ছাদের কার্নিশে ঝুলন্ত অবস্থায় আমিরকে ছয় রাউন্ড গুলি করে পুলিশ !

প্রকাশিত: ১২:০৫ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৫, ২০২৫

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের ভয়ভীতি থেকে একটি বাড়ির চারতলায় আশ্রয় নেওয়া আমির হোসেন বলেন, “পুলিশ এসে আমাকে লাফ দিতে বলেছিল। আমি তা না করলে তারা দুই দফায় আমার শরীরে ছয়টি রাউন্ড গুলি চালায়।” গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাজধানীর রামপুরায় ভবনের কার্নিশে ঝুলে থাকা অবস্থায় আমির হোসেন এই ঘটনার বিবরণ দেন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় রামপুরায় ছাদের কার্নিশে ঝুলে থাকা আমির হোসেনকে গুলি করার ঘটনায় এবং দু’জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা তদন্তে ডিএমপি’র সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য প্রদান করা হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রথম সাক্ষী আমির হোসেনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরাও সম্পন্ন হয়েছে। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আগামী ২৭ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন। বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল দিন ধার্য করেন।

বৃহস্পতিবার সকালে মামলায় রামপুরা পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকারকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। হাবিবুর রহমান ছাড়া বাকি তিন আসামি হলেন—খিলগাঁও জোনের সাবেক এডিসি মো. রাশেদুল ইসলাম, রামপুরা থানার সাবেক ওসি মো. মশিউর রহমান এবং রামপুরা থানার সাবেক এসআই তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া।

জবানবন্দিতে আমির হোসেন বলেন, “গত বছর জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় আমি আফতাবনগরে ‘মামা কফিশপ’ নামের একটি খাবারের দোকানে চাকরি করতাম। তখন আমি রামপুরার মেরাদিয়া এলাকায় আমার ফুফুর সঙ্গে থাকতাম। ১৯ জুলাই শুক্রবার জুমার নামাজের পর দোকান থেকে বাসায় ফেরার পথে রামপুরার খালের ওপর সাঁকো পার হয়ে মেইন রাস্তায় উঠার সময় দেখি পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা আন্দোলনরত ছাত্র ও জনগণের ওপর গুলি চালাচ্ছে। ভয়ে আমি পাশে একটি নির্মাণাধীন ভবনের চারতলার ছাদে উঠি। তখন তিনজন পুলিশ আমার পিছে পিছে ছাদে উঠে আসে। আমি একটি রড ধরে ঝুলে থাকি। একজন পুলিশ আমাকে নিচে ঝাঁপ দিতে বলে। আমি ঝাঁপ দিইনি, রড ধরে ঝুলে থাকি। তখন ঐ পুলিশ সদস্য পরপর তিনটি রাউন্ড গুলি চালান। গুলি আমার পায়ে লাগে। পরে আরেকজন পুলিশ আরও তিনটি রাউন্ড গুলি চালায়, যেগুলোও আমার দুই পায়ে লাগে। আমি জ্ঞান হারাই। জ্ঞান ফিরলে দেখি আমি ফেমাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।”

তিনি আরও জানান, এ ঘটনার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। গুলিতে তার পায়ের রক্তনালী ছিঁড়ে যাওয়ায় অপারেশন করা হয়। এরপর তাকে সাভার সিআরপি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, যেখানে তিন-চার মাস ফিজিওথেরাপি ও অন্যান্য চিকিৎসা চলেছিল। এখনও মাঝে-মধ্যে তাকে ওই হাসপাতালে যেতে হয়।

জেরার সময় ক্ষতস্থান প্রদর্শনের জন্য বস্ত্র পরিবর্তন করতে হয় আমির হোসেনকে। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আমির হোসেনকে জেরা করেন পলাতক তিন আসামির পক্ষে স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী ও গ্রেপ্তার চঞ্চল চন্দ্র সরকারের আইনজীবী সারওয়ার জাহান।

এই সময় গ্রেপ্তার একমাত্র আসামি চঞ্চল চন্দ্রের আইনজীবী দাবি করেন, “আপনাকে পুলিশ গুলি করেনি। যখন আপনি কার্নিশে ঝুলে ছিলেন, তখন নিচ থেকে কেউ গুলি করেছে। এছাড়া গুলির চিহ্ন কোথায় তা আমি দেখতে চাই।” তখন প্রসিকিউটর গাজী তামিম একজনকে লুঙ্গি আনতে বলেন। পরে ট্রাইব্যুনালের অনুমতি নিয়ে আমির হোসেন সাক্ষীর কাঠগড়া থেকে নিচে নেমে এজলাসের বাইরে গিয়ে প্যান্ট খুলে লুঙ্গি পরে ফিরে আসেন। তখন তার দুই পা দেখা হয়, এবং আসামি পক্ষের আইনজীবীরা দেখতে পান যে ভুক্তভোগী আমিরের দুই পায়ে গুলির চিহ্ন রয়েছে।