অঢেল সম্পদ আবেদের, এলাকায় ‘দানবীর-সমাজসেবক’ প্রকাশিত: ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১০, ২০২৪ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সাবেক চেয়ারম্যানের গাড়িচালক ছিলেন সৈয়দ আবেদ আলী জীবন। প্রশ্নফাঁস চক্রে জড়িয়ে তিনি গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। ঢাকায় আছে একটি ছয়তলা বাড়ি, তিনটি ফ্ল্যাট ও একটি গাড়ি। গ্রামে ৬ কোটি টাকার বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স বাড়ি। নিজ এলাকায় সরকারি জমি দখল করে গড়েছেন গরুর খামার। বাড়ির পাশে করেছেন একটি মসজিদ ও ঈদগাহ। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আবেদ আলী এসব তথ্য জানিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। সিআইডির কর্মকর্তাদের ধারণা, কিছু দৃশ্যমান সম্পদ ছাড়াও আবেদের আরও সম্পদ রয়েছে। আবেদের কোথায় কোথায় সম্পদ ও ব্যাংকে কী পরিমাণ টাকা-পয়সা রয়েছে সবকিছু তদন্ত করবে সিআইডি। যেভাবে পিএসসিতে চাকরি হয় আবেদের খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গ্রেফতার সৈয়দ আবেদ আলী মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার বালিগ্রাম ইউনিয়নের পশ্চিম বোতলা গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে। ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ এমন পরিবারে জন্ম আবেদের। অভাবের কারণে পড়াশোনা করতে পারেননি তিনি। মাত্র ৮ বছর বয়সে জীবিকার তাগিদে ঢাকায় এসে শুরু করেন কুলির কাজ। পরে এক ব্যক্তির পরামর্শে গাড়ি চালানো শিখে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণির সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে গাড়িচালক হিসেবে চাকরি নেন একটি বেসরকারি কোম্পানিতে।১৯৯৭ সালের দিকে রাজধানীর ইন্দিরা রোডের পশ্চিম রাজাবাজার এলাকার একটি ব্যাচেলর মেসে থাকাকালীন আবেদ আলীর সঙ্গে পরিচয় হয় এক ব্যক্তির। সেই ব্যক্তির মামা চাকরি করতেন সচিবালয়ে। তার মাধ্যমেই পিএসসিতে গাড়িচালক হিসেবে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর চাকরি হয় তার। প্রশ্নফাঁস যেন ‘আলাদীনের জাদুর চেরাগ’ রূপকথার আলাদীনের জাদুর চেরাগের মতো ‘যা চেয়েছেন তা পেয়েছেন’ আবেদ। গাড়িচালকের চাকরি পেয়ে শূন্য থেকে শতকোটি টাকার মালিক তিনি। নেপথ্যে রয়েছে পিএসসিসহ বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস। দামি বাড়ি, গাড়ি, প্লট-ফ্ল্যাট, এমনকি তৈরি করেছেন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স কোম্পানিও। এখন নিজেকে পরিচয় দেন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে আবেদ আলীর রয়েছে অন্তত সাতটি ফ্ল্যাট এবং তিনটি প্লট। আবেদ আলীর বড় ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম পড়াশোনা করেছেন ভারতের শিলিগুড়ির একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে। সেখানেও একটি বাড়ি কিনেছেন আবেদ। দেশে ফিরে সিয়াম একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। বাবার টাকায় কেনা একাধিক ব্যক্তিগত দামি গাড়ি ব্যবহার করেন তিনি। গ্রামে আবেদ ও তার ছেলে সিয়াম চলাফেরা করতেন বডিগার্ড নিয়ে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, অবৈধ টাকার গরমে গ্রামে ‘উষ্ণতা’ ছড়াতেন আবেদ আলী ও তার ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম। সিয়াম সব সময় হ্যারিয়ার গাড়ি নিয়ে চলাফেরা করতেন। এলাকায় গেলে তরুণ ও যুবকদের নিয়ে বসাতেন মদের আসর। সঙ্গে সব সময় ১০-১২ জন বডিগার্ড থাকতো। সিয়াম যেখানেই যেতেন সঙ্গে থাকা ছেলেগুলো সেখানে গিয়ে ফেসবুকে সিয়ামের কার্যক্রম সম্পর্কে ফেসবুকে পোস্ট করতেন। অনেকটা বলা যায় টাকা দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করতেন সিয়াম। আবেদের সঙ্গে থাকতো বডিগার্ড। যারা তার প্রচারণাও চালাতেন। এছাড়া এলাকায় ফেসবুকে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হুমকি-ধামকি দিতেন। ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটির সহ-সভাপতির পদ পাওয়ার পরেও কোনো অনুষ্ঠানেই উপস্থিত হননি। সমাজসেবক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চেষ্টা আবেদ আলী গ্রামে গিয়ে কিছু টাকা-পয়সা খরচ করে ফেসবুকে পোস্ট করে সমাজসেবক হিসেবে নিজেকে দাবি করতেন। মূলত তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে নিজেকে জাহির করতে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জোর করে যুক্ত হতে চাইতেন টাকার বিনিময়ে। তিনি নিজেকে ডাসার উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ঘোষণা করে বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানসহ গরিবদের মাঝে ব্যাপক দান-খয়রাত শুরু করেন। শাড়ি, লুঙ্গিসহ নগদ টাকা বিতরণ, মাদরাসা ও এতিমখানায় দান করায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন আবেদ আলী। উপজেলা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে খরচ ৩ কোটি দীর্ঘদিন এলাকায় না গেলেও গত পাঁচ বছর ধরে নিজ এলাকা মাদারীপুরের ডাসার উপজেলায় যাতায়াত শুরু করেন আবেদ আলী। উঠে-পড়ে লাগেন ডাসার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হতে। নিজের পক্ষে সভা-সেমিনার, মিছিলে বড় ছেলে সিয়ামকে ব্যবহার করতেন। আর সিয়ামও বাবার পক্ষে দিন-রাত চালান প্রচারণা। দেন বিভিন্ন আশ্বাসের ফুলঝুরি। গত কোরবানির ঈদে দামি গাড়িতে চড়ে ১০০ জনের মধ্যে এক কেজি করে মাংস বিতরণ করেন সিয়াম। সেই ভিডিও শেয়ার করেন নিজের ফেসবুকে। SHARES জাতীয় বিষয়: আবেদপ্রশ্নফাঁস