মধ্যপ্রাচ্যে কেনো এত গরম, চরম তাপপ্রবাহের জন্য কতটা প্রস্তুত তারা? প্রকাশিত: ৩:১৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৮, ২০২৪ চরম তাপপ্রবাহ ভুগতে হয় মধ্যপ্রাচ্যের তুলনামূলক কম উন্নত ও দরিদ্র যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোকে গবেষণা বলছে, তীব্র দাবদাহের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে ২০৫০ সাল নাগাদ মৃত্যুহার অনেক বাড়বে গরম এখন সব দেশেরই সঙ্কট। গ্রীষ্মের তাপদাহে সকলেই ব্যতিব্যস্ত। তবে গরমের তীব্রতার জন্য খ্যাত মধ্যপ্রাচ্য। ইরাক, ইরান, সৌদি, আরব আমিরাত, কাতার সব দেশই তীব্র গরম ও উচ্চ তাপমাত্রার জন্য বহুল পরিচিত। গত বছর এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ১.৫ শতাংশের চেয়েও বেশি বাড়বে। আর তার জেরে ভয়াবহ এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা হবে মধ্যপ্রাচ্যে। যদিও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে বা শহরের লোকেরা উচ্চ তাপমাত্রায় অভ্যস্ত এবং তারা ইতিমধ্যেই শীতল আবাসনে বসবাস করে। কিন্তু তাপপ্রবাহ ভুগতে হয় তুলনামূলক কম উন্নত ও দরিদ্র যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোকে। আবার গত বছরের এপ্রিলেই ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল ‘ল্যানসেট’ আগামী কয়েক দশকে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ব্যাপক হারে বাড়ার ফলে মধ্যপ্রাচ্যের কী অবস্থা হতে পারে, তা নিয়ে একটা সমীক্ষা প্রকাশ করেছিল। এতে বলা হয়েছিল, তীব্র দাবদাহের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে মৃত্যুহার অনেক বাড়বে। ল্যানসেটে’র সমীক্ষায় আরো আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার কমবে না। তবে দাবদাহের কারণে মৃত্যুর ৮০ শতাংশই ঘটতে পারে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। এতে বলা হয়েছে, তীব্র দাবদাহের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে মৃত্যুহার অনেক বাড়বে। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে দাবদাহজনিত রোগে ভুগে প্রতি এক হাজারে দুজনের মৃত্যু হয়। এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ১২৩। দাবদাহ বাড়তে থাকলে চলতি শতক শেষে শুধু ইরাকে মারা যেতে পারে ১ লাখ ৩৮ হাজারের মতো মানুষ। যেভাবে গরম সামাল দেয় মধ্যপ্রাচ্য মধ্যপ্রাচ্যের উন্নত শহরগুলো যেমন আরব আমিরাত, আবুধাবি, কাতারে গরম থেকে বাঁচতে শহর এবং রাস্তা নানারকম আধুনিক ডিজাইনে করা হয়েছে। যাতে করে ছায়া বসে শীতল বাতাসের সুবিধা নেওয়া যেতে পারে। এছাড়া দেশগুলোর পরিবহণ ব্যবস্থাও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। এছাড়া উন্নত এসব শহরগুলোতে সুপেয় পানির ব্যবস্থাও রাখে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। যার কারণে তীব্র গরমেও কিছুটা স্বস্তিতে থাকে উন্নত শহরগুলোর মানুষ। তবে মধ্যপ্রাচ্যের অনুন্নত এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলো তুলনামূলক অনেক পিছিয়ে আছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরাক। দেশটিতে কখনো কখনো তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১২২ ডিগ্রি ফারেনহাইট) ছাড়িয়ে যায়। এই অবস্থায় দেশটির মানুষ বাঁচে কী করে? কী করে ঘরের কাজ, চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য করে? কী করে চালিয়ে যান দৈনন্দিন কাজকর্ম? উত্তর পাওয়া যায় স্থানীয়দের কাছ থেকেই। তারা বলেন, রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলে আবহাওয়ার খবর আগেই পেয়ে যায় মানুষ। তাপমাত্রা অনেক বেশি বাড়লে সাধারণত মানুষজন ঘর থেকে কম বের হন। এমন দিনে বেশিরভাগ মানুষ ঘরেই থাকেন। কর্তৃপক্ষ এমন দিনে ঘরে থাকতে উৎসাহ দেয়। বিশেষ করে যাঁদের শারীরিক অবস্থা নাজুক, তাঁদের ঘরে থাকতে বলা হয়। শুধু তা-ই নয়, অত্যধিক গরম পড়লে পশু–পাখিদেরও কষ্ট হয়। পাখি বা অন্য প্রাণীদের জন্য গাছের নীচে পানি রেখে আসেন স্থানীয়রা। কারণ সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা বেশ কম। এ কারণে তীব্র দাবদাহের সময় প্রকৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে বাঁচার কৌশল নিজে নিজেই শিখে নেয় ইরাকের মানুষ। গবেষকরা বলেছেন, চলতি শতকে বিশ্বের কোনো কোনো অঞ্চলের তাপমাত্রা ২ থেকে ৯ ডিগ্রি পর্যন্ত বাড়তে পারে৷ আর তাই প্রচণ্ড গরমে শহরগুলোতে সচেতনতা বাড়ানো, প্রস্তুতি বৃদ্ধি করা এবং শহুরে পরিবেশকে নতুনভাবে ডিজাইন করা প্রয়োজন বলছেন তারা। এ বিষয়ে সতর্ক করে জাতিসংঘের চিফ হিট অফিসার অ্যালেনি মিরিভিলি বলেন, আবহাওয়াজনিত বিপর্যয়গুলোর মধ্যে চরম তাপমাত্রা সবচেয়ে বিপদের কারণ হয়ে উঠছে। কিন্তু বিশ্বজুড়ে এই বিষয়ে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না। বড় বিপর্যয় এড়াতে হলে সরকারগুলোর উচিৎ চরম দাবদাহ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো, এজন্য প্রস্তুতি নেওয়া ও নিজেদের রক্ষার কৌশল নির্ণয়ের পরিকল্পনা প্রণয়ন করা। সূত্র: ডয়চে ভেলে SHARES আন্তর্জাতিক বিষয়: তাপপ্রবাহ