ করা হয়েছিল। তারপরে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী বেলুচিস্তান প্রদেশে পাকিস্তানের বৃহত্তম নৌ ঘাঁটিগুলোর একটিতে আক্রমণ করে। সবশেষ আক্রমণ হয় দেশটির উত্তরে বেশাম শহরের কাছে একটি চীনা-অর্থায়নকৃত জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে কর্মরত চীনা প্রকৌশলীদের লক্ষ্য করে। এসব হামলা থেকে মনে করা হচ্ছে, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো পাকিস্তানে চীনা বিনিয়োগের প্রতি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং সশস্ত্র গোষ্ঠী গবেষক ইফতিখার ফিরদৌস বলেন, ‘হামলার এই প্যাটার্নটি পাকিস্তানের নিরাপত্তা সংস্থায় উদ্বেগ বাড়িয়েছে। তারা বিশ্বাস করে, পাকিস্তানে চীনাদের উপর হামলা দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করার পাশাপাশি দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য একটি বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ।’

‘লৌহ ভ্রাতৃত্ব’

পাকিস্তানের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্রদের একটি চীন । চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরে (সিপিইসি) ৬২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে বেইজিং। সিপিইসি অবকাঠামো প্রকল্প হলো দক্ষিণ-পশ্চিম চীনকে আরব সাগরের গোয়াদর বন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য হাইওয়ের বিস্তৃত একটি নেটওয়ার্ক।

চীনা শ্রমিকদের উপর লাগাতার হামলায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বেইজিং। বুধবার (২৭ মার্চ) চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘পাকিস্তানকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করতে, অপরাধীদের খুঁজে বের করতে এবং তাদের বিচারের আওতায় আনতে বলেছে চীন। আমরা পাকিস্তানকে চীনা নাগরিক, প্রতিষ্ঠান এবং প্রকল্পের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছি।’

জবাবে পাকিস্তান সরকার বলেছে, তারা সন্ত্রাসবাদী এবং সন্ত্রাসে সহায়তাকারী ও প্ররোচনাকারীদের বিচারের আওতায় আনবে। হামলার আরও তদন্তের জন্য একটি তদন্ত দল গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

এর একদিন পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক বিবৃতি বলা হয়, ‘পাকিস্তান ও চীন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। দুই দেশের মধ্যে বিরাজ করছে লৌহ কঠিন ভাতৃত্ব। বেশাম সন্ত্রাসী হামলা পাকিস্তান-চীন বন্ধুত্বের শত্রুদের দ্বারা সংগঠিত হয়েছে—এতে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই। আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে এ জাতীয় সমস্ত শক্তির বিরুদ্ধে কাজ করব এবং তাদের পরাজিত করব।’

পাকিস্তানে অতীতেও বারবার চীনা স্বার্থের ওপর হামলা হয়েছে। দুই বন্দুকধারী গত বছরের আগস্টে গোয়াদরে ২৩ জন চীনা প্রকৌশলীর একটি বহরে হামলার চেষ্টা করে। কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা হামলাটি ব্যর্থ করে দেয়।

২৬ মার্চের মতোই একটি ঘটনা ঘটেছিল ২০২১ সালের জুলাই মাসে। ওই হামলায় একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে কর্মরত কমপক্ষে নয়জন চীনা প্রকৌশলী নিহত হন। আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীকে বহন করা একটি গাড়ি প্রকৌশলীদের বাসে ধাক্কা দিয়েছিল।

তবে দুটি হামলার মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে তা হলো—বেলুচিস্তানের ঘটনাগুলোর পর বিদ্রোহী বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো সহজেই দায় স্বীকার করেছে। কিন্তু খাইবার পাখতুনখোয়ায় হামলার দায় কোনো গোষ্ঠী স্বীকার করেনি।