যেভাবে যুক্তরাজ্যকে ‘পুনরাবিষ্কার’ করতে চান স্টারমার প্রকাশিত: ১২:৫১ অপরাহ্ণ, জুলাই ৬, ২০২৪ সাতাশ বছর পর চারশর বেশি আসনে জয় পাওয়া লেবার পার্টির নেতা স্যার কিয়ার স্টারমার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার প্রথম ভাষণে যুক্তরাজ্যকে ‘পুনর্নির্মাণ’ ও ‘পুনরাবিষ্কার’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। রাজা তৃতীয় চার্লসের কাছ থেকে সরকার গঠনের অনুমতি নিয়ে সোজা ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে এসে সংবাদমাধ্যমকে নিজের পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত করতে গিয়ে এ ওয়াদা করেন ‘পরিবর্তনের ডাক’ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়া স্টারমার। ডাউনিং স্ট্রিটে তার এসব কথাবার্তা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জাতির উদ্দেশে ‘প্রথম ভাষণ’ হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে। ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস ও নর্দান আয়ারল্যান্ড নামে চার রাজ্য নিয়ে গঠিত যুক্তরাজ্যে বিরাজমান বহু সংকট ও সমস্যার মধ্যেই প্রথম ভাষণে রাষ্ট্র মেরামতের এই প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবায়নযোগ্য, কীভাবে তিনি তা করতে চান; এসব বিষয়ে এখন অনেকের কৌতূহল জন্ম নিচ্ছে। বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, জাতির উদ্দেশে প্রথম বার্তায় কিয়ার স্টারমার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিকে তার মনোযোগ দেখিয়েছেন, সেটি হল ‘অনিরাপদ বিশ্ব’। সেখানে তিনি যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের জন্য ‘নিরাপত্তা বিশ্ব’ দেওয়ার জন্য কাজ করার কথা বলেছেন। যুক্তরাজ্যের ছয় কোটি ৭০ লাখ মানুষের মধ্যে অভিবাসন ও প্রবাসীর সংখ্যা নেহাত কম নয়, স্টারমার তার রাষ্ট্র পুনর্নিমাণের পরিকল্পনায় তাদের কতটা গুরুত্ব দেবেন, তাও পর্যবেক্ষণ থাকবে। স্কাই নিউজ লিখেছে, লেবার পার্টির নিরঙ্কুশ জয়ও স্টারমারের ওপর প্রত্যাশার বাড়তি চাপ তৈরি করেছে। সে চাপ মোকাবেলা করতে তাকে বিভিন্ন খাতে কর বাড়াতে হতে পারে। যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের ৬৫০ আসনে বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ হয়, শুক্রবার আসে ৬৪৮টি আসনের ফলাফল। তাতে দেখা যাচ্ছে, লেবার পেয়েছে ৪১২টি আসন, কনজারভেটিভ ১২১টি, লিবারেল ডেমোক্র্যাটস ৭১, স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি ৯টি এবং অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্ররা মিলে পেয়েছে ৩৯টি আসন। ইনভারনিস এবং ওয়েস্ট রোজ-শায়ার আসনের ভোট পুনর্গণনা হবে শনিবার সকালে, তারপর সেখানের ফল ঘোষণা করা হবে। ‘পরিবর্তনের বার্তা’ দিয়ে বিপুল ভোটে জয় পাওয়ার পর যুক্তরাজ্যকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ বাসস্থান বানানোর কথা বলছেন স্টারমার। আর সেজন্য নবগঠিত সরকারকে ‘সেবার সরকার’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত না করা পর্যন্ত কাজ করে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পার্লামেন্টে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় এসব নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় আইন পাস করা এখন লেবারদের জন্য সহজ হবে। সরকার গঠনের পরপরই স্টারমার কোন কোন দিকে মনোযোগ দিতে পারেন, সেসব বিষয়ে তুলে আনতে লেবার পার্টির নির্বাচনি ইশতেহারে গুরুত্বের শীর্ষে থাকা কিছু প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরেছে বিবিসি। যুক্তরাজ্যকে পুনর্গঠন করতে স্টারমারকে এসব বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। • আয়কর, জাতীয় বীমা স্কিম বা ভ্যাট না বাড়িয়ে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। • জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার অধীনে চিকিৎসার জন্য অপেক্ষায় থাকা মানুষের সময় কমানো। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসাকর্মীদের প্রণোদনা দিয়ে কাজের সময় বাড়িয়ে প্রতিদিনি অতিরিক্ত ৪০ হাজার সেবাপ্রত্যাশীকে চিকিৎসার আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে। • পাচার চক্র ও মানব পাচার প্রতিরোধে সন্ত্রাসবিরোধী নিরাপত্তা ব্যবস্থার মত ক্ষমতা দিয়ে ‘সীমান্ত নিরাপত্তা কমান্ড’ গঠনের কথা বলা হয়েছে। • নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে নতুন জনবল নিয়োগ দিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ‘গ্রেট ব্রিটিশ এনার্জি’কে যুগোপযোগী করতে চান স্টারমার। • দেশ পুনর্গঠনের আরেক প্রতিশ্রুতিতে বলা হয়েছে, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে সমাজবিরোধী আচরণ প্রতিরোধে ১৩ হাজার পুলিশ সদস্য ও সহায়ক কর্মী নিয়োগ দেবেন স্টারমার। • দেশের জন্য নতুন প্রজন্মকে গড়ে তুলতে প্রাথমিক শিক্ষার দিকে বিশেষ মনোযোগ রয়েছে লেবার নেতার। নতুন প্রধানমন্ত্রী স্টারমার প্রাথমিক শিক্ষায় সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দিতে এবং সব শিশুর জন্য বিনামূল্যে সকালের নাশতার ব্যবস্থা করতে চাইছেন। জয়ের পর প্রথম ভাষণে দেশকে নতুন করে ‘আবিষ্কার’ করার কথাও বলেছেন স্টারমার। সেজন্য এখনই কাজ শুরুর কথা বললেও যুক্তরাজ্যের মানুষের কাছে ‘কিছুটা সময়ও’ চেয়েছেন তিনি। তার ভাষায়, দিনবদলের বিষয়টি ‘সুইচ চেপে বাতি জ্বালানো’র মত কোনো বিষয় নয়। এ জন্য কিছুটা অপেক্ষা করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। SHARES আন্তর্জাতিক বিষয়: সংবাদমাধ্যমকেস্টারমার