নজর কাড়ছে ‘বিজয়নগরের লিচু’

প্রকাশিত: ১১:৩৪ পূর্বাহ্ণ, মে ২৪, ২০২৫

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার একটি গ্রাম বিষ্ণুপুর। গ্রামের প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় রয়েছে লিচু গাছ। গ্রামটিতে ছোট-বড় মিলিয়ে অর্ধশতাধিক বাগান এবং প্রায় দেড় হাজারের অধিক গাছ রয়েছে। এ বছর ওই গ্রামে লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। লিচুর বাগান দেখতে আসছেন দর্শনার্থীরা। 

লিচুর মৌসুম এলেই বিষ্ণুপুর গ্রামে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন পাইকার ও ক্রেতারা। প্রতি ১০০ লিচু বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৪৫০ টাকায়।

শুধু বিষ্ণুপুর নয়, উপজেলার পাহাড়পুর, সিঙ্গারবিল,  হরষপুর, পত্তন, চম্পকনগর ইউনিয়নে লিচুর আবাদ হচ্ছে। এর মধ্যে পাহাড়পুর, বিষ্ণুপুর ও সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে লিচুগাছ ও বাগান।

লিচু চাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, বিজয়নগরে সাধারণত তিন জাতের লিচুর ফলন ভালো হয়। এগুলো হলো পাটনায় বা দেশি লিচু, বোম্বাই ও চায়না-৩। এ ছাড়াও বেদেনা, চায়না-১ ও চায়না-২ জাতের লিচু চাষ হয় এখানে। সবার আগে বাজারে আসে পাটনায় বা দেশি লিচু। বোম্বাই ও চায়না-৩ লিচু কিছুদিন পরে পাকলেও বাজারে এর কদর বেশি। বিক্রিও হয় বেশি দামে। চায়না লিচু দেশি লিচুর মতো দেখতে হলেও আকারে ছোট হয়। খেতে সুস্বাদু।

মাসুদ মিয়া দীর্ঘ ২০ বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে ২০১০ সালে দেশে ফিরে দুই বিঘা জমিতে শুরু করেন পাটনায় লিচু চাষ। প্রবাস জীবন ছেড়ে দেশের মাটিতে কিছু করার ইচ্ছে থেকেই সাফল্যের শুরু। মাসুদ মিয়ার এই বাগানটিতে ৫৫টি গাছ রয়েছে। এই গাছগুলো পরিচর্যার জন্য তিনজন কর্মচারী রাখা হয়েছে। শুধু কর্মচারীই নয়, মাসুদ মিয়ার পরিবারের লোকজনও এই লিচু গাছগুলোর পরিচর্যায় লিপ্ত থাকে।

মাসুদ মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিবছর গড়ে ১০ লাখ টাকার লিচু বিক্রির আশা থাকে। তবে দীর্ঘ ১০ বছরের লিচু চাষে গত বছর কিছুটা মন্দ দেখা দিয়েছিল। অতিরিক্ত ঝড় বৃষ্টির কারণে মাত্র ২ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করতে পেরেছি। তবে বর্তমান মৌসুমে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার লিচু বিক্রি হবে।

সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, বিজয়নগরের লিচু বিজয়নগরবাসীর জন্য একটি পরিচয়। লিচুগুলো সঠিকভাবে চাষের জন্য একটি ইনস্টিটিউট খোলা দরকার। যাতে এখানকার চাষিরা লিচুগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে পারেন।

পাহাড়পুর ইউনিয়নের লিচু চাষি মো. দুলাল মিয়া জানান, তার ছয়টি লিচু বাগান রয়েছে। বাগানে ১৮৫টি গাছ রয়েছে। এ বছর ৮৫টি গাছে লিচু এসেছে।  তবে প্রথম দিকে  আবহাওয়া যদি ভালো থাকতো তাহলে ফলন আরও ভালো হতো। দাম ভালো পাওয়ার আমরা ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছি।

এদিকে লিচুর মৌসুমে বিজয়নগর উপজেলা যেন পর্যটন অঞ্চলে পরিণত হয়। লিচুর বাগানগুলোতে দর্শনার্থীরা ভিড় জামায়। জেলার দূর-দূরান্ত থেকে বিজয়নগরে মানুষ আসে লিচু বাগান দেখতে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঘুরতে আসা একটি পরিবার জানায়, বিজয়নগরের লিচুর বেশ খ্যাতি রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই বিজয়নগরের লিচু বাগানের ছবি পোস্ট করে। সেজন্য লিচু বাগানে ঘুরতে আসা। সকলেই বেশ আনন্দ উপভোগ করছে।

আশুগঞ্জ থেকে লিচু বাগানে ঘুরতে আসা স্কুলছাত্রী মাইশা জানান, বিজয়নগরের লিচু বাগান এখন ভাইরাল। নিজ জেলার একটি ভাইরাল জায়গায় না আসতে পারলে আফসোস থাকতো। এখানে আসতে পেরে অনেক ভালো লাগছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. জিয়াউল ইসলাম জানান, বর্তমানে উপজেলায় প্রায় ৬৩০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে ৪৪০ হেক্টর জমিতে ফল দিচ্ছে। এবার প্রায় ১৭০০ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদিত হতে পারে, যার সম্ভাব্য বাজার মূল্য ২৫ কোটি টাকারও বেশি।

তিনি বলেন, লিচু এখন আমাদের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠছে। কৃষকের মুখে হাসি ফিরেছে এই ফলের সুবাদে। শুধু লিচুই নয়, বিজয়নগরের জমিতে এখন সব ধরনের ফল ও সবজি আবাদ হচ্ছে। প্রতিটি মৌসুমেই নতুন নতুন ফসল আসছে।