গুলেন ব্যারি সিনড্রোম রোগ থেকে সাবধান প্রকাশিত: ৫:৪৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১১, ২০২৫ গুলেন ব্যারি সিনড্রোম (জিবিএস) নামটি অনেকের কাছে অপরিচিত হলেও রোগের প্রাদুর্ভাব বাংলাদেশে একেবারেই কম নয়। দিন দিন বেড়েই চলেছে। যে কোনো বয়সের শিশু-কিশোর বা নারী-পুরুষের এ রোগ হতে পারে। এতে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে শুরু করে সারা শরীরে দুর্বলতা দেখা দিতে পারে এবং একপর্যায়ে নড়াচড়ার সামর্থ্যও হারিয়ে ফেলতে পারে। জিবিএস রোগের মূল কারণ হলো জীবাণু। আসলে মানবদেহের জীবাণু-প্রতিরোধী ইমিউন সিস্টেম যখন অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে, তখন এ রোগের উৎপত্তি হয় বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। ‘ক্যাম্পাইলো ব্যাকটর জেজুনি’ জীবাণুতে আক্রান্ত ডায়রিয়া রোগী বা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসে আক্রান্ত সর্দি-জ্বরের রোগীরা পরবর্তী পর্যায়ে সাধারণত জিবিএস রোগে আক্রান্ত হয়। কখনো কখনো ভ্যাকসিন দেওয়ার পরও কারও কারও জিবিএস হতে পারে। ডায়রিয়া বা ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার প্রায় দুই সপ্তাহ পরে রোগী হঠাৎ করে প্রথমে দুপায়ে দুর্বলতা বোধ করে, যা ক্রমে বাড়তে থাকে এবং উপরের দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। শরীরের এ দুর্বলতা মেরুদণ্ড, দুই হাত, বুক ও মুখের মাংসপেশিতে ছডিয়ে পড়ে। কখনো কখনো দুর্বলতা এত বেশি হয় যে, রোগী হাত-পায়ের আঙুল একটুও নাড়াতে পারে না। বুকের মাংসপেশির দুর্বলতার কারণে শ্বাসকষ্ট হলে রোগীকে আইসিইউ বা ‘নিবিড় পর্যবেক্ষণ ইউনিট’-এ স্থানান্তর করতে হয়। নইলে রোগী মারাও যেতে পারে। তবে জিবিএস রোগীর স্নায়ুর সমস্যা ও পেশির দুর্বলতা থাকলেও সাধারণ অনুভূতি, স্মৃতিশক্তি, পায়খানা-প্রস্রাবের তেমন সমস্যা হয় না এবং রোগী কখনো অজ্ঞান হয়ে যায় না। রোগের ইতিহাস, উপসর্গ ও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী স্নায়ু পরীক্ষা বা মেরুদণ্ডের রস পরীক্ষা করে এ রোগটি নির্ণয় করা হয়। জিবিএস রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া উচিত। এই রোগের নির্দিষ্ট চিকিৎসা হলো প্লাজমাফেরোসিস বা শিরায় ইমিউনোগ্লোবিউলিন ইনজেকশন। উপসর্গ দেখা দেওয়ার দুসপ্তাহের মধ্যে এ চিকিৎসা দিতে হয়। নয়তো ইমিউনোগ্লোবিউলিনের কার্যকারিতা থাকে না। নিয়মিত হাত-পায়ের ব্যায়াম করা, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখলে রোগী দ্রুত সেরে উঠতে পারে। কোনো কোনো রোগীর পুরোপুরি আরোগ্য পেতে প্রায় এক বছর লেগে যেতে পারে। জিবিএসের ক্ষেত্রে সাধারণত প্রায় ৮০ শতাংশ রোগী সম্পূর্ণ সেরে ওঠে, ৫ থেকে ১০ শতাংশ রোগীর কিছু না কিছু শারীরিক দুর্বলতা স্থায়ীভাবে থেকে যায় এবং প্রায় ৫ থেকে ৬ শতাংশ রোগী মারা যায়। লেখক : অধ্যাপক, কিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল চেম্বার : পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী, ঢাকা ০১৯২৭০৭৮৭৬৬, ০১৭৯৮৫৬০০৪৪ SHARES লাইফস্টাইল বিষয়: জিবিএসসিনড্রোম