পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে ‘হাইব্রিড’ যুদ্ধে জড়াচ্ছে রাশিয়া

প্রকাশিত: ২:৪০ অপরাহ্ণ, জুলাই ১, ২০২৪

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইউরোপজুড়ে এ ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে লাটভিয়ার রিগায় একটি জাদুঘরে আগুন লাগানোর চেষ্টা হয়। গত মার্চে যুক্তরাজ্যের লন্ডনের একটি গুদাম পুড়ে যায়। মে মাসে পোল্যান্ডের ওয়ারশতে একটি বিপণিবিতানে আগুন লাগে। এপ্রিলে জার্মানির পুলিশ বিস্ফোরণ পরিকল্পনার অভিযোগে কয়েকজনকে আটক করে। ফ্রান্সেও বোমা তৈরিতে যুক্ত রয়েছেন সন্দেহে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ধরতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। ইউরোপের কয়েকটি দেশে একাধিক হ্যাকিং আক্রমণ ও গুপ্তচরবৃত্তির ঘটনাও ঘটেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়া ও বেলারুশের বিরুদ্ধে অভিবাসী আশ্রয়প্রার্থীদের অস্ত্র দেওয়ার ও সীমান্তে বিশৃঙ্খলা চেষ্টার অভিযোগ এনেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে আক্রমণ বেড়েছে।

আপাত দৃষ্টিতে এসব ঘটনা বিচ্ছিন্ন মনে হলেও স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, এসব ঘটনার সঙ্গে রাশিয়ার যোগসূত্র রয়েছে। পৃথকভাবে ঘটনাগুলোকে ছোট মনে হলেও সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করলে সমন্বিত ও পরিকল্পিত বলে মনে হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে রাশিয়ার হাইব্রিড যুদ্ধ। সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এসব কথা উঠে এসেছে।

চলতি মাসের শুরুতে প্রাগে একটি বাসের গ্যারেজে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর চেক প্রধানমন্ত্রী পিটার ফিয়ালা দাবি করেছিলেন, সম্ভবত মস্কো এই ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে। তার অভিযোগের পর গত কয়েক মাসে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সরকারগুলো একই ধরনের ঘটনার কথা জানিয়েছে। এতে নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

একাধিক হ্যাকিং ও গুপ্তচরবৃত্তির ঘটনা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ঘটেছে। একই সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) অভিযোগ করেছে, সীমান্ত দিয়ে তৃতীয় দেশে অভিবাসী ঠেলে দেওয়ার মাধ্যমে অভিবাসনকে অস্ত্র বানাচ্ছে রাশিয়া ও বেলারুশ। একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে সন্দেহভাজন হামলার ঘটনাও ঘটেছে। এর মধ্যে রয়েছে রাশিয়ার একজন পক্ষত্যাগকারী সেনাকে স্পেনে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। রাশিয়ার এক নির্বাসিত ভিন্নমতাবলম্বী নেতাকে হাতুড়ি দিয়ে হামলা করা হয়েছে লিথুয়ানিয়ায়।

গত সপ্তাহে কানাডায় এক অনুষ্ঠানে ন্যাটো জোটের মহাসচিব জেন্স স্টোলটেনবার্গ বলেছিলেন, আমরা এমন হুমকির মধ্যে রয়েছি, যা সর্বাত্মক সামরিক হামলা নয়, কিন্তু হাইব্রিড হুমকি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করা, ভুয়া তথ্য, সাইবার হামলা ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড।

কিংস কলেজ লন্ডনের প্রতিরক্ষা গবেষণা বিষয়ের সিনিয়র লেকচারার রড থর্নটন বলেছেন, হামলাগুলোতে এক ধরনের প্রবণতা রয়েছে, যা রাশিয়াকে সংযুক্ত করছে। এমন নির্দিষ্ট ধরনের অভিযানের ঘটনা গত কয়েক মাসে বেড়েছে। রুশরা এগুলো বাড়িয়ে দিচ্ছে।

এসব ঘটনার কোনোটিতেই মস্কো দায় স্বীকার করেনি। সিএনএনের পক্ষ থেকে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি রাশিয়া। তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন স্পষ্ট করে বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধকে তিনি ন্যাটোর বিরুদ্ধে বৃহত্তর সংঘাতের অংশ হিসেবে বিবেচনা করেন। তার দাবি, কিয়েভের শাসকরা পশ্চিমাদের পুতুল।

রড থর্নটন বলেছেন, রাশিয়া ন্যাটোর সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধের বিকল্প হিসেবে ধ্বংসাত্মক অভিযানের দিকে ঝুঁকছে। যা রাশিয়ার জন্য বিপর্যয়কর হতে পারে। রাশিয়ার সামরিক নীতিতে দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে ন্যাটোর বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ এড়ানোর প্রচেষ্টা। কারণ তারা জানে যে ন্যাটো বাহিনীর বিরুদ্ধে তারা পরাজিত হবে। তারা এমন কর্মকাণ্ড করছে যা সশস্ত্র সংঘাতের সীমার নিচে। ফলে ন্যাটোর সঙ্গে যুদ্ধের শঙ্কা থাকছে না।

রাশিয়া পর্যবেক্ষকেরা বলেন, ২০২০ সাল থেকে রাশিয়া যুদ্ধকৌশল বৃদ্ধির দিকে গুরুত্ব বাড়াতে শুরু করে। ওই সময় কুখ্যাত গোয়েন্দা কমান্ডার আন্দ্রেই আভিরিয়ানভকে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়টি এরই ইঙ্গিত দেয়।

ন্যাটোর পক্ষ থেকে কয়েক মাস ধরেই পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে রাশিয়ার অপ্রচলিত যুদ্ধকৌশলের বিরুদ্ধে সতর্ক করা হচ্ছে। কিন্তু এর আগে ইউরোপের নেতারা এ নিয়ে ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে আঙুল তুলতে দ্বিধায় ছিলেন। নিরাপত্তা–গবেষক ওলগা লাউটম্যান বলেন, দায়বদ্ধতা না থাকায় মস্কো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাহসী হয়ে উঠেছে।