পাহাড়সম দেনা রেখে কাগজে-কলমে লাভ দেখাল বিমান!

প্রকাশিত: ৬:১৪ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৯, ২০২৪

পদ্মা অয়েলের বার্ষিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বিমানের কাছে ১২৭৭ কোটি টাকা পাবে তারা।

এদিকে, অ্যারোনটিক্যাল ও নন-অ্যারোনটিক্যাল মিলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষও (বেবিচক) বিমানের কাছে পাবে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা।

দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা এসব বকেয়া পরিশোধ না করে কাগজে-কলমে মুনাফা দেখিয়ে নিজেদের ‘লাভজনক প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে ঘোষণা করে চলেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।

গত ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করে বিমান। এতে বলা হয়, এই অর্থবছরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স মোট ১০ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা আয় করেছে। এর মধ্যে নিট লাভ হয়েছে ২৮২ কোটি টাকা।

অন্যদিকে পদ্মা অয়েলের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিমান বাংলাদেশের কাছে তারা মোট ১২৭৭ কোটি ৩৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা পাওনা আছে।

পদ্মা অয়েল সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিমান নানা অজুহাত দেখিয়ে বকেয়া পরিশোধে অনীহা প্রকাশ করে। এরপর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনকে চাপ প্রয়োগ করে বকেয়া মওকুফের চেষ্টা করে। একপর্যায়ে ব্যর্থ হয়ে ঋণ পরিশোধে লম্বা সময়ের কিস্তি মঞ্জুর করিয়ে নেয় তারা।

জানতে চাইলে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (প্রশাসন-২) মোহাম্মদ ফারুক বলেন, বাংলাদেশ বিমানের কাছে যে বকেয়া রয়েছে তা পরিশোধ করার জন্য তাদের বারবার বলা হচ্ছে এবং আমাদের মিটিংয়েও বিষয়টা উঠে আসে। তারা এখন প্রতি মাসে ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা করে পরিশোধ করছে কিন্তু আমরা বলেছি পরিমাণটা আরও বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য, যাতে বকেয়াটা পরিশোধ হয়ে যায়।

তিনি বলেন, এটা মওকুফ করার কোনো সুযোগ নেই, বিমানকে সব টাকা পরিশোধ করতে হবে।

জানা গেছে, ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে পদ্মা অয়েলের টাকা বকেয়া রাখা শুরু করে বিমান। ২০২০ সালে বকেয়ার পরিমাণ ২১০০ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। এ বছরগুলোতে বিমান প্রতি মাসে ৩০০ কোটি টাকার জেট ফুয়েল কিনত। কিন্তু পরিশোধ করত ২০ কোটি টাকার মতো। হঠাৎ সেসময় দেশে করোনা মহামারি শুরু হলে এভিয়েশন খাতের লোকসানের কথা উল্লেখ করে বকেয়া মওকুফের আবেদন করে বিপিসি ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিল বিমান। তবে বিল মওকুফের আবেদন খারিজ করে বিপিসি। ২০২৩ সালে পাওনা আদায়ের উদ্যোগ নেয় তারা। মাসিক ১০-১৫ কোটি টাকার ছোট ছোট কিস্তিতে বিমান আগের পাওনা পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি দেয়।

বিমান বলছে, ২০২৬-২৭ সালের মধ্যে এসব বকেয়া পরিশোধ করতে পারবে তারা। তবে বর্তমান কিস্তি অনুযায়ী বকেয়া পরিশোধে ১৭-২০ বছর লেগে যাবে বলে জানিয়েছে পদ্মা অয়েল।