‘ওজন কমেছে ১০ কেজি’, সরফরাজকে জাতীয় দলে ফেরাতে ডায়েটে গোটা পরিবার! প্রকাশিত: ৬:০৩ অপরাহ্ণ, মে ১৯, ২০২৫ ভারতের সম্ভাবনাময় ক্রিকেটারদের একজন ভাবা হয় সরফরাজ খানকে। যদিও মেদবহুল শরীরের জন্য কম কটু কথা শুনতে হয়নি। আধুনিক ক্রিকেটে ফিটনেস গুরুত্বপূর্ণ। সে হিসেবে যেন বড্ড বেমানান সরফরাজ। চারদিকে সমালোচনা দেখে সুনীল গাভাস্কার একবার বলেই ফেলেছিলেন, ওজন নয়, একজন ব্যাটারের পারফরম্যান্স দেখা উচিত নির্বাচকদের। ফিটনেস নিয়ে এবার সচেতন হয়েছেন সরফরাজ। তাকে সাহায্য করতে ডায়েট শুরু করেছেন পরিবারের বাকি সদস্যরাও। সুফলও পাচ্ছেন ভারতীয় এই ব্যাটার। মাত্র মাস দেড়েকে নিজেকে বদলে ফেলেছেন অনেকটাই। ১০ কেজি ওজন ঝরিয়ে ৮৬ থেকে এখন তিনি ৭৬ কেজি। শুধু ক্রিকেট নয়, যে কোনো খেলাতেই ফিটনেস গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের মতো দলে যেখানে ‘ইয়ো ইয়ো টেস্ট’ পাস না করলে প্রাথমিক স্কোয়াডেও জায়গা পাওয়া যায় না, সেখানে তো ফিটনেসের গুরুত্ব আরও বেশি। সেই কারণেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ১৫০ রান করেও ভারতের টেস্ট দলে ব্রাত্য হয়ে গিয়েছেন সরফরাজ। সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়া সফরে রিজার্ভ বেঞ্চেই থাকতে হয়েছিল। জায়গা হয়নি প্রথম একাদশে। কিন্তু সরফরাজ চান আবার ভারতীয় দলে ফিরতে। তিনি জানেন, নিজেকে না বদলালে সেই সুযোগ কম। তিনি জানেন, তার ব্যাটিংয়ে বিশেষ খামতি নেই। খামতি তার ফিটনেসে। টেস্ট ক্রিকেটে পাঁচ দিন খেলার ধকল, মাঠে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফিল্ডিং করার জন্য দরকার পেটানো চেহারা। যে কারণে হয়তো এমন অনেকে ভারতীয় দলে সুযোগ পাচ্ছেন, যাদের ব্যাটিং প্রতিভা তাঁর তুলনায় কম। কিন্তু তাঁদের নড়াচড়া অনেক ক্ষিপ্র। ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটের এই পরিচিত মুখ মুম্বাইয়ের হয়ে ধারাবাহিকভাবে বড় রান করেছেন। তার পরেও জাতীয় দলে জায়গা না পেয়ে এক সময় ‘বিদ্রোহ’ করেছিলেন। সরাসরি মুখ খুলেছিলেন বোর্ডের বিরুদ্ধে। অবশেষে গত বছর ইংল্যান্ড সিরিজে দলে জায়গা পান তিনি। চোখে জল নিয়ে ছেলের অভিষেকের সাক্ষী ছিলেন সরফরাজের বাবা নওশাদ। তিনি ঘরোয়া ক্রিকেটে কোচ হিসেবে পরিচিত। ছেলের সব লড়াইয়ের সঙ্গী তিনিও। এবার নওশাদ সঙ্গী হয়েছেন ছেলের নিজেকে বদলে ফেলার যুদ্ধেও। বস্তুত, সরফরাজের বাবা শুধু নন, গোটা পরিবার ওজন কমানোর যুদ্ধে নেমেছেন! সকলে মিলেই লড়াই জিততে চান তারা। ভারতীয় গণমাধ্যমকে সেই লড়াইয়ের বিবরণ জানিয়েছেন নওশাদ খান। লড়াইটা অবশ্য খুব একটা সহজ ছিল না। পছন্দের চিকেন ও মটন বিরিয়ানি ছাড়তে হয়েছে সরফরাজকে। এমনকি, ভাত-রুটিও বন্ধ। অর্থাৎ, তার খাদ্যতালিকায় কোনও কার্বোহাইড্রেট নেই। সরফরাজকে ফিট রাখতে খাদ্যাভ্যাস পুরোপুরি বদলে ফেলেছে গোটা পরিবার। ভারতীয় ক্রিকেটারের বাবা নওশাদের কথায়, ‘পরিবারের সকলে মিলেই ওজন কমানোর যুদ্ধে নেমেছি। ডায়েট পুরো বদলে ফেলেছি। ভাত, রুটি, চিনি বন্ধ। দেড় মাস ধরে ও সব খাইনি। তার বদলে সবজি খাচ্ছি বেশি করে। ব্রকোলি, গাজর, শশা, স্যালাদসহ বিভিন্ন সবজির দিকে মন দিয়েছি। চিকেন, ডিম সবকিছুই সেদ্ধ করে খাচ্ছি। আর খাচ্ছি গ্রিন টি এবং গ্রিন কফি।” শুধু সরফরাজ়ের ক্ষেত্রে নয়, তিনি নিজেও এই কড়া ডায়েটের সুফল পেয়েছেন। নওশাদ বললেন, ‘সরফরাজ় দেড় মাসে ১০ কেজি ওজন কমিয়েছে। আরও কমানোর চেষ্টা করছে। আমার ওজনও ১২ কেজি কমেছে। আমার হাঁটুতে সমস্যা আছে। আগে চিকিৎসক বলেছিলেন, হাঁটু বদলাতে হবে। কিন্তু ওজন কমিয়ে ফেলেছি বলে এখন আর তার প্রয়োজন নেই। আমার ছোট ছেলে মইনও ওজন কমিয়েছে।’ শুধু খাদ্যাভ্যাস নয়, দিনের গোটা রুটিনই বদলে ফেলেছেন বাবা-ছেলে। সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত নিজেদের তৈরি রুটিনও জানিয়েছেন নওশাদ। গত দেড় মাস ধরে তারা এই রুটিন মেনে চলছেন। নওশাদ বললেন, ‘ভোর সাড়ে ৫টায় বাড়ি থেকে বের হই। ১৫ কিলোমিটার দূরে ক্রস ময়দানে যাই। সেখানে প্রথমে ওয়ার্ম আপ করি। তার পর সরফরাজ কিছুক্ষণ দৌড়য়। দৌড়ের পর ফিল্ডিং অনুশীলন করে। তার পরে ব্যাট করে। সাড়ে ১০টা নাগাদ বাড়ি ফিরে প্রাতরাশ সেরে বিশ্রাম নিই।” সন্ধ্যায় মুম্বাই ক্রিকেট সংস্থার জিমে যান সরফরাজ ও নওশাদ। সপ্তাহে ছয়দিন। জিমে ঢোকার আগে সরফরাজ আধ ঘণ্টা করে দৌড়ান আর সাঁতার কাটেন। সেই সময়টা হনহন করে হাঁটেন নওশাদ। তার পরে জিম শুরু হয়। রাতে বাড়ি ফিরে নৈশভোজ সেরে ঘুম। জিম ও শারীরিক কসরতের পাশাপাশি নিজের ব্যাটিং নিয়েও বাড়তি পরিশ্রম করছেন সরফরাজ। শেষ পর্যন্ত রানই আসল। তাই সরফরাজের ব্যাটিং অনুশীলনে কোনও খামতি যাতে না হয়, সে দিকেও নজর রয়েছে তার। দিনে তিন বার ব্যাটিং অনুশীলন করেন সরফরাজ। নওশাদ বললেন, ‘সকালে ক্রস ময়দানে সরফরাজ লাল বলে ব্যাট করে। বাড়ি ফিরে প্রাতরাশের পর আবার ব্যাট করতে নামে। আমাদের বাড়িতেই পিচ আছে। সেখানে প্রতিদিন অন্তত ৫০০ বল খেলে। সামনে টেস্ট সিরিজ আছে বলে দ্বিতীয় দফার ব্যাটিং অনুশীলনও হয় লাল বলে। তারপর সন্ধ্যায় জিমের পর আবার ব্যাট করে। তখন সাদা বলে।’ বিরাট কোহলি টেস্ট থেকে অবসর নেওয়ায় ভারতের মিডল অর্ডারে একটা জায়গা কার্যত ফাঁকা। সেই চার নম্বর জায়গাটা নেওয়ার লড়াইয়ে রয়েছেন অনেকে। শ্রেয়াস আয়ার, লোকেশ রাহুলের পাশাপাশি ঘরোয়া ক্রিকেটে রান করা করুণ নায়ারও দলে ঢোকার চেষ্টা করছেন। সরফরাজ জানেন, তার জায়গা পাওয়া কঠিন। কিন্তু চেষ্টা করতে ক্ষতি কী? সেই লক্ষ্যেই নিজেকে বদলানো। ভারত ‘এ’ দলের হয়ে রান করে নির্বাচকদের নজরে পড়তে হবে তাকে। দ্বিতীয় বার সুযোগ পেলে যাতে ফিটনেস ‘অন্তরায়’ হয়ে না দাঁড়ায়। SHARES ক্রিকেট বিষয়: প্রাথমিকসদস্যরাওসুনীল