প্রাক যুদ্ধ যুগ শুরু, প্রস্তুত নয় ইউরোপ—টাস্কের সতর্কবার্তা প্রকাশিত: ৩:৩০ অপরাহ্ণ, মার্চ ৩০, ২০২৪ পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক সতর্ক করে বলেছেন, প্রাক-যুদ্ধ যুগ পার করছে ইউরোপ। আসন্ন যুদ্ধে রুশ হুমকি মোকাবিলায় ইউরোপকে পুরোপুরি প্রস্তুত হতে হলে আরও অনেক দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। জার্মান সংবাদপত্র ডাই ওয়েল্টের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড টাস্ক বলেন, ‘যুদ্ধ আর অতীতের কোনো ধারণা নয়। এটি বাস্তব, এবং এটি দুই বছর আগে শুরু হয়েছে। এই মুহূর্তে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো— আক্ষরিক অর্থে যে কোনো কিছুই সম্ভব। আমরা ১৯৪৫ সালের পর কখনও এমন পরিস্থিতি দেখিনি।’ তিনি বলেন, ‘আমি জানি এটা বিধ্বংসী শোনাচ্ছে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে। কিন্তু আমাদের এই বাস্তবতায় অভ্যস্ত হতে হবে। একটি নতুন যুগ শুরু হয়েছে: প্রাক-যুদ্ধ যুগ। আমি অতিরঞ্জিত করছি না; এটি প্রতিদিন পরিষ্কার হচ্ছে।’ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন চালায় রাশিয়া। এর পর থেকে ইউরোপের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতারা ক্রমবর্ধমানভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন। তাদের আশঙ্কা, এই যুদ্ধ ইউক্রেন ছাড়িয়ে ইউরোপের অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। যদিও কোনো ন্যাটো দেশে আক্রমণের ইচ্ছা নেই বলে বারবার দাবি করে আসছে রাশিয়া। স্নায়ুযুদ্ধের পর কয়েক দশক ইউরোপের দেশগুলো সামরিক বাজেট ব্যাপক মাত্রায় হ্রাস করেছিল। কিন্তু স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী ভূ-রাজনৈতিক যে শৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল তা উপেক্ষা করে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু করে রাশিয়া। তাই এখন আবার এসব দেশ প্রতিরক্ষা খাতকে গুরুত্ব দিতে বাধ্য হচ্ছে। সুইডেন এবং ফিনল্যান্ড সম্প্রতি ন্যাটোতে যোগ দিয়েছে। এই বিষয়টি দুই বছর আগেও স্ক্যান্ডিনেভিয়ার দুই বিখ্যাত নিরপেক্ষ দেশের জন্য কল্পনাতীত ব্যাপার ছিল। বাল্টিক অঞ্চলে এস্তোনিয়া এবং লিথুয়ানিয়া তাদের প্রতিরক্ষা বাজেট ন্যাটোর বেঁধে দেওয়া জিডিপির ২ শতাংশ ন্যূনতম প্রতিশ্রুতির চেয়ে অনেক বেশি বাড়িয়েছে। ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী দেশ মলদোভা দীর্ঘদিন ধরে রুশ হস্তক্ষেপের আশঙ্কা করে আসছিল। তারা এবার ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেওয়া ইচ্ছা ব্যক্ত করেছে। ইউরোপীয় সমস্যা মোকাবিলায় নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার জন্য ১৯৯১ সালে ফ্রান্স, জার্মানি এবং পোল্যান্ড মিলে একটি প্লাটফর্ম তৈরি করেছিল। এই প্লাটফর্ম ওয়েমার ট্রায়াঙ্গেল নামে পরিচিত। এই তিন দেশ এবার রুশ আগ্রাসন থেকে বাঁচতে নিজেকে পুনরায় সুসজ্জিত করার জন্য মহাদেশের প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিচ্ছে। গত এক দশক ধরে পোল্যান্ডের ক্ষমতায় ছিল ল অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি। দলটির সরকারের বিরুদ্ধে কর্তৃত্ববাদীতার অভিযোগ আছে ইউরোপীয় নেতাদের। ফলে গত এক দশকে পোল্যান্ড ইউরোপীয় মূলধারা থেকে অনেকটা সরে গেছে। কিন্তু গত নির্বাচনে পোল্যান্ডের ক্ষমতায় আসেন ইউরোপপন্থী নেতা ডোনাল্ড টাস্ক। তিনি পোল্যান্ডকে আবার ইউরোপীয় মূলধারায় ফেরানোর চেষ্টা করছেন। রাশিয়া ও জার্মানির মাঝখানে পোল্যান্ডের অবস্থান। ফলে দেশটি ভূরাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে দীর্ঘদিন থেকে শক্তিশালী প্রতিরক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন পোল্যান্ড। এ বছর পোল্যান্ডের সামরিক বাজেট ছিল জিডিপির ৪ শতাংশ, যা ন্যাটোর নির্দেশিকার চেয়ে দ্বিগুণ। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের পর পালিয়ে আসা কয়েক লাখ ইউক্রেনীয়কেও আশ্রয় দিয়েছে পোল্যান্ড। গত সপ্তাহে ইউক্রেন লক্ষ্য করে রাশিয়ার ছুড়া একটি ক্রুজ মিসাইল পোল্যান্ডের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে। গত দুই বছরে অবশ্য এমন ঘটনা অসংখ্যবার ঘটেছে। কিন্তু পোল্যান্ড এবার এ ঘটনার জন্য রাশিয়ার কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে। SHARES আন্তর্জাতিক বিষয়: টাস্কযুদ্ধ