জেন-জিদের বিক্ষোভ বিশ্বজুড়ে, পাল্লাচ্ছে স্বৈরাচাররা প্রকাশিত: ৫:০২ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৬, ২০২৫ এই প্রজন্মই প্রথম, যাদের শৈশব ও বেড়ে ওঠা সম্পূর্ণভাবে ইন্টারনেট ও ডিজিটাল প্রযুক্তির পরিবেশে। উন্নত হোক বা উন্নয়নশীল—সব সমাজেই ‘জেনারেশন জেড’ বা ‘জেন-জি’ প্রচলিত রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামোকে নতুনভাবে নাড়িয়ে দিচ্ছে। ডিজিটাল যুগে জন্ম নেওয়া এই তরুণ প্রজন্ম এখন বিশ্বের নানা প্রান্তে নেতৃত্ব দিচ্ছে প্রতিবাদ ও আন্দোলনের। সামাজিক বৈষম্য, দুর্নীতি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতের অব্যবস্থাপনা এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা—এই সব কারণেই তাদের ক্ষোভ ক্রমে শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিস্তৃত হচ্ছে। নিজেদের ভবিষ্যৎ ও অধিকার রক্ষার দাবিতে মরক্কো থেকে শুরু করে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত তরুণেরা রাস্তায় নামছে। স্বৈরাচারী সরকারগুলোও এই তরঙ্গের ভয় পাচ্ছে; একের পর এক ক্ষমতার আসন কাঁপিয়ে দিচ্ছে জেন-জিরা। মরক্কোর বিভিন্ন শহরে রাতভর চলছে বিক্ষোভ। ‘জেন-জি ২১২’ নামে সংগঠিত হয়ে ছাত্রছাত্রী ও বেকার তরুণেরা নেমেছেন রাস্তায়। তাদের মূল দাবি—স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক ন্যায়বিচার ব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কার। তাদের অভিযোগ, সরকার ২০৩০ বিশ্বকাপ আয়োজনের অবকাঠামো নির্মাণে বিপুল অর্থ ব্যয় করছে, অথচ হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত সেবা নেই, গ্রামীণ মানুষ স্বাস্থ্যসুবিধা থেকে বঞ্চিত এবং শিক্ষাব্যবস্থা মারাত্মক সংকটে। দেশটিতে যুব বেকারত্বের হার ৩৬ শতাংশ; প্রতি পাঁচজন বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকের মধ্যে একজনও চাকরি পাচ্ছেন না। এই বিক্ষোভের সূচনা হয় আগাদির শহরে, যেখানে অস্ত্রোপচারের পর পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পেয়ে কয়েকজন অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যু ঘটে। ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়ার পর দেশজুড়ে ক্ষোভে ফেটে পড়ে তরুণেরা। প্রধানমন্ত্রী আজিজ আখান্নোচ আলোচনার ইঙ্গিত দিলেও ‘জেন-জি ২১২’-এর আন্দোলনকারীরা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে অনড়। আফ্রিকার মাদাগাস্কারেও পানি সংকট ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের বিরুদ্ধে তরুণদের বিক্ষোভ তীব্র আকার নিয়েছে। সরকারের ব্যর্থতার প্রতিবাদে শুরু হওয়া এই আন্দোলন এখন প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনার পদত্যাগ দাবিতে রূপ নিয়েছে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত অন্তত ২২ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন, যদিও সরকার এ পরিসংখ্যান নিয়ে দ্বিমত পোষণ করছে। দক্ষিণ আমেরিকার পেরুতেও তরুণদের আন্দোলন জোরদার হয়েছে। ২০ সেপ্টেম্বর পেনশন আইনের সংস্কারের প্রতিবাদে শুরু হওয়া বিক্ষোভ পরে দুর্নীতি ও অপরাধবিরোধী বৃহত্তর আন্দোলনে পরিণত হয়। নেপালেও একই দৃশ্য দেখা গেছে। ইন্দোনেশিয়ার বিক্ষোভের কয়েক দিনের মধ্যেই সেখানে তরুণেরা রাস্তায় নেমে আসে। গত সেপ্টেম্বর সামাজিক মাধ্যমের ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই আন্দোলন সরকারবিরোধী রূপ নেয়। এতে অন্তত ২২ জন নিহত ও শতাধিক আহত হন। রাজধানী কাঠমান্ডুর সরকারি ভবনগুলোতে আগুন দেওয়া হয় এবং শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হয়। এই ঘটনার প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও তরুণ সমাজে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের অধ্যাপক বার্ট কামার্টসের মতে, এই প্রজন্মের বিশ্বাস—বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় তাদের স্বার্থ যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয় না। তারা গণতন্ত্রে আস্থা রাখলেও প্রচলিত কাঠামো তাদের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ। ইন্টারনেট ও সামাজিক মাধ্যম এখন এই তরুণদের প্রধান অস্ত্র। তারা শুধু অনলাইনে নয়, সরাসরি রাস্তায় নেমেও পরিবর্তনের ডাক দিচ্ছে। এক দেশ থেকে আরেক দেশে, এক পর্দা থেকে জনসমাবেশে—জেন-জির এই আন্দোলনের তরঙ্গ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বজুড়ে। (তথ্যসূত্র: ব্লুমবার্গ, সিএনএন) SHARES আন্তর্জাতিক বিষয়: বিশ্বজুড়ে জেন-জিদের বিক্ষোভ
এই প্রজন্মই প্রথম, যাদের শৈশব ও বেড়ে ওঠা সম্পূর্ণভাবে ইন্টারনেট ও ডিজিটাল প্রযুক্তির পরিবেশে। উন্নত হোক বা উন্নয়নশীল—সব সমাজেই ‘জেনারেশন জেড’ বা ‘জেন-জি’ প্রচলিত রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামোকে নতুনভাবে নাড়িয়ে দিচ্ছে। ডিজিটাল যুগে জন্ম নেওয়া এই তরুণ প্রজন্ম এখন বিশ্বের নানা প্রান্তে নেতৃত্ব দিচ্ছে প্রতিবাদ ও আন্দোলনের। সামাজিক বৈষম্য, দুর্নীতি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতের অব্যবস্থাপনা এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা—এই সব কারণেই তাদের ক্ষোভ ক্রমে শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিস্তৃত হচ্ছে। নিজেদের ভবিষ্যৎ ও অধিকার রক্ষার দাবিতে মরক্কো থেকে শুরু করে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত তরুণেরা রাস্তায় নামছে। স্বৈরাচারী সরকারগুলোও এই তরঙ্গের ভয় পাচ্ছে; একের পর এক ক্ষমতার আসন কাঁপিয়ে দিচ্ছে জেন-জিরা। মরক্কোর বিভিন্ন শহরে রাতভর চলছে বিক্ষোভ। ‘জেন-জি ২১২’ নামে সংগঠিত হয়ে ছাত্রছাত্রী ও বেকার তরুণেরা নেমেছেন রাস্তায়। তাদের মূল দাবি—স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক ন্যায়বিচার ব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কার। তাদের অভিযোগ, সরকার ২০৩০ বিশ্বকাপ আয়োজনের অবকাঠামো নির্মাণে বিপুল অর্থ ব্যয় করছে, অথচ হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত সেবা নেই, গ্রামীণ মানুষ স্বাস্থ্যসুবিধা থেকে বঞ্চিত এবং শিক্ষাব্যবস্থা মারাত্মক সংকটে। দেশটিতে যুব বেকারত্বের হার ৩৬ শতাংশ; প্রতি পাঁচজন বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকের মধ্যে একজনও চাকরি পাচ্ছেন না। এই বিক্ষোভের সূচনা হয় আগাদির শহরে, যেখানে অস্ত্রোপচারের পর পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পেয়ে কয়েকজন অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যু ঘটে। ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়ার পর দেশজুড়ে ক্ষোভে ফেটে পড়ে তরুণেরা। প্রধানমন্ত্রী আজিজ আখান্নোচ আলোচনার ইঙ্গিত দিলেও ‘জেন-জি ২১২’-এর আন্দোলনকারীরা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে অনড়। আফ্রিকার মাদাগাস্কারেও পানি সংকট ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের বিরুদ্ধে তরুণদের বিক্ষোভ তীব্র আকার নিয়েছে। সরকারের ব্যর্থতার প্রতিবাদে শুরু হওয়া এই আন্দোলন এখন প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনার পদত্যাগ দাবিতে রূপ নিয়েছে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত অন্তত ২২ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন, যদিও সরকার এ পরিসংখ্যান নিয়ে দ্বিমত পোষণ করছে। দক্ষিণ আমেরিকার পেরুতেও তরুণদের আন্দোলন জোরদার হয়েছে। ২০ সেপ্টেম্বর পেনশন আইনের সংস্কারের প্রতিবাদে শুরু হওয়া বিক্ষোভ পরে দুর্নীতি ও অপরাধবিরোধী বৃহত্তর আন্দোলনে পরিণত হয়। নেপালেও একই দৃশ্য দেখা গেছে। ইন্দোনেশিয়ার বিক্ষোভের কয়েক দিনের মধ্যেই সেখানে তরুণেরা রাস্তায় নেমে আসে। গত সেপ্টেম্বর সামাজিক মাধ্যমের ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই আন্দোলন সরকারবিরোধী রূপ নেয়। এতে অন্তত ২২ জন নিহত ও শতাধিক আহত হন। রাজধানী কাঠমান্ডুর সরকারি ভবনগুলোতে আগুন দেওয়া হয় এবং শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হয়। এই ঘটনার প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও তরুণ সমাজে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের অধ্যাপক বার্ট কামার্টসের মতে, এই প্রজন্মের বিশ্বাস—বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় তাদের স্বার্থ যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয় না। তারা গণতন্ত্রে আস্থা রাখলেও প্রচলিত কাঠামো তাদের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ। ইন্টারনেট ও সামাজিক মাধ্যম এখন এই তরুণদের প্রধান অস্ত্র। তারা শুধু অনলাইনে নয়, সরাসরি রাস্তায় নেমেও পরিবর্তনের ডাক দিচ্ছে। এক দেশ থেকে আরেক দেশে, এক পর্দা থেকে জনসমাবেশে—জেন-জির এই আন্দোলনের তরঙ্গ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বজুড়ে। (তথ্যসূত্র: ব্লুমবার্গ, সিএনএন)