তদন্ত শেষ হওয়ার জন্য আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে?

প্রকাশিত: ১২:১৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৫, ২০২৫

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির হত্যার মামলা এখনও সমাপ্ত হয়নি। হাইকোর্টের নির্দেশে একটি উচ্চপর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠন করা হলেও তদন্তে তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্ট অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। বিচারপতি টাস্কফোর্সের প্রধানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “মামলাটির তদন্ত ১৩ বছর ধরে চলছে। আর কতদিন লাগবে আপনাদের? শুধু আমতা-আমতা করে বলবেন না। সময় এমনভাবে ব্যবহার করুন যেন দ্রুত শেষ হয়। এবারই যেন শেষবার।”

আসামিপক্ষের আইনজীবী শিশির মনির তিন মাসের সময় দিয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের আর্জি করেন। তবে হাইকোর্ট রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে টাস্কফোর্সকে শেষবারের মতো ৬ মাস সময় দেন। হাইকোর্ট উল্লেখ করেন, “দুইজন মানুষ হত্যার শিকার হয়েছেন, কিন্তু এখনও জানা যায়নি কে তাদের হত্যা করেছে। সারা দেশের মানুষ এই মামলার দিকে নজর রাখছে।”

২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল দ্রুত কার্যকর করা এবং বিভিন্ন বাহিনীর অভিজ্ঞ তদন্ত কর্মকর্তাদের নিয়ে টাস্কফোর্স গঠন করতে বলা হয়। আদালত টাস্কফোর্স গঠনের পর ৬ মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার সময়সীমা নির্ধারণ করেছিলেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষ দুই দফায় ৬ মাস সময় নিয়েও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি। নির্ধারিত সময়ের পরে বৃহস্পতিবার বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ারের নেতৃত্বে হাইকোর্ট বেঞ্চ মামলাটি শুনানিতে তোলে।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ। বাদীর পক্ষে ছিলেন এডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রিটের পক্ষে শুনানি করেন এডভোকেট মনজিল মোরসেদ।

শিশির মনির আদালতকে জানান, “আপনাদের দেওয়া সময়সীমার মধ্যে একটি হাই পাওয়ার টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছিল। তারপরও তারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি। তাই তাদের (টাস্কফোর্স) তলব করা উচিত।”

এসময় অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ বলেন, “ওরা কাজ করছে, শেষ হলে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। তদন্ত সহজ নয়, তাই সময় লাগবে।” জবাবে শিশির মনির বলেন, “তারা যদি সময় চাই, আবেদন দিয়ে জানাক। আমাদের তো কিছুই জানা নেই, আমরা জানতে চাই। দীর্ঘদিন তদন্ত শেষ না হওয়ায় আমরা প্রকাশ্যে কিছু বলতে পারছি না। এই সরকারের সময়ই তদন্ত শেষ হওয়া উচিত। ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন। রাজনৈতিক সরকার এলে আরও পিছিয়ে যেতে পারে।”

আরশাদুর রউফ জবাবে জানান, “তদন্ত চলবে। নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। যথানিয়মেই কাজ হবে।”

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ আদালতকে বলেন, “কাজের অগ্রগতি আছে কিনা জানাতে দিন। একটি সংক্ষিপ্ত সময় দিলে তদন্ত কমিটির জন্য গুরুত্ব তৈরি হবে।” আরশাদুর রউফ বলেন, “হাইকোর্টের নির্দেশে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। অফিসার পরিবর্তন হয়েছে। এটি একটি জটিল মামলা। র‍্যাব ও পুলিশ হেডকোয়ার্টারও এতে যুক্ত। দ্রুত সমাধান হবে। সরকার এটি গুরুত্ব সহকারে দেখছে। তদন্ত শেষ করতে আরও ৬ মাস সময় প্রয়োজন।”

শিশির মনির বলেন, “রাষ্ট্রপক্ষ আগেও একই কথা বলেছে। এই মামলাটি সারা দেশে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে। আদালত নির্দেশ দিয়েছেন তথ্য প্রচারের মাধ্যমে কাজ করা হবে। এবার শেষবারের মতো সময় দিন।” রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীও বলেন, “আমরাও চাই, সময়সীমার মধ্যে সমাপ্তি হোক।”

এসময় আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, “আর কত বছর লাগবে? এখন তদন্ত কতটুকু এগিয়েছে? ১ শতাংশ, ২ শতাংশ?” রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, “অনেক প্রমাণ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির দেশে বাইরে থাকা কারণে সময় লাগছে।” এসময় মামলার তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পিবিআই’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আজিজুল হককে আদালতে হাজির করা হয়। তাদের কাছে তদন্ত অগ্রগতি জানার জন্য হাইকোর্ট প্রশ্ন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ আদালতকে একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন দেখান, যা দুই-তিন দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রার দপ্তরে অফিসিয়ালি জমা দেওয়া হবে। এরপর হাইকোর্ট টাস্কফোর্সকে শেষবারের মতো ৬ মাস সময় দেন তদন্ত শেষ করার জন্য।