ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করায় চাহিদা কমার শঙ্কা, উদ্বিগ্ন চাষিরা

প্রকাশিত: ৫:৩২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২২, ২০২৫

গত ৯ জানুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট বিভাগ শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে দেয়। সেখানে আচার, বিস্কুট, কেক, চাটনী, টমেটো পেস্ট, টমেটো কেচাপ, টমেটো সস, আম, আনারস, পেয়ারা ও কলার পাল্প ইত্যাদি পণ্যসমূহের ওপর মূসক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। দাম বাড়লে ক্রেতারা সেসব পণ্য কম ভোগ করবেন বা ব্যবহার থেকে বিরত থাকবেন।

এর ফলে এসব প্রক্রিয়াজাত পণ্য তৈরিতে যেসব কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়, তার চাহিদা কমার শঙ্কা রয়েছে। চাহিদা কমলে এসব কৃষিজ পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত কৃষকরা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাদের দাবি, কৃষকদের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে বর্ধিত ভ্যাট ও শুল্ক প্রত্যাহার করতে হবে। তা না হলে দেশের সাধারণ কৃষকদের পাশাপাশি এদেশের উদীয়মান কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বর্তমানে দেশের বাইরেও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরই মধ্যে প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যেও রপ্তানি ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশে যথাযথ সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ সুবিধার অভাবে প্রতিবছর ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ ফল ও সবজি নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে কৃষক তার পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বাংলাদেশে বহুল উৎপাদিত কিন্তু যথাযথ সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজতকরণের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এমন একটি ফসল হলো টমেটো।

যথাযথ সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজতকরণের অভাবে কৃষিপণ্য যাতে নষ্ট না হয়, সেজন্য দেশের সর্ববৃহৎ কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান প্রাণ গ্রুপ ২০০২ সাল থেকে টমেটো থেকে নানান ধরনের খাদ্যপণ্য প্রস্তুত করে আসছে। প্রাণ সব সময় পণ্যের গুণগত মানের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করে। আর পণ্যের গুণগত মান অনেকাংশে নির্ভর করে মানসম্মত কাঁচামালের ওপর। এ বিষয়টিকে বিবেচনায় রেখে ২০১০ সালে প্রাণ টমেটোর চুক্তিভিত্তিক চাষ শুরু করে।

প্রাণের প্রায় এক লাখ চুক্তিভিত্তিক কৃষক রয়েছে। যাদের কাছে থেকে টমেটো, আম, বাদাম, দুধ, ডাল, কাসাভাসহ বিভিন্ন কাঁচামাল সংগ্রহ করে প্রাণ। রাজশাহী, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, খুলনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, পঞ্চগড় এবং ঠাকুরগাঁও জেলায় প্রাণের চুক্তিভিত্তিক কৃষকরা টমেটো উৎপাদন করে থাকেন। এবার সারাদেশে প্রাণের ১০,৫০০ চুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রায় ২৮০০ বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছেন। চলতি বছর টমেটো সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ২২,০০০ টন।

গত বছর প্রাণের ১০,০০০ চুক্তিভিত্তিক কৃষক প্রায় ২৫০০ বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছিলেন এবং টমেটো সংগ্রহের পরিমাণ ছিল ২০,০০০ টন। ফলে একদিকে প্রতিবছর প্রাণের চুক্তিভিত্তিক টমেটো চাষে যেমন কৃষক আগ্রহ দেখাচ্ছে, তেমনি প্রাণের চাষিরা প্রতিবছর বিঘাপ্রতি ভালো ফলনও পাচ্ছেন।