যেসব ফল ফ্রিজারে রাখাই ঠিক না প্রকাশিত: ৪:১৫ অপরাহ্ণ, মে ২৬, ২০২৫ অনেকেই বাজার থেকে ফল কিনে এনে সোজা ফ্রিজে রেখে দেন। ভাবেন এতে ফল তাজা থাকবে, নষ্ট হবে না। তবে সব ফলের ক্ষেত্রেই যে এই নিয়ম কাজ করে না, তা রিয়েল সিম্পল ডটকম-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে ব্যাখ্যা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক রন্ধনশিল্পী ও পুষ্টিবিদরা। বিশেষ করে ‘ক্লাইম্যাকটারিক’ ধরনের কিছু ফল। যাকে বাংলাতে বলে পরিপক্বতাজনিত পর্যায়ে পৌঁছানো ফল। অর্থাৎ যেসব ফল গাছ থেকে তোলার পরও কিছুদিন ধরে পাকে বা আরও পরিপক্ব হয়। এ ধরনের ফলগুলোর মধ্যে গাছ থেকে তোলার পরও শ্বাসক্রিয়া ও ‘এথিলিন’ গ্যাস নিঃসরণের কারণে পাক ধরার প্রক্রিয়া চালু থাকে। ফলস্বরূপ, ফ্রিজে রাখলে এই প্রক্রিয়াটা থেমে যায় বা ব্যাহত হয়। যে কারণে ফলের স্বাদ, গন্ধ ও গঠন নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ‘ক্লাইম্যাকটারিক’ ফল বলতে যা বোঝায় এই ধরনের ফল গাছ থেকে তোলার পরেও আরও কিছুদিন নিজের মধ্যে রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে পরিপক্ব হয়। ফ্রিজের ঠাণ্ডা আবহাওয়া সেই প্রক্রিয়াকে থামিয়ে দেয়। যে কারণে ফলের স্বাভাবিক মিষ্টি-স্বাদ, গন্ধ ও রসালভাব কমে যায়। কখনও কখনও গঠন হয়ে পড়ে মোলায়েম বা রাবারের মতো, যা খেতে ভালো লাগে না। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক শেফ ও পুষ্টিবিদ জেন লা রোকা ব্যাখ্যা করেছেন কোন কোন ফল ফ্রিজে রাখা উচিত নয় এবং কেন। কলা জেন লা রোকা বলছেন, “ঠাণ্ডা তাপমাত্রা কলার পাকতে থাকা প্রক্রিয়াকে হঠাৎ থামিয়ে দেয়। ফলে গঠন হয়ে পড়ে রাবারের মতো এবং স্বাদ ফ্যাকাশে হয়ে যায়।” এজন্য কলা সবসময় ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখা উচিত। বাজারে যেসব কলা ঝুলিয়ে রাখার স্ট্যান্ড পাওয়া যায়, সেগুলোর উদ্দেশ্যই হল ঘরের তাপমাত্রায় রাখার সুবিধা। পিচ ফল পিচ, পাম ও নেকটারিন— এই তিন ফলই ‘স্টোন ফ্রুটস’ বা আঁশযুক্ত ফলের অন্তর্ভুক্ত। লা রোকা বলেন, “এই ফলগুলোকে রসালো ও সুবাসিত অবস্থায় পৌঁছাতে হলে ঘরের তাপমাত্রায় পাকতে দিতে হয়। ফ্রিজে দিলে এদের গঠন হয়ে পড়ে শুষ্ক ও নিস্তেজ। আর স্বাদও অনেকটাই ম্লান হয়ে যায়।” পাম এই ফলও পিচের মতোই আচরণ করে। ঘরে এনে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে এবং ঝুড়িতে রেখে দিতে হবে যতক্ষণ না এটি নরম হয়। তবেই মিলবে সঠিক স্বাদ। নেকটারিন্স নেকটারিন, যাকে পিচের জাত ভাই বলা হয়, এই ফলও ফ্রিজে রাখার দরকার নেই। ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখলেই এটি ভালোভাবে পাকে। তবে কেটে যদি সালাদে ব্যবহার করা হয়, তাহলে অবশ্যই ফ্রিজে বায়ুরোধী কন্টেইনারে রেখে দুতিন দিনের মধ্যে খেয়ে ফেলতে হবে। অ্যাভোকাডো সুপারশপে গিয়ে উপযুক্ত অ্যাভোকাডো খুঁজে পাওয়া যেন একটি যুদ্ধ জেতার মতো। পুষ্টিবিদ টেইলর ম্যাকলেল্যান্ড নিউম্যান বলেন, “যদি অ্যাভোকাডো পুরোপুরি না পাকে, তাহলে সেটা ঘরের তাপমাত্রাতেই রাখতে হবে। একবার নরম হয়ে গেলে তা সরাসরি খাওয়ার জন্য আদর্শ।” তবে যদি অ্যাভোকাডো অতিরিক্ত নরম হয়ে যায়, তখন ফ্রিজে রাখা যেতে পারে দুয়েক দিন পর্যন্ত। যাতে এটি আরও কিছুটা সময় খাওয়ার উপযোগী থাকে। ট্রপিকাল ফল আনারস, আম, কিউই— এই ধরনের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফলগুলো ঘরের তাপমাত্রাতেই ভালো থাকে। নিউম্যান বলেন, “এই ফলগুলো ফ্রিজে রাখলে তাদের পাকাধরা প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটে। যে কারণে ফল হয়ে পড়ে পানসা এবং রসহীন। তবে একবার কেটে ফেললে অবশ্যই ফ্রিজে রাখতে হবে। কাটা ফল যেন বায়ুরোধী কন্টেইনারে থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে।” টমেটো অবাক লাগলেও- হ্যাঁ, টমেটো আসলে একটি ফল। যদিও সবজি হিসেবে পরিচিত। নিউম্যান বলেন, “ফ্রিজে রাখলে টমেটোর চামড়া শক্ত হয়ে যায়। আর রসালো গন্ধ হারিয়ে যায়।” জেন লা রোকাও বলেন, “ঠাণ্ডা বাতাস টমেটোর গঠন নষ্ট করে দেয়। হয়ে পড়ে দানাদার ও পানসা। বিশেষ করে সালাদের মতো খাবারে টমেটোর স্বাদে টাটকা ফ্লেইভার বা স্বাদ গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য এই ফল ঘরের তাপমাত্রায় রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ।” কখন ফ্রিজে রাখা যায়? ওপরের ফলগুলো পুরোপুরি পেকে গেলে বা কাটার পরে চাইলে ফ্রিজে রাখা যেতে পারে দুয়েক দিনের জন্য। তবে কখনই দীর্ঘমেয়াদী সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত নয়। SHARES লাইফস্টাইল বিষয়: তাজাপ্রক্রিয়াফ্রিজে