ঢাকা শহরে প্রতিদিন আড়াই কোটি পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার হচ্ছে প্রকাশিত: ১১:৩১ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ৩, ২০২৪ আমরা আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সচেতন হলেও কোনোভাবেই প্লাস্টিককে দূরে রাখতে পারছি না। প্লাস্টিকের ব্যাগ হয়ে উঠছে নিত্যদিনের সঙ্গী। বাজার করা, ময়লা ফেলা, শুকনো খাবার সংরক্ষণ করা, ফ্রিজে খাবার রাখাসহ বিভিন্ন কাজে প্রতিদিন প্রতিটি বাড়িতে প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহৃত হচ্ছে। ব্যবহারের পর এসব ব্যাগ আমরা যেখানে সেখানে ফেলে দিচ্ছি। পরিবেশবান্ধব পাটজাত দ্রব্য, কাগজের ব্যাগ ও ঠোঙা, কাপড়ের ব্যাগ ইত্যাদি সহজলভ্য বিকল্প থাকা সত্ত্বেও আইন অমান্য করে নিষিদ্ধ পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন, মজুত, পরিবহন, বিপণন, বাজারজাত ও ব্যবহার করা হচ্ছে। ঢাকা শহরে একটি পরিবার প্রতিদিন গড়ে পাঁচটি পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করে। সে হিসেবে শুধুমাত্র ঢাকা শহরে প্রতিদিন আড়াই কোটির পলিথিন ব্যাগ একবার ব্যবহার করে ফেলে দেয়া হয়। এগুলো দ্বারা ড্রেন, নালা-নর্দমা, খাল, ডোবা ইত্যাদি ভরাট হয়ে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার প্রকোপ বাড়িয়ে দিচ্ছে। প্লাস্টিক দূষণের প্রতি শূন্য-সহনশীলতার দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্লাস্টিক বর্জ্য পুনর্ব্যবহার এবং কম্পোষ্টিং এর গুরুত্ব তুলে ধরার জন্য ২০০৮ সাল থেকে প্রতি বছর ৩রা জুলাই আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক ব্যাগ মুক্ত দিবস পালিত হয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক ব্যাগ মুক্ত দিবস ২০২৪ সালের প্রতিপাদ্য ব্যক্তি, ব্যবসা এবং প্রতিষ্ঠানকে টেকসই বিকল্প গ্রহণ করতে উৎসাহিত করা। প্লাস্টিক ব্যবহার এবং বর্জ্য কমাতে নীতি পরিবর্তন এবং পদ্ধতিগত সমাধানের জন্য ওকালতি করা। প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি অর্জন করা। আজ বিশ্বের প্রায় ১৫০০টি সংস্থা আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক ব্যাগ মুক্ত দিবস উদযাপন করছে। প্লাস্টিক ব্যাগ পরিবেশ দূষণের একটি প্রধান উৎস। তবে প্লাস্টিকের ব্যাগগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি সুবিধাজনক এবং বহুল ব্যবহৃত অংশ। এগুলো পচনশীল নয়। প্লাস্টিক বিচ্ছিন্ন হতে ৫০০ বছর পর্যন্ত সময় নিতে পারে, মাটি ও পানিতে জমা হতে পারে, বাস্তুতন্ত্র এবং সামুদ্রিক জীবের ক্ষতি করতে পারে। প্লাস্টিক নিষ্কাশন ব্যবস্থাকে আটকাতে পারে, পুনর্ব্যবহার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে এবং পানি প্রবাহকে দূষিত করতে পারে। প্লাস্টিক দূষণ ভূমির উর্বরতা হ্রাস করে, বন্যপ্রাণীর ক্ষতিসাধন করে, সামুদ্রিক কচ্ছপ, মাছ এবং তিমিসহ ৭০০টির বেশি প্লাস্টিক খায় বা এতে জট পাকিয়ে যায়। ১৯৩০ এর দশকের শুরুর দিকে ইংল্যান্ডের একটি রাসায়নিক প্ল্যান্টে পলিথিন তৈরি করা হয়। এটি প্রথম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যবহারের জন্য গোপন সামরিক গ্লাভস তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়েছিল। ১৯৬০ এর দশকে সুইডেন এক পিস পলিথিন শপিং ব্যাগ পেটেন্ট করেছিল। যা পরবর্তীতে ইউরোপে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। কাগজ এবং পুনঃব্যবহারযোগ্য ব্যাগের তুলনায় প্লাস্টিক ব্যাগের সফল বাজারজাতকরণের পর, তাদের ব্যবহার দ্রুত বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। গ্রেট প্যাসিফিক আবর্জনা প্যাচে জমে থাকা বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য সামুদ্রিক কচ্ছপ, তিমি, ডলফিন এবং আরও অনেকগুলি সামুদ্রিক জীবনকে হুমকির মুখে ফেলেছে। প্লাস্টিক মুক্ত জুলাই হল একটি বিশ্বব্যাপী আন্দোলন যা লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্লাস্টিক দূষণের সমাধানের অংশ হতে সাহায্য করে – যাতে আমরা সুন্দর, স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ পরিবেশে এই গ্রহে বসবাস করতে পারি। আন্দোলনটি প্লাস্টিক দূষণ সংকটের সমাধান খুঁজে বের করতে এবং মানুষ, পরিবেশ এবং বন্যপ্রাণীর জন্য গ্রহটিকে নিরাপদ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আন্দোলনের অন্যতম প্রধান কার্যক্রম হল ক্রেতাদের কেনাকাটা করার সময় প্লাস্টিকের ব্যবহার না চাইতে এবং ব্যবহার বন্ধ করতে উৎসাহিত করা। অন্যান্য কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে প্লাস্টিক বর্জ্য হ্রাস, পুনরায় ব্যবহার এবং পুনর্ব্যবহার করা। SHARES মতামত বিষয়: পলিথিনসংরক্ষণসচেতন