ট্রাম্পের ওপর হামলা কিসের বার্তা? প্রকাশিত: ১২:৩৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৪, ২০২৪ যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলা হয়েছে। শনিবার (১৩ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের বাটলার শহরে এ ঘটনা ঘটে। হামলাকারী নিজেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ট্রাম্পকে লক্ষ্য করেই এ হামলা চালানো হয়েছিল এবং এটি ছিল একটি গুপ্তহত্যার প্রচেষ্টা। এতে সাবেক এই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট কানে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। কার্যত হামলা থেকে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান তিনি। এরপরই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, আমাদের দেশে যে এমন হামলার ঘটনা ঘটতে পারে তা অবিশ্বাস্য। রোববার (১৪ জুলাই) এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। আগামী নভেম্বর মাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে যুক্তরাষ্ট্রে। সেই নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ট্রাম্প। নির্বাচনের প্রচারে শনিবার বাটলার শহরে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে শোভযাত্রা শেষে অস্থায়ী মঞ্চে বক্তব্য দিতে ওঠেন ট্রাম্প। হামলার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা গেছে ট্রাম্প মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। এ সময় হঠাৎ তাঁর কান ঘেষে একটি বুলেট চলে যায়। সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চে বসে পড়েন তিনি। এ সময় তাঁর সমর্থকদের চিৎকার করতে শোনা যায়। এরপর সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা ট্রাম্পকে দ্রুত পাশের একটি গাড়িতে নিয়ে যান। এ সময় ট্রাম্পের কান ও গাল বেয়ে রক্ত পড়তে দেখা যায়। ওই গাড়িতে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। ট্রাম্পের প্রচার শিবির জানিয়েছে, রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সুস্থ আছেন। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, ট্রাম্প মঞ্চে ওঠার কিছুক্ষণ পরেই পাশের একটি ভবনের ছাদে ওঠেন সন্দেহভাজন হামলাকারী। তাঁর হাতে একটি রাইফেল ছিল। স্থানীয় অ্যাটর্নি রিচার্ড গোলডিঞ্জার সাংবাদিকদের বলেছেন, সন্দেহভাজন হামলাকারী পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। এ সময় একজন সমর্থকও মারা গেছেন।’ এদিকে ট্রাম্পের ওপর হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, পেনসিলভানিয়ায় সহিংসতার ঘটনায় সবার নিন্দা জানানো উচিত। ট্রাম্পের জন্য এ হামলার অর্থ কী? নির্বাচনী ভাষণ শুরুর সময় ট্রাম্পের সমর্থকরা লাল, সাদা এবং নীল রঙের নানা ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড নিয়ে উপস্থিত ছিলেন। তবে এভাবে রক্ত ঝরানোর বিষয়টিকে কোনোভাবেই ভালোভাবে দেখছেন না ট্রাম্প সমর্থকরা। তাদের ধারণা, বিদ্বেষপূর্ণ ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এটি করা হয়েছে। এমনকি এ হামলার ফলে ট্রাম্পের প্রতি জন সমর্থন বেড়ে যাওয়ার ইংগিতও দিয়েছেন অনেকেই। এদিকে ইলন মাস্ক অবিলম্বে ট্রাম্পকে থিওডোর রুজভেল্টের সাথে তুলনা করে বলেছেন, তিনি এগিয়ে যাবেন। মার্কিন নির্বাচনের প্রচারণা চালানোর আর মাত্র চার মাস বাকি আছে। আর এমন সময়ে এ হামলা পুরো রাজনৈতিক মেরুকরণের চিত্রি যেন পালটে দিয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের ধারণা, ট্রাম্প কি নিরাপদে তার প্রচারণা চালিয়ে যেতে পারবেন কী না এ নিয়েও দেখা গেছে সন্দেহ। অন্যদিকে ট্রাম্প এমন ভিড়ের মধ্যেই তার লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সবুজ সংকেত দিয়েছেন। তিনি চান তার জনগণকে সাথে রেখে ও তাদের কাছে গিয়েই প্রচারণা চালাবেন। এমনকি নিরাপত্তার বিষয়টিকেও তিনি নাকি প্রাদ্ঘান্য দিবেন না। তবে এমন হামলা সকলের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নিরাপত্তা প্রদানের ব্যররথতা বলে অনেক গণমাধ্যম ইঙ্গিত দিচ্ছে। এমনকি এটি মার্কিন রাজনীতির জন্যও বড় রকমের হুমকির ইঙ্গিত। অন্যদিকে সমর্থকরা কষছেন নানা জল্পনা-কল্পনার হিসাব। আসলেই আক্রমণকারীর উদ্দেশ্য কী ছিল? একজন বলেন, আমরা লি হার্ভে অসওয়াল্ড ষড়যন্ত্র তত্ত্বের কথা শুনেছি। তবে ট্রাম্প সর্বদাই সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জয়লাভ করেছেন। তিনি একমাত্র ব্যক্তি যিনি মার্কিন রাজনীতিকে প্রভাবিত করেছেন। বাইডেনের জন্য কোন বার্তা? ট্রাম্পের ওপরে এমন হামলা বাইডেনের জন্য যে মটেই সুখকর নয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একদিকে নিজ দলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছেন তিনি, অন্যদিকে হুট করেই এমন আকস্মিক ঘটনা যেন গোদের উপর বিষ ফোঁড়া। তবে হামলার তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় বাইডেন দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে চলমান এই অস্থিরতা অবস্থায় হয়তো তিনি খুব সাবধানতা অবলম্বন করবেন বক্তব্য দেয়ার বিষয়ে। এমনিতেই ডেমোক্র্যাটিক পার্টির আন্দোলনকারীরা এখনও প্রার্থী হিসাবে বাইডেনের বয়স এবং ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছিলেন, আর এখন এ হামলা বিষয়টিকে আরও ভাবিয়ে তুলবে বলেও মনে করছেন রাজনীতিবিদেরা। তবে এ হামলা বাইডেনের জন্য পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে তাতে সন্দেহ নেই। যদিও বাইডেন বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রে এই ধরনের সহিংসতার কোন স্থান নেই।” এসময় তিনি দেশকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ৬ জানুয়ারির দাঙ্গার পর থেকে রাজনৈতিক সহিংসতা শুরু হয়েছে দেশতিতে। আমার সহকর্মী হার্ভে লেমাহিউ যেমন সঠিকভাবে উল্লেখ করেছেন যে, ট্রাম্পের ওপর এমন হামলার ফলে উভয়পক্ষেই অস্থিরতা বিরাজ করবে। তবে কে অপরাধী ছিল এবং ঠিক উদ্দেশ্যই বা কী ছিল সেটির উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। এদিকে গত কয়েকদিনে বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইনের বিষয়য়ে বাইডেন নিবিড়ভাবে কাজের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। অন্যদিকে অ্যাসল্ট রাইফেল নিষিদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাইডেন বলেছিলেন যে, ট্রাম্প বন্দুক আইনের বিষয়য়ে কিছুই করবেন না। অন্যদিকে এ হামলার ফলে বন্দুক আইন নিয়ন্ত্রণের বিষয়য়ে জনগণের আর তেমন সাড়া না মিলতেও পারে। বরং নিজের নিরাপত্তার জন্য সকল মার্কিনীদের মনোযোগ বরং বন্দুকের ব্যবহার সীমিতকরণের দিক থেকে সরে আসবে বলেও বিশেষজ্ঞগণ মনে করছেন। এমনকি এই ঘটনাটি দেশতির জনগণের জন্য অস্ত্র বহনের প্রয়োজনীয়তাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে এমন হামলার অর্থ কী? শনিবারের এই হামলার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ফাটল আরও প্রশস্ত হওয়ার পথে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞগণ। এমনকি ৬ জানুয়ারীর দাঙ্গা নিয়ে যে বিতর্ক ছিল সেটিও অনেকটা চাপা পরে যেতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে। তার মানে দেশটিতে এমন রাজনৈতিক সহিংসতা কেবল ট্রাম্পের আমলেই হয়নি বরং এটাও ইঙ্গিত দিচ্ছে যে এমন হামলার শিকার যে কোনো শাসনামলেও হতে পারে বা যে কোনো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এমন ঘটনার পরিণাম ভোগ করতে পারেন। একইসঙ্গে দেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে বর্তমান সরকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যে তেমন শক্তিশালী নয় সেটির ইঙ্গিতও বহন করবে এই হামলা। এর আগেও দেশটি রাজনৈতিক সহিংসতার বিভিন্ন প্রেক্ষাপট মোকাবিলা করেছে। ডেমক্র্যাট শিবিরের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে ট্রাম্পকে হত্যার জন্য এ হামলা চালানো হয়েছিল। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে এমন ঘটনা নেতিবাচকভাবে দেখছেন। বিভিন্ন রাজ্যের সিনেটর, গভর্নর থেকে শুরু করে সকলের কাছে একটাই প্রশ্ন রাজনীতির মাঠে কেনো এমন হামলা আর তাতে কোন পক্ষের লাভ বেশি হতে পারে? কিংবা আদৌ এটি পুর্ব পরিকল্পিত নাকি কোন বিচ্ছিন্ন মহলের হামলা-এসব কিছুই এখন নির্বাচনের হিসেব ও সমীকরণের নতুন ইঙ্গিত দিচ্ছে। এবারে দেখা যাক আসন্ন নির্বাচনে জনগণের রায় কোনদিকে আসে। কোথায় সংঘটিত হয়েছিল? পেনসিল্ভেনিয়ার বাটলারে প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনী প্রচারণার সময় এই হামলার ঘটনা ঘটে। শহরটি প্রদেশের পশ্চিমে ও পিটসবার্গ থেকে ৩৫ মেইল উত্তরে অবস্থিত। ঠিক কি ঘটেছিল? ট্রাম্প ভাষণ শুরুর ৬ মিনিটের মধ্যে সমাবেশের মধ্যে এক বিকট শব্দ শোনা গেলে ট্রাম্প তার কান ধরে রাখেন। এসময় বেশ কয়েকজন সিক্রেট সার্ভিস এজেন্ট মঞ্চে ছুটে এসে তাকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেললে ট্রাম্প মাটিতে পড়ে যান। এসময় জনতা চিৎকার করতে থাকেন হামলার আকস্মিকতায়। প্রায় এক মিনিট পরে তার নিরাপত্তারক্ষীরা ট্রাম্পকে মাটি থেকে উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করেন। এসময় তিনি কিছু হয়নি তেমন এমন একটা ভাব ছুঁড়ে দিয়ে সমর্থকদের প্রতি উল্লাস প্রকাশ করেন। পরে বেশ কয়েকজন সিক্রেট সার্ভিস এজেন্ট ট্রাম্পকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। যান। তার কানে ও মুখের পাশে রক্ত দেখা যায়। পরে তিনি তার সোশ্যাল মিডিয়া সাইট, ট্রুথ সোশ্যাল-এ বলেছিলেন যে “একটি বুলেট যা আমার ডান কানের উপরের অংশে বিদ্ধ হয়েছিল।” বাইডেনের অভবাসন নীতি নিয়ে যখন কথা বলছিলেন ঠিক সেসময়েই ট্রাম্পের ওপর গুলির ঘটনা ঘটে। কেমন আছেন ট্রাম্প? ট্রাম্পের মূখপাত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স- এ লিখেন, এ যাত্রায় ট্রাম্প বেঁচে গেছেন। আর কেউ আহত হয়েছিলেন? সিক্রেট সার্ভিস এজেন্ট এক্স-এ জানান, হামলাকারীকে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। তিনি এখন মৃত। তিনি লিখেন, দ্রুততার সঙ্গেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনি (ট্রাম্প) এখন সুস্থ আছেন। তিনি আরও বলেন একজন সমর্থক মারা গেছেন ও দুইজন মারাত্মক আহত হয়েছেন। তবে ঘটনাটি এখন এফবিআই’র তদন্তে রয়েছে। কে এই হামলাকারী? সিক্রেট সার্ভিস এক্স-এ নিশ্চিত করেছেন যে, হামলাকারীর পরিচয় এখনো জানা যায়নি। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি তদন্ত করছে। এমনকি হামলাকারী পুরুষ ছিলো কিনা সেটিও জানা যায়নি। একইসঙ্গে সে একাই নাকি অন্য আর কেউ তার সঙ্গে ছিল সেটিও স্পষ্ট নয়। হামলাকারী ঠিক কোন জায়গা থেকে হামলা চালায়? নিরাপত্তা বলয়ের বাইরে থেকে এ হামলা করা হয়েছে বলে জানা যায়। তিনজন নিরাপত্তা কর্মী এনবিসিকে এ তথ্য জানিয়েছে। জেমস ব্লেইর যিনি কিনা ট্রাম্পের রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও এই নির্বাচনী প্রচারণার দায়িত্বে রয়েছেন তিনি আপাতত প্রচারাভিযান সম্পূর্ণ বন্ধ করা হয়েছে বলে জানান। এ বিষয়ে ক্যাম্পেইনে নিয়োজিত সদস্যদেরকে অবহিতও করেছেন। তবে পরে এ বিষয়য়ে বিস্তারিত সব জানানো হবে বলেও বলেন ব্লেইর। SHARES আন্তর্জাতিক বিষয়: ট্রাম্পেরপেনসিলভানিয়া