তীব্র তাপপ্রবাহে চুয়াডাঙ্গায় ১৪৪০ কোটি টাকা ক্ষতির ধাক্কা প্রকাশিত: ১১:১৩ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ৩, ২০২৪ এ বছর এপ্রিল মাসজুড়েই বয়ে গেছে তাপপ্রবাহ। বিশেষ করে এই তাপপ্রবাহ তীব্র আকার ধারণ করেছিল দক্ষিণপশ্চিমে। এর মধ্যেও যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও খুলনায় তাপপ্রবাহের প্রভাব ছিল বেশি, যা অব্যাহত ছিল মে মাসেও। তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত হয়েছে এসব এলাকার জনজীবন। তীব্র তাপপ্রবাহের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এসব এলাকার কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাত থেকে শুরু করে পরিবেশ ও জীবন-জীবিকা। এক সমীক্ষার প্রতিবেদন বলছে, শুধু চুয়াডাঙ্গা জেলাতেই এসব খাতে তাপপ্রবাহের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ এক হাজার ৪৪০ কোটি ৫০ লাখ ৪৮৪ টাকা। বেসরকারি সংস্থা ওয়েভ ফাউন্ডেশন এই সমীক্ষা চালিয়েছে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়ার ১০ উপজেলায়। চুয়াডাঙ্গার সদর, দামুড়হুদা, জীবননগর ও আলমডাঙ্গা উপজেলা; মেহেরপুরের সদর ও গাংনী উপজেলা; ঝিনাইদহের সদর ও মহেশপুর উপজেলা; এবং কুষ্টিয়া সদর ও কুমারখালী উপজেলায় চালানো এ সমীক্ষায় উঠে এসেছে, চার জেলায় তাপপ্রবাহের প্রভাবে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ‘ওয়েভ ফাউন্ডেশনে’র প্রধান গবেষক ড. মোহা. হাসান আলী বলেন, চুয়াডাঙ্গায় চলতি বছর যে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে, তা বিভিন্ন খাতে বিভিন্ন ধরনের প্রভাব ফেলেছে। এসব প্রভাব মোকাবিলার কৌশল কী হতে পারে, সে উদ্দেশেই সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়। সমীক্ষায় বলা হয়, এ অঞ্চলে বিস্তৃত সমভূমি। এসব জেলাগুলোর পাশেই ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং পৃথিবীর উষ্ণতম মুর্শিদাবাদ জেলা। জেলায় জলাশয়ের পরিমাণ কমে যাওয়ায় তাপমাত্রা শোষণ হচ্ছে না। ফলে তাপমাত্রা বাড়ছে। বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয়বাষ্প এ অঞ্চল দিয়ে প্রবেশ করে বলে বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ অন্য এলাকার তুলনায় এ এলাকায় বেশি থাকে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এপ্রিল মাসে বৃষ্টি না হওয়ায় এ অঞ্চলে তাপমাত্রা বাড়ছে। পুকুর-খাল-বিল ও জলাশয় অপরিকল্পিতভাবে ভরাট ও দখলও তাপমাত্রাকে অসহনীয় করে তুলেছে।এ ছাড়া কর্কটক্রান্তি রেখার নিকটবর্তী হওয়ার কারণে এ অঞ্চলে তীব্র সূর্যকিরণ পড়ে উল্লেখ করে সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ব্যাপক হারে বৃক্ষনিধন ও কাঠপোড়ানো তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি ভয়াবহ করে তুলেছে। চুয়াডাঙ্গা জেলায় রয়েছে ৮৬টি ইটভাটা। এ ইটভাটাগুলোতে এক লাখ তিন হাজার ২০০ মেট্রিক টন কাঠ পোড়ানো হয়। শহরায়নের কারণেও সবুজায়ন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে আবহাওয়া চরমভাবাপন্ন হয়ে উঠেছে। কৃষি খাতে ক্ষতি জেলায় তীব্র তাপপ্রবাহে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষি খাত। নষ্ট হয়ে গেছে কলা, পান, পটল, লাউ, বেগুন, ঢেঁড়স, ঝিঙা, করলা চিচিংগা, কচু, চালকুমড়াসহ অন্যান্য সবজি। শাক ও বাদামজাতীয় ফসলও রোদে পুড়ে নষ্ট হয়েছে। পেঁপে, মাল্টা, পেয়ারাসহ বিভিন্ন ফলের চারা মরে গেছে। আম, কমলা ও মাল্টার গুটি ঝরে গেছে, পচে গেছে ড্রাগন ফলের ফুল। তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ধান-ভুট্টার ফলনও কম হয়েছে। বিভিন্ন গাছের ফুল নষ্ট হওয়ায় ফল ধরলেও আম, কাঁঠাল ও লিচুর আকার তুলনামূলকভাবে ছোট হয়েছে। ফল পরিপক্ক হওয়ার আগেই তা পেকে গেছে। সমীক্ষায় উঠে এসেছে তাপপ্রবাহে বৃষ্টি না হওয়ায় বোরো ধানে বাড়তি সেচ দিতে হয়েছে। এতে জেলায় বিঘা প্রতি গড়ে আড়াই হাজার টাকা বেড়েছে উৎপাদন ব্যয়। বোরো ধান বিঘা প্রতি দুই মন ফলন কমও হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলায় এ মৌসুমে দুই লাখ ১৯ হাজার ৭৯৬ মেট্রিক টন বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও উৎপাদন হয়েছে এক লাখ ৯৮ হাজার ৪২৩ মেট্রিক টন। উৎপাদনের পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রার ৯০ শতাংশ। SHARES জাতীয় বিষয়: তাপপ্রবাহদক্ষিণপশ্চিমে