বিজেপি এমপির ‘বাংলাদেশি’ তকমা মানতে নারাজ আসামের শ্রমিকরা প্রকাশিত: ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৫, ২০২৫ ভারতের আসাম থেকে আগত কয়েকজন অভিবাসী শ্রমিক বিজেপির এক এমপির দেওয়া ‘বাংলাদেশি’ তকমা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাদের দাবি, নিজেদের পরিচয়ের সব সরকারি নথি তাদের কাছে রয়েছে এবং তারা কোনো অপরাধ করেননি। এ ঘটনাটি নিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, লক্ষনৌয়ের গোমতিনগর এলাকার মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে মালেসামাউয়ের একটি নির্মাণাধীন ভাড়া বাড়ির কক্ষে শুক্রবার রাতে বসেছিলেন ৩৩ বছর বয়সী রুপচান আলি ও তার স্ত্রী বিমলা খাতুন। তাদের হাতে ছিল আধার কার্ড, ভোটার আইডি এবং এনআরসি (জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন) সার্টিফিকেটসহ বেশ কিছু পরিচয়পত্র। তার আগের দিন, আসাম থেকে আগত এই দম্পতি ও আরও তিনজন শ্রমিককে রাস্তা ঝাড়ু দিতে দেখে বিজেপির রাজ্যসভার এমপি ব্রিজলাল তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। গোমতিনগর এক্সটেনশন এলাকায় সেই ঘটনাটির ভিডিও তিনি নিজেই ধারণ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেন। ভিডিওতে ওই শ্রমিকদের তিনি ‘বাংলাদেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারী’ বলে অভিযোগ করেন। ভিডিওটি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে রুপচান বলেন, “আমরা কেবল আমাদের দৈনন্দিন কাজ করছিলাম। হঠাৎ এক সাহেব এসে আমাদের থামান, প্রশ্ন করেন ও ভিডিও করেন। পরে গ্রামে থাকা মা ভিডিওটা দেখে ভয় পেয়ে ফোন করে বলেন যেন আমরা ফিরে যাই। কিন্তু আমরা পালাব না — আমাদের সব কাগজপত্র আছে, কোনো ভুল করিনি। আমার ঋণ শোধ করতে হবে।” তিনি আরও জানান, “আমরা সাহেবকে বলেছিলাম আমাদের এনআরসি সার্টিফিকেট আছে, কিন্তু তিনি শুনেননি। এই নথিগুলো সরকারই আমাদের দিয়েছে, এবং আমাদের কাছে সব কপি আছে।” বৃহস্পতিবার ফেসবুকে আপলোড করা ভিডিওতে দেখা যায়, ব্রিজলাল শ্রমিকদের পরিচয় নিয়ে জেরা করছেন। শ্রমিকরা নিজেদের আসামের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা হিসেবে পরিচয় দেন। কিন্তু এমপি ব্রিজলাল বলেন, “ওরা নিজেদের আসামের মানুষ বলে, কিন্তু এরা সবাই বাংলাদেশি… সেই বাংলাদেশ, যে আজ পাকিস্তানের ভাষায় কথা বলে।” রুপচান জানান, প্রায় দেড় বছর আগে গ্রামেরই এক পরিচিত ব্যক্তির পরামর্শে তিনি লক্ষনৌতে কাজের জন্য আসেন। তার ভাষায়, “আমাদের বাড়ির ঋণ দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার রুপি। কৃষিকাজের আয় দিয়ে তা শোধ করা সম্ভব হয়নি, তাই কাজের খোঁজে এখানে আসতে হয়েছে।” রুপচানের মা ও বড় ছেলে এখনও গ্রামে থাকেন। তিনি ও তার স্ত্রী মিলে যা আয় করেন, তার অর্ধেক পাঠান বাড়ির খরচ ও ঋণ পরিশোধে। তাদের দুই সন্তান — ৮ বছরের মেয়ে ও ৬ বছরের ছেলে — লক্ষনৌতেই সঙ্গে থাকে এবং পাশের সরকারি স্কুলে পড়ে। বিমলা বলেন, “ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই ভয় পাচ্ছি। আমি পাশের কলোনিগুলোতে বাড়ি পরিষ্কার করি, মাসে প্রায় ৮,৫০০ রুপি আয় হয়।” ওই বাড়ি থেকে অর্ধ কিলোমিটার দূরে থাকেন সাঁওরা বেগম। তিনিও সেই ভিডিওতে ছিলেন, সঙ্গে ছিলেন তার স্বামী মোহাম্মদ আফজল হুসাইন। সাঁওরা বলেন, “আমরা আসামের বারপেটা জেলার দেবরাদি গ্রামের মানুষ। আমার এনআরসি ছাড়াও প্যান কার্ড, শ্রমিক কার্ড ও আয়ুষ্মান ভারত কার্ড আছে — সবই গ্রাম থেকেই ইস্যু করা।” আফজল হুসাইনও নিজের সব পরিচয়পত্র দেখান। তিনি বলেন, “আমরা বহু বছর ধরে এখানে কাজ করছি, কিন্তু এভাবে কেউ কখনও প্রশ্ন করেনি।” হুসাইন জানান, তিনি বাড়ি বাড়ি ময়লা সংগ্রহের কাজে যুক্ত এবং মাত্র সাত বছর বয়সে প্রথমবার লক্ষনৌয়ে আসেন। তার ভাষায়, “প্রায় এক মাস আগে পুলিশ আমাদের পরিচয় যাচাই করতে এসেছিল, তখন সব নথি থানায় জমা দিয়েছি। ভিডিওটি আমরা দেখিনি, কারণ আমাদের পরিবারের কাছে স্মার্টফোন নেই। দেখলে হয়তো আরও ভয় পেতাম।” তিনি আরও বলেন, “আমি সারাজীবন এখানেই কাজ করেছি। কেউ চাইলে সব কাগজ দেখাতে পারি, কিন্তু পালাব না। এই কাজটাই আমরা বহু বছর ধরে করে আসছি।” SHARES বিশেষ সংবাদ বিষয়: