গোল রোমাঞ্চে মেতেছে প্রিমিয়ার লিগ প্রকাশিত: ৯:৫৫ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১, ২০২৪ ক্রীড়াঙ্গনে ফুটবল ভক্তদের কাছে প্রিমিয়ার লিগ যেন দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ। কারণ পৃথিবীতে যত যাই কাজ থাকুক রাতে খেলা আছে মানেই তা জাকজমকপূর্ণ। আর তাইতো বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ঘরোয়া ক্রীড়া আসর ভাবা হয় এই ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগকে। প্রিমিয়ার লিগের এত বেশি জনপ্রিয়তার অবশ্য ভিন্ন একটি কারণও রয়েছে। সেটি হচ্ছে গোলের বন্যা। প্রতিপক্ষের জালে গোল দেওয়াটা যেমন আরেক প্রতিপক্ষের জন্য চ্যালেঞ্জের, ঠিক তেমনই দর্শকদের জন্য রোমাঞ্চকর। গোলের এই খেলায় একটি গোলের মাধ্যমে যেমন একটি দলের ভাগ্য নির্ধারণ হয় তেমনই এক একটি খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ারে বড় ভূমিকা রাখে। সেই ধারাবাহিকতায় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ যেন এখন গোল উৎসবে মেতেছে। দলগুলো ম্যাচের পর ম্যাচে গোল করে যাচ্ছে। সেই সাথে জনপ্রিয় এই ক্রীড়া আসর এবার ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি গোলের নতুন রেকর্ডই গড়েছে। দুর্দান্ত ফিনিশিং, দলের খেলোয়াড়দের নৈপূণ্যতা- সবমিলিয়ে প্রিমিয়ার লিগে গোলের উচ্চ হার রোমাঞ্চ ফিরিয়ে আনার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাত্রাও বদলে দিয়েছে। প্রিমিয়ার লিগে মৌসুমপ্রতি গোলসংখ্যার দিকে তাকালে দেখা যাবে, ২০২২-২৩ মৌসুমে ম্যাচপ্রতি গোল হয়েছিল গড়ে ২.৮৫টি। ২০২১-২২ মৌসুমে ছিল ২.৮২টি। তবে চলতি ২০২৩-২৪ মৌসুমে গোলের এ সংখ্যা সব হিসাব-নিকাশ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত মাঠে গড়ানো ২৮৩ ম্যাচে গোল হয়েছে ৯১৭টি; ম্যাচপ্রতি গড়ে ৩.২৪টি (প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসে সর্বোচ্চ), যা আগের মৌসুমগুলোর চেয়ে তো বটেই, ইংলিশ ফুটবলের সর্বোচ্চ স্তর হিসাব করলেও ১৯৬৪-৬৫ মৌসুমের (৩.৩৪) পর সবচেয়ে বেশি। মৌসুমে বাকি সময় যদি ম্যাচপ্রতি গড়ে ৩.২৪টি গোল হতে থাকে, তাহলে মৌসুম শেষে গোলসংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ১২৩১-এ, যা কিনা ২০২২-২৩ মৌসুমের চেয়ে ১৪৭টি বেশি। গত মৌসুমে গোল হয়েছিলে ১০৮৪টি। গত মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ ম্যাচে ৫ বা এর বেশি গোল হয়েছিল ১৬.৪ শতাংশ ম্যাচে, যা কিনা আগের ১০ মৌসুমে গড়ে ১৪.২ শতাংশে হওয়া গোলের চেয়ে বেশি। তবে চলতি মৌসুমে ২১.৬ শতাংশ ম্যাচে গড়ে ৫ বা এর বেশি করে গোল হয়েছে। পরিসংখ্যানের পার্থক্যই বলে দিচ্ছে, ম্যাচপ্রতি গোলসংখ্যা কতটা বেড়েছে। পয়েন্ট তালিকার নিচের দিকে থাকা দলগুলোর গোল খাওয়া এ সংখ্যা বাড়ানোয় বড় ভূমিকা রেখেছে। গত মৌসুমে তলানির ছয় দল গোল হজম করেছিল ৪১৫টি। এ মৌসুমে এখনই সেটা বেড়ে হয়েছে ৩৪১। সামনের ম্যাচগুলোতে এ সংখ্যা নিশ্চিতভাবে আরও অনেক বাড়বে। গোল খাওয়ায় সবচেয়ে বেশি এগিয়ে শেফিল্ড ইউনাইটেড। দলটি লিগে এখন পর্যন্ত ৭৪ গোল হজম করেছে। যে গতিতে শেফিল্ড গোল হজম করছে, সেটি অব্যাহত থাকলে গোল খাওয়ার নতুন রেকর্ডও হতে পারে। এর আগে সুইনডন টাউন ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে ৪২ ম্যাচের লিগে ১০০ গোল খেয়ে বিব্রতকর রেকর্ড গড়েছিল। শেফিল্ড গোল হজমের ধারা বজায় রাখলে রেকর্ডটি ভেঙে যেতে পারে। প্রিমিয়ার লিগের গোল হওয়ার এ ধারা ইউরোপের অন্যান্য লিগ বিবেচনায় নিলেও অনন্য। এ মৌসুমে ম্যাচপ্রতি গোলে জার্মান বুন্দেসলিগা প্রিমিয়ার লিগের কাছাকাছি আছে। বুন্দেসলিগায় ম্যাচপ্রতি গোল হয়েছে ৩.২১টি। তবে সাম্প্রতিক মৌসুমগুলোয় বুন্দেসলিগার ক্লাবগুলো গোল করার হার এমনিতেই বেশি ছিল। এ ছাড়া ইউরোপের শীর্ষ ৫ লিগের মধ্যে স্প্যানিশ লা লিগায় ২.৬৪, ইতালিয়ান সিরি ‘আ’–তে ২.৬১ এবং ফরাসি লিগ আঁতে ম্যাচপ্রতি ২.৫৮টি গোল দেখা গেছে। প্রিমিয়ার লিগ ও বুন্দেসলিগায় গোলসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে ম্যাচপ্রতি গোলের উদ্দেশে শট নেওয়ারও সংযোগ রয়েছে। বুন্দেসলিগায় এ মৌসুমে শট নেওয়া হয়েছে ম্যাচপ্রতি ২৭.৪টি, প্রিমিয়ার লিগে সেটি ২৭.২টি। এরপর সিরি ‘আ’তে ২৫.৪ এবং লিগ আঁতে ২৫.৩টি শট দেখা গেছে। আর লিগায় ম্যাচপ্রতি শট দেখা গেছে ২৪.৬টি। প্রিমিয়ার লিগে ম্যাচপ্রতি ২৭.২টি শট ২০১২-১৩ (২৭.৮) মৌসুমের পর সবচেয়ে বেশি। এর আগে ২০২১-২২ মৌসুমে ১০৭১ গোলের জন্য নেওয়া হয়েছে ৯২৪৭টি শট (ম্যাচপ্রতি ২৫.৭টি)। গত মৌসুমে ৯৬০৯ শটে হয়েছিল ১০৮৪টি গোল (ম্যাচপ্রতি ২৫.৩টি শট)। এ ছাড়া রূপান্তর হার বৃদ্ধিও এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে। চলতি মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে এখন পর্যন্ত শট নিয়ে গোলে রূপান্তরিত হওয়ার হার ১১.৯ শতাংশ, যা আগের মৌসুমের চেয়ে ০.৬ শতাংশ বেশি। গত মৌসুমে রূপান্তরের হার ছিল ১১.৩ শতাংশ। SHARES খেলাধুলা বিষয়: গোলপ্রিমিয়ারলিগ