ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক করার প্রতিশ্রুতি জেলেনস্কির প্রকাশিত: ২:১০ অপরাহ্ণ, মার্চ ৫, ২০২৫ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি দীর্ঘস্থায়ী শান্তির জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘শক্তিশালী নেতৃত্বে’ কাজ করতে প্রস্তুত। তার এই বক্তব্য এমন সময় এলো যখন হোয়াইট হাউজে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বাগবিতণ্ডার কয়েকদিন পর কিয়েভের জন্য সামরিক সহায়তা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি তার অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। হোয়াইট হাউজের ‘বাগবিতণ্ডার’ ঘটনাকে দুঃখজনক বলেও অ্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি। জেলেনস্কি বলেন, এখন সময় এসেছে পরিস্থিতি ঠিক করার। কারণ ট্রাম্প তখন অভিযোগ করেছিলেন যে আলোচনার টেবিলে বসার জন্য যথেষ্ট প্রস্তুত ছিলেন না জেলেনস্কি। ইউক্রেনের এই নেতা যুদ্ধ শেষ করার প্রাথমিক কিছু ধাপের কথাও তুলে ধরেন। দ্রুত যুদ্ধ শেষ করতে প্রস্তুত বলে উল্লেখ করে ভলোদিমির জেলেনস্কি লিখেছেন, আমরা দ্রুত যুদ্ধ শেষ করতে প্রস্তুত এবং প্রথম ধাপে যুদ্ধবন্দিদের মুক্তি ও আকাশে যুদ্ধবিরতি- ক্ষেপণাস্ত্র, দূরপাল্লার ড্রোন, জ্বালানি ও অন্যান্য বেসামরিক অবকাঠামোতে হামলা নিষিদ্ধ করা এবং সমুদ্রে যুদ্ধবিরতি অবিলম্বে কার্যকর করা যেতে পারে যদি রাশিয়াও একই পদক্ষেপ নেয়। তিনি আরও বলেন, এরপর আমরা দ্রুত পরবর্তী ধাপগুলো শেষ করতে চাই এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে একটি শক্তিশালী চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছাতে কাজ করতে চাই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে জেলেনস্কি বলেন, শুক্রবারের ওই বৈঠকটি যেমন হওয়ার কথা ছিল তেমন হয়নি। তিনি বলেন, এটা দুঃখজনক যে, বিষয়টি এভাবে ঘটে গেছে। এখন সময় এসেছে পরিস্থিতি ঠিক করার। আমরা চাই ভবিষ্যতে সহযোগিতা ও যোগাযোগ আরও গঠনমূলক হোক। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খনিজ সম্পদ চুক্তি ব্যর্থ হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ওই চুক্তি ব্যর্থ হওয়ার পর ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খনিজ সম্পদ চুক্তি স্বাক্ষরে প্রস্তুত রয়েছে। গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউজে উত্তপ্ত ওই বৈঠকে কূটনীতিক সম্পর্ক ভেঙ্গে পড়ার পর মঙ্গলবার ইউক্রেনে এই খবর ছড়িয়ে পড়ে যে যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভে সামরিক সহায়তা বন্ধের বিষয়টি স্থগিত ও পর্যালোচনা করছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনকে সহায়তা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন জেলেনস্কি। বিশেষ করে তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশংসা করে বলেন, ‘আমাদের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা বজায় রাখতে যুক্তরাষ্ট্র যা করেছে আমরা সেটাকে সত্যিই মূল্যবান বলে মনে করি। আমাদের মনে আছে সেই মুহূর্ত যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউক্রেনকে জ্যাভলিন মিসাইল দিয়েছিলেন, যা পরিস্থিতি বদলে দিয়েছিল। আমরা এর জন্য কৃতজ্ঞ। শুক্রবার ওভাল অফিসের বৈঠকের সময় মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স জেলেনস্কির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তার জন্য যথেষ্ট কৃতজ্ঞতা না দেখানোর অভিযোগ তোলেন। ভ্যান্স সরাসরি প্রশ্ন করেন, আপনি কি পুরো বৈঠকে একবারও ধন্যবাদ বলেছেন? এরপর ট্রাম্প বলেন, আপনি খুব একটা কৃতজ্ঞ নন। জেলেনস্কি বৈঠকের সময় আত্মপক্ষ সমর্থন করেন। পরে অবশ্য ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি বলেছিলেন, আমি আমেরিকান জনগণের প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ, তাদের সব ধরনের সহায়তার জন্য। ওভাল অফিসের বৈঠকের পরিকল্পনায় ছিল ইউক্রেনের বিরল খনিজ সম্পদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশাধিকার দেওয়া সংক্রান্ত চুক্তির বিষয়টি। ওই চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে যখন বৈঠক হয় তখন আর চুক্তিটি হয়নি। আলোচনার মধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জেলেনস্কিকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি নিয়ে জুয়া খেলার অভিযোগ তোলেন। এর ফলে ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিরা চুক্তি স্বাক্ষর না করেই বৈঠক ত্যাগ করেন। ট্রাম্প তখন জেলেনস্কিকে বলেছিলেন, যখন আপনি শান্তির জন্য প্রস্তুত হবেন, তখন ফিরে আসুন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সাম্প্রতিক বিবৃতির পর ইউরোপের বেশ কয়েকজন নেতা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার জেলেনস্কির শান্তি নিশ্চিত করার বার্তাকে স্বাগত জানিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সব পক্ষের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ যে যত দ্রুত সম্ভব ইউক্রেনের জন্য একটি স্থায়ী ও নিরাপদ শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হবে। এদিকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁও জেলেনস্কির ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার আগ্রহকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন বলে জানিয়েছেন এলিসি প্রাসাদ। বৈঠকের কয়েক দিন আগে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ওয়াশিংটনে গিয়েছিলেন ম্যাক্রোঁ। সেখানে তিনি ট্রাম্পকে সতর্ক করে বলেন, পুতিনের সামনে দুর্বল হওয়া যাবে না। ওভাল অফিসে ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কির বাগবিতণ্ডার ঘটনার পর ইউরোপীয় নেতারা জেলেনস্কির পাশে দাঁড়ালেও, ন্যাটোর মহাসচিব তাকে পরামর্শ দিয়েছেন ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃ-স্থাপনের একটি উপায় খুঁজে বের করার। পরের দিন বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট বলেন, আমাদের সবাইকে সম্মান করতে হবে, ট্রাম্প ইউক্রেনের জন্য যা করেছেন, সেটারও মূল্যায়ন করতে হবে। SHARES আন্তর্জাতিক বিষয়: আলোচনারটেবিলেবৈঠকটি