সৌন্দর্যের স্বর্গ লামায়

প্রকাশিত: ২:২৮ অপরাহ্ণ, মে ৬, ২০২৪

ছোটবেলা থেকে খুব বেশি দূরে কখনো ভ্রমণ করা হয়নি। অষ্টম শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় শেখ রাসেল স্মৃতি পার্ক, রাঙ্গুনিয়া যাওয়া হয়েছিলো। ভ্রমণ বলতে শুধু এই স্মৃতিটুকু নিয়েই বড় হচ্ছিলাম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে বান্দরবানের ভিডিও বা বিভিন্ন ভ্লগ প্রায়ই দেখতাম আর আফসোস করতাম। ইশ্, যদি যেতে পারতাম! তাই যখন বান্দরবান যাওয়ার সুযোগ আসলো কালক্ষেপণ না করেই রাজি হয়ে যাই। সাথে কিছু সদস্য যোগাড় করে নিই (আমার মেজভাবি, ভাই, ভাগ্নে ও আমি)।

মূলত আমরা ভাবির বোনের চাকরির স্থল লামায় যাবো বলে ঠিক করেছিলাম। ১১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় পরিকল্পনা করি যাওয়ার। যেই ভাবা সেই কাজ। সন্ধ্যায় টিউশন সেরে, রাতে একটি অনলাইন ক্লাস করে ১২ টার দিকে ব্যাগপত্র গুছিয়ে নেই। পরদিন ১২ জানুয়ারি সকাল ৬ টায় ঘুম থেকে উঠে, সকালের নাস্তা করে, ৭টায় বাস স্টেশনের দিকে রওনা দিই, বাস স্টেশনে সাড়ে ৭ টায় পৌঁছাই। দিনটি শুক্রবার হওয়ায় বাসের টিকিট মোটামুটি শেষ হয়ে যায়। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর সকাল ৮টা ১০ মিনিটের সৌদিয়া বাসের শেষ চারটি টিকিট পেয়ে যাই, বাসটি যথাসময়ে ছেড়ে দেয়। কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনতে শুনতে যাওয়ার রাস্তা উপভোগ করতে থাকি। সাড়ে ৯টার দিকে বাসটি লোহাগড়া একটি হোটেলের সামনে ১৫ মিনিটের বিরতি দেয়। ১৫ মিনিট পর আবার বাসটি রওনা দেয় এবং ১১টায় চকরিয়ায় নেমে যায়। চকরিয়া থেকে মাতামুহুরি বাসের টিকিট কেটে (জনপ্রতি ৭০ টাকা) আমরা লামার উদ্দেশ্য রওনা দেই। মূলত মাতামুহুরি ব্রীজের প্রবেশপথ থেকেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে উপভোগ করা শুরু করি। উঁচু নিচু সব পাহাড়; প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্যে উপভোগ করতে করতে আজিজনগর, পাইতং, হাসির দিঘী, ইয়াংছা, লাইনজিরি স্থানসমূহ অতিক্রম করে দুপুর ১২টায় লামা পৌঁছালাম।

সেদিন জুমার দিন ছিলো বিধায় মেজভাই এবং ভাগ্নে নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে গেলো। ভাবি আর তার বোন মিলে দুপুরের খাবারের আয়োজন করেছিল, সাথে আমি ছিলাম তাদের বিনোদন দানকারী হিসেবে। দুপুরের খাবার শেষে আমাদেরকে (আমি এবং ভাগ্নেকে) বলা হলো কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে, কিন্তু আমরা মানতে নারাজ। আমাদের যুক্তি হচ্ছে, আমরা এখানে বেড়াতে এসেছি, ঘুমাতে আসিনি। আমি আর আমার ভাগ্নে মিলে চলে গেলাম লামা থানা এবং আশেপাশের জায়গাসমূহ দেখতে। লামা থানার পিছনে চেয়ারম্যান পাড়া ও টিএনটি পাড়া গিয়ে দেখি সেখানে বেশ কয়েক রকমের ফসলি জমি। সেখানে ফুলকপি, বাঁধাকপি, ভুট্টা, মরিচ এবং টমেটোর চাষ করা হয়েছে। একটু সামনের দিকে এগিয়ে টিএনটি পাড়ার কিছু মহিলা বাসিন্দার সাথে কুশল বিনিময় করলাম। তাদের সাথে আলাপের এক পর্যায়ে ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে সংগঠিত ৫ দিনব্যাপি বন্যায় তাদের মানবেতর জীবন সম্পর্কে জানতে পারি। ওই এলাকার বাড়িগুলো পাহাড়ের ঢিবির উপরে ছিল। বন্যার প্রথম দিকে তারা মনে করেছিলো পানি একটু পর নেমে যাবে তাই তারা আশ্রয় কেন্দ্রে যায়নি। পরবর্তীতে যখন পানির পরিমাণ বেড়ে যায় তখন তারা আর আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারেনি। তাদের পাশেই ছিল একটি খাল যা মাতামুহুরি নদীর সাথে সংযুক্ত। খালটি দিয়ে মাঝে মাঝে নৌকা চলাচল করলেও তারা কোনো সাহায্য পায়নি। যদিও এটি পাহাড়ি এলাকা ছিল, তারা তিনদিন শুকনো খাবার খেয়ে বাচ্চাদের নিয়ে একটি খাটের উপর উঁচু তক্তায় দিন যাপন করেছিলো।

এরপর মহিলাদের জীবন ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন গল্পও শুনলাম। টিএনটি পাড়ায় ঘন্টা খানেক ব্যয় করে আবার ফিরে আসলাম। এবার ভ্রমনসঙ্গীদের সাথে বিকাল ৪টায় রওনা দিলাম বীর বাহাদুর কাননে। স্থানীয়রা এটিকে এটিকে পৌরসভা নামে চিনেন। এখানের ৩০০ আসনের এমপি বীর বাহাদুরের নামানুসারে বীর বাহাদুর কানন নাম রাখা হয়েছে। বিকালে নিজের পরিবার নিয়ে সময় কাটানোর উপযুক্ত একটি স্থান। সেখানে বেশ অনেকক্ষণ সময় কাটানো হয়েছিলো। সৌভাগ্যবশত সেখানে কিছু পরিচিত এবং এলাকার মানুষের সাথে দেখা হয়ে যার ফলে আমাদের আড্ডা বেশ জমে উঠে। অবশেষে সাড়ে সাতটায় আমরা স্থানটি ত্যাগ করে ফিরে আসি।