বন্ধুর সহায়তায় চুরি করতে গিয়ে বোনকে খুন করে ভাই: পিবিআই

প্রকাশিত: ৩:১৭ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৬, ২০২৪

ঋণ পরিশোধ করতে রুবেল বোন শিমুর বাসায় চুরির পরিকল্পনা করে এবং অপর আসামি মিনালের সঙ্গে যোগাযোগ করে।

গাজীপুরের কাপাসিয়াতে প্রবাসীর স্ত্রীকে হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনায় নিহতের ভাইসহ দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

গাজীপুর পিবিআই জানিয়েছে, ঋণের টাকা পরিশোধ করতে বন্ধুকে নিয়ে বোনের ঘরে চুরি করতে যায় যুবক। কিন্তু ঘুম ভেঙে বোন চিৎকার করলে হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যা করে তাকে। পরে টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে পালিয়ে যায় তারা।

শুক্রবার দুপুরে গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)’র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
গ্রেপ্তাররা হলেন, নিহত শাহনাজ বেগম শিমু’র (৩৯) ছোট ভাই ও কাপাসিয়ার কুলগঙ্গা গ্রামের মো. সিরাজ উদ্দিন বেপারীর ছেলে মো. কামরুজ্জামান রুবেল (৩৬) ও শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী থানার মামদাবাড়ি গ্রামের আস্কর আলীর ছেলে মো. মিনাল ওরফে মিষ্টার (২১)।

গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টায় কাপাসিয়া উপজেলার সিংহশ্রী ইউনিয়নের পূর্ব ভিটিপাড়া গ্রামের বসত ঘর থেকে শিমুর হাত-পা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। শিমু দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী মো. মোশারফ হোসেনের স্ত্রী।

এ ঘটনায় তার বাবা সিরাজ উদ্দিন কাপাসিয়া থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
পিবিআই’র এসআই ও তদন্ত কর্মকর্তা মো. সালেহ্ ইমরান বলেন, মরদেহ উদ্ধারের পরপরই কাপাসিয়া থানা পুলিশের পাশাপাশি গাজীপুর পিবিআইর একাধিক টিম মামলাটির রহস্য উদঘাটনে ছায়া তদন্তে নামে।

বৃহস্পতিবার বিকালে গোয়েন্দা তথ্য ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত রুবেলকে গাজীপুর মহানগরের গাছা থানা এলাকা থেকে ও পরে তার দেওয়া তথ্যমতে মিনালকে ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তাররা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জানান, রুবেল গাজীপুরে একটি আবাসিক হোটেলে চাকরি করতেন। পাঁচ মাস আগে চাকরি ছেড়ে দিলে তিনি অর্থনৈতিক সংকটে ঋণ জর্জরিত হয়ে পড়েন।

ঋণ পরিশোধ করতে রুবেল বোন শিমুর বাসায় চুরির পরিকল্পনা করে এবং অপর আসামি মিনালের সঙ্গে যোগাযোগ করে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন বিকালে একটি ব্যাগে সুইচ গিয়ার চাকু, প্লাস, গামছা, কেচি নিয়ে রুবেল জয়দেবপুর রেল স্টেশনে এসে মিনালের সঙ্গে একত্রিত হয়। পরে তারা বিভিন্ন স্থানে ঘুরে রাতে শিমুর বাড়ির সামনে আখ খেতে লুকায়।

রাত ১২টার দিকে তারা শিমুর বাড়ির সীমানা প্রাচীরের ওপর দিয়ে ছাদে উঠে রান্নাঘরের টিন খুলে প্রবেশের চেষ্টা করে। পরে বাড়ির পেছনের খোলা জানালায় বাঁশের লাঠি দিয়ে ভেতরের ছিটকানি খুলে ঘরের ভেতরে ঢুকে।

কিন্তু তাদের সাড়াশব্দ পেয়ে ঘুম ভেঙে গেলে শিমু চিৎকার শুরু করে। তখন মিনাল ছুরি দেখিয়ে তাকে ভয় দেখায়, কিন্তু শিমু চিৎকার না থামালে গামছা দিয়ে তার মুখ চেপে ধরে।

এবং রুবেলকে যাতে চিনতে না পারে সেজন্য শিমুর চোখ, মুখ, গামছা দিয়ে এবং হাত দঁড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে। এসময় শিমু ধস্তাধস্তি শুরু করলে মিনাল শিমুর মুখে আঘাত করে এবং বুকের উপর বসে গলা চেপে ধরে।

পরে টেবিলের ড্রয়ার থেকে চাবি নিয়ে আলমারি খুলে স্বর্ণালংকার ও তিন হাজার টাকা, শিমুর মোবাইল নিয়ে পকেট গেট দিয়ে বের হয়ে চলে যায় তারা।

পরদিন সকালে রুবেল ছুরি, প্লাস ও মোবাইল সেট ভেঙে ঝাজর এলাকায় কবরস্থান ব্রিজের নিচে খালের পানিতে ফেলে দেয় এবং লুন্ঠিত স্বর্ণালংকার দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করে।

রুবেলকে গ্রেপ্তারের পর তার দেওয়া তথ্যমতে স্বর্ণ বিক্রির ৫৭ হাজার টাকা ও খাল থেকে প্লাস, ছুরি ও মোবাইল সেটের খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন, “রুবেল ও মিনাল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। স্বর্ণালংকার বিক্রির অবশিষ্ট টাকা ও স্বর্ণ উদ্ধারে অভিযান চলছে।”