টিউলিপ ইস্যুতে চাপের মুখে প্রকাশিত: ৬:৩৯ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১৩, ২০২৫ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করার জন্য দেশটির প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের ওপর নানামুখী চাপ বাড়ছে। এরইমধ্যে টিউলিপের জায়গায় নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার চিন্তা করছে তার দল। যদিও এরআগে টিউলিপের প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার। তবে টিউলিপকে নিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মন্তব্যের পর এ চাপ আরও বেড়েছে। এদিকে তাকে বরখাস্ত করতে স্টারমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধান বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির নেতা কেমি বাডেনচ। তিনি টিউলিপ সিদ্দিকের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তার এক্স অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট করেছেন। এক্সের পোস্টে তিনি বলেন, ‘এখন কিয়ার স্টারমারের টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করার সময় এসেছে।’ ড. ইউনূসের মন্তব্যের পর তিনি এই বিবৃতি দেন। পোস্টে স্টারমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে কেমি বলেছেন, তিনি তার “ব্যক্তিগত বন্ধুকে দুর্নীতি বিরোধী মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন, যেখানে সিদ্দিক নিজেই দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত।” এদিকে টিউলিপের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ তদন্ত করছে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের পর্যবেক্ষক স্যার লরি ম্যাগনাস। অভিযোগ আছে, আব্দুল মোতালিফ নামে একজন ডেভেলপার টিউলিপকে উপহার হিসেবে একটি ফ্ল্যাট দিয়েছেন। ওই ফ্ল্যাট ব্যবহার করেছেন টিউলিপ। কিন্তু এ তথ্য গোপন ছিল। বিষয়টি সামনে আসায় জানা যায়, আব্দুল মোতালিফ হলেন ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার রাজনৈতিক মিত্র। তার সঙ্গে মোতালিফের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। এসব অভিযোগ ওঠার পর গত সোমবার নিরপেক্ষ উপদেষ্টা বা মিনিস্টারিয়াল স্ট্যান্ডার্ডস স্যার লরি ম্যাগনাসের কাছে গিয়ে গত সপ্তাহের সোমবার ধরা দেন টিউলিপ। তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করেন। এক চিঠিতে স্যার লরিকে বলা হয়, তদন্ত উন্মুক্ত। তিনি কোনো অন্যায় করেননি। ক্যাবিনেট মন্ত্রী পিটার কাইল বলেন, সিদ্দিক সংসদীয় তদারকি সংস্থার কাছে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের আহ্বান জানিয়ে “ঠিক কাজ করেছেন”। টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (তার খালা) ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দেয়া একাধিক ফ্ল্যাটে বসবাস করেছেন। টিউলিপের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ সামনে আসার পর সেগুলো তদন্তের আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর ইন্ডিপেনডেন্ট অ্যাডভাইজার অন মিনিস্ট্রিয়াল স্ট্যান্ডার্ডস (প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা) লাউরি ম্যাগনাসের কাছে গত সোমবার চিঠি লেখেন তিনি। ম্যাগনাসকে পাঠানো চিঠিতে তদন্ত শুরু করার অনুরোধ জানিয়ে টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, তিনি “কোনো ভুল করেননি।” একই দিন প্রধানমন্ত্রী স্টারমার বলেছেন, টিউলিপ সিদ্দিক “সম্পূর্ণভাবে সঠিক কাজ করেছেন” এবং তিনি তার ওপর “আস্থা” রেখেছেন। তবে সানডে টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, টিউলিপ সিদ্দিকের লন্ডনের সম্পত্তিগুলো তদন্ত করা উচিত। যদি তিনি সেগুলো “প্লেইন ডাকাতি” [সোজা ডাকাতি] করে অর্জন করে থাকেন, তবে তা সরকারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া উচিত। টিউলিপ সিদ্দিককে ক্ষমা চাইতে এবং পদত্যাগ করতে আহ্বান জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, “তিনি নিজে দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রী হয়ে নিজেকে রক্ষা করছেন। হয়ত আপনারা তখন বুঝতে পারেননি, কিন্তু এখন বুঝতে পারছেন।” পিটার কাইল স্কাই নিউজের ‘সানডে মর্নিং উইথ ট্রেভর ফিলিপস’ অনুষ্ঠানে বলেন, “আমি মনে করি সিদ্দিক ঠিকই করেছেন। তিনি নিজের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য আবেদন করেছেন। সেই তদন্ত চালিয়ে যেতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “এই পরিস্থিতি সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে এবং কর্তৃপক্ষকে তদন্ত করার সুযোগ দিতে হবে। আমরা তাদের আরও ক্ষমতা দিয়েছি যাতে তারা স্বাধীনভাবে তদন্ত করতে পারে। আপনারা জানেন, সময় হলে কিয়ার স্টারমার অবশ্যই কর্তৃপক্ষের কথা শুনবেন।” শ্যাডো চ্যান্সেলর মেল স্ট্রাইড টরি নেতা কেমি বাডেনচ এর মতামত পুনর্ব্যক্ত করে কিয়ার স্টারমারের কাছে টিউলিপ সিদ্দিককে পদচ্যুত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সিদ্দিকের জন্য এখন তার দায়িত্ব পালন করা “অসম্ভব”, এবং প্রধানমন্ত্রীকে তাকে পদ থেকে সরিয়ে দিতে হবে। স্ট্রাইড স্কাই নিউজের ‘সানডে মর্নিং উইথ ট্রেভর ফিলিপস’ অনুষ্ঠানে বলেন, “যা সঠিক নয় তা হলো, প্রধানমন্ত্রী তাকে ওই পদ থেকে সরাচ্ছেন না এবং পদত্যাগ করতে বলছেন না।” তিনি বলেন, “কারণ তিনি দুর্নীতি বিরোধী মন্ত্রী, তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে এবং এই পরিস্থিতিতে তার পক্ষে এই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা কঠিন। তাই তাকে পদত্যাগ করা উচিত এবং প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেয়া উচিত।” শ্যাডো চ্যান্সেলর আরও বলেন, “এমন কিছু পরিস্থিতি থাকে, যেখানে আপনি কার্যকরভাবে আপনার কাজ করতে পারেন না। এখন দেখুন, চ্যান্সেলর চীন গিয়েছেন। আমার ধারণা ছিল, টিউলিপ সিদ্দিক তার সাথে যোগ দিয়ে সেখানে যাবেন। কিন্তু এখন তিনি যাচ্ছেন না এবং আমি অনুমান করতে পারি, এর কারণ তার বর্তমান পরিস্থিতি।” তিনি বলেন, “তাহলে, বর্তমানে তিনি সরকারে তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে সক্ষম নন। এবং প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়ে তাকে সরিয়ে দিতে হবে।” SHARES আন্তর্জাতিক বিষয়: টিউলিপব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী