জীবন-জীবিকার লড়াই আরো কঠিন!

প্রকাশিত: ৪:৫৬ অপরাহ্ণ, মে ২২, ২০২৫

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতে কৃষক সোহরাব হোসেন (৩৫) ধান চাষ থেকে সরে আসেন। এই ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েন তিনি। তার নিজের কোনো জমি না থাকলেও জমি লিজ নিয়ে ধান চাষবাদ করতেন। ঘূর্ণিঝড়ের ধকল কাটিয়ে উঠে আবারো ধান আবাদের চেষ্টা করেন তিনি। লবণাক্ততার কারণে পুরো ক্ষেত পুড়ে গেছে। বারবার লোকসান গুনে অবশেষে সোহরাব রিকশা-ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছেন।

সোহরাব হোসেনের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর গ্রামে। এই গ্রামটির মত আরো অনেক গ্রাম আম্ফানে ক্ষতির মুখে পড়েছিল। সোহরাবের মত বহু কৃষক তাদের পেশা হারিয়েছেন। বহু ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসা থেকে ছিটকে পড়েছেন। জীবন-জীবিকার ধারাবাহিকতা ওলটপালট হয়ে গেছে অনেক পরিবারের। বহু পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকে এলাকা ছেড়ে শহরে চলে গেছেন। তাদেরই একজন আশাশুনির চাকলা গ্রামের ফারুক হোসেন। একই উপজেলার কুড়িকাহুনিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুস সাত্তার জমি বিক্রি করে খুলনা শহরে চলে এসেছেন। একই গ্রামের মাহবুব হোসেন এলাকা ছেড়ে নড়াইল জেলায় চলে যান। যশোরের কেশবপুরে গেছেন আইয়ুব আলী গাজী।

ভয়াল সেই দিনটি ছিল ২০২০ সালের ২০ মে। আম্ফান বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে আঘাত হানে। প্রায় দুই বছর ধরে ঘরবাড়ি, কৃষি জমি পানির নিচে ছিল। বহু মানুষ কয়েক মাস ধরে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করেছিলেন। সেই দিনগুলোর কথা মনে করে আজও শিউরে ওঠেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মানুষেরা।

শুধু সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলায় নয়, জেলার শ্যামনগর উপজেলায়ও একই গল্প পাওয়া যায়। খুলনা জেলার পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলায়ও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক দেখা গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা দীর্ঘ। শুধু ঘূর্ণিঝড় আম্ফান নয়, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে। ফলে এ অঞ্চলের ধনী কৃষকরা দিনমজুর হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করছে। একসময় নিজ জমির ধানে সংসার চললেও এখন তাদের পরিবার চরম সংকটে রয়েছে। তিনবেলা খাবার পাওয়া তাদের জন্য খুবই কঠিন।