সাইকেলে চড়ে বিশ্বভ্রমণ বাবা-ছেলের প্রকাশিত: ৫:৩৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৬, ২০২৫ পৃথিবীজোড়া অভিযানে বাবা–ছেলে চলতি বছরের মার্চ মাসের এক সকালে ইংল্যান্ডের পূর্বাঞ্চল থেকে যাত্রা শুরু করেন জর্জ কোলার ও তাঁর ছেলে জশ। সাধারণত বাবা-ছেলে একসঙ্গে সপ্তাহান্তে কোথাও ঘুরতে যাওয়া বা পারিবারিক আড্ডায় সময় কাটানোই স্বাভাবিক। কিন্তু এই বাবা-ছেলের গল্প সম্পূর্ণ ভিন্ন—তারা সাইকেল চালিয়ে ঘুরছেন পুরো পৃথিবী। ইতিমধ্যে তারা চারটি মহাদেশ অতিক্রম করেছেন। এই যাত্রায় আছে শারীরিক পরিশ্রম, মানসিক চাপ, ভিসার জটিলতা আর পরিবারের কাছ থেকে দীর্ঘদিন দূরে থাকার কষ্ট। তবু দুই চাকার এই রোমাঞ্চকর অভিযান থেমে নেই। ইউরোপ পেরিয়ে তারা পৌঁছেছেন চীনে, বর্তমানে অবস্থান করছেন থাইল্যান্ডে। সামনে এখনও বাকি আরও দীর্ঘ পথ। যেভাবে এলো এমন পরিকল্পনা ২২ বছর বয়সী জশ কোলারের পৃথিবী ঘোরার স্বপ্ন জন্ম নেয় স্কুলজীবনেই। একদিন তাদের ক্লাসে অতিথি হয়ে আসেন উত্তর আয়ারল্যান্ডের অভিযাত্রী লিয়ন ম্যাককারন। তাঁর ভ্রমণকাহিনি শুনে জশের মনে জেগে ওঠে একদিন বিশ্বভ্রমণে বের হওয়ার ইচ্ছে। ২০২২ সালে বাবা-ছেলে মিলে সাইকেলে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করেন। সেই অভিজ্ঞতা জশকে আরও সাহসী করে তোলে। প্রথমে তাঁর পরিকল্পনা ছিল সিঙ্গাপুর থেকে সাইকেল চালিয়ে ইংল্যান্ডে ফেরা। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই ভাবনা বদলে যায়—জশের মনে হয়, যেহেতু এমন দূর যাত্রায় বের হবই, তবে পুরো পৃথিবীটাই ঘুরে আসা যাক। বাবা জর্জ এ প্রসঙ্গে হাসতে হাসতে বলেন, ‘আমরা দুজনই নতুন সাইকেলচালক। কিন্তু জশ যখন বিশ্বভ্রমণের কথা বলল, আমি সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেলাম।’ তাদের লক্ষ্য শুধু ভ্রমণ নয়, বরং বিশ্বরেকর্ড স্থাপন করা। তারা চেষ্টা করছেন তিনটি রেকর্ড ভাঙতে— – বাবা-ছেলের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ সাইকেল ভ্রমণ– বাবা-ছেলের দ্রুততম বিশ্বভ্রমণ– বাবা-ছেলের সবচেয়ে বেশি দেশ ভ্রমণ গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের নিয়ম অনুযায়ী, এমন ভ্রমণে অন্তত দুটি সম্পূর্ণ বিপরীত ভৌগোলিক বিন্দু অতিক্রম করতে হয়—যাতে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে সোজা রেখা টানা যায়। এই শর্ত পূরণে জশ ও জর্জ বেছে নিয়েছেন নিউজিল্যান্ড ও স্পেনকে। সাইকেল ভ্রমণের পাশাপাশি এই অভিযাত্রা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। জশের ইউটিউব চ্যানেলে লাখো মানুষ অনুসরণ করছে তাদের ভ্রমণযাত্রা। টিকটক ও ইনস্টাগ্রামেও দ্রুত বাড়ছে তাদের ভক্তসংখ্যা। তবে জর্জের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ নতুন। প্রতিটি দিনই ভ্রমণভরা ক্লান্তি ও নানা চ্যালেঞ্জে। কখনও কখনও ছোটখাটো তর্ক-বিতর্কও হয়, কিন্তু সেগুলো বেশিদিন স্থায়ী হয় না। দিনের শেষে তারা উপলব্ধি করে—এই যাত্রার প্রতিটি মুহূর্ত, দুর্গম পথ, ক্ষুধার কষ্ট, আর মানুষের আন্তরিকতা—সবই তাদের জীবনকে করেছে আরও সমৃদ্ধ। এই ভ্রমণ বাবা-ছেলের সম্পর্ককে করেছে আরও গভীর ও দৃঢ়। তাদের শিখিয়েছে ধৈর্য, সাহস এবং পারস্পরিক নির্ভরতার মূল্য। জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি তাদের কাছে একে অপরের পাশে থাকা। SHARES আন্তর্জাতিক বিষয়: