আগামী বিশ্বের জন্য কী বয়ে আনতে পারে ‘প্রজেক্ট ২০২৫’?

প্রকাশিত: ২:৫৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৩, ২০২৪

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে সম্প্রতি উঠে আসা জরিপগুলোতে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ের সম্ভাবনাও বেশ স্পষ্টতর হচ্ছে। জরিপের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, আগামী ২০২৫ সালে ওভাল অফিসের চালক হতে চলেছেন ট্রাম্প। আর যদি তিনি ক্ষমতায় আসেন তবে দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের শাসনামল কেমন হতে পারে তার একটি সম্ভাব্য ইঙ্গিত নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে ‘‘প্রজেক্ট ২০২৫’’। ওয়াশিংটন ডিসির থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ‘হেরিটেজ ফাউন্ডেশন’ সম্প্রতি ৯২২ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এ বিষয় নিয়ে। আর তাতে বলা হয়, মূলত একটি ডানপন্থী শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের মডেল কিংবা এমনই কিছু নির্দেশিকাসহ ট্রাম্প প্রশাসন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সম্প্রসারণের পাশপাশি নাগরিক পরিষেবার আরও দ্বার উন্মোচনের মাধ্যমে ফেডারেল সরকারের একটি নাটকীয় পরিবর্তন আসতে পারে ট্রাম্পের শাসনামলে।

চীনের প্রতি অনেকটা কটাক্ষ করে এতে বলা হয়, “আমেরিকানদের নিরাপত্তা, স্বাধীনতা এবং সমৃদ্ধির জন্য উল্লেখযোগ্য বিপদ মোকাবেলায় পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদনকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং আন্তর্জাতিক সাহায্য কর্মসূচি কমিয়ে নিয়ে আসা‘’-এমনটাও ট্রাম্প প্রশাসনের কার্যতালিকায় অগ্রাধিকার পেতে পারে।

এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বহিঃবিশ্বের সাথে কেমন নীতি হতে পারে ট্রাম্প প্রশাসনের সেটি নিয়েও আলোকপাত করা হয়েছে এই রিপর্টে।

দেখা যায়, প্রতিরক্ষা এবং বৈদেশিক নীতির বিষয়ে, প্রজেক্ট ২০২৫’র মূল লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রশাসনের সাথে রয়েছে বিশাল ব্যবধান।

ক্রিস্টোফার মিলার যিনি ট্রাম্পের অধীনে প্রতিরক্ষা সচিব হিসেবে একসময় দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি এ প্রসঙ্গে  বলেন , “বিরক্তিকর ক্ষয়”, “জাতির সক্ষমতা’’ এবং “বিপজ্জনক পতন” হতে ট্রাম্পের আমলে।

এবারে দেখা যাক প্রজেক্ট ২০২৫ এ উল্লেখিত প্রধান পররাষ্ট্রনীতিতে কি থাকতে পারে?

চীন ইস্যু 

চীনকে এই প্রকল্পের প্রধান উদ্বেগের বিষয় হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। মিলারের আশঙ্কা, দেশটি “একটি ঐতিহাসিক সামরিক শক্তি গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।”

তিনি বলেন, ফলে তারা এমন একটি পারমাণবিক সক্ষমতার দিকে আগাচ্ছে যা কিনা আমেরিকার নিজস্ব পারমাণবিক অস্ত্রাগারের সক্ষমতাকেও অতিক্রম করতে পারে।

তাইওয়ান বা ফিলিপাইন, দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানের মতো মিত্রদের চীনের অধীনস্থ থেকে সরিয়ে আনতে “ভারসাম্য রক্ষাকারী জোট হিসেবে এশিয়ার উপর বেইজিংয়ের আধিপত্য রোধ করতে ট্রাম্পের থাকতে পারে বিশেষ কোন পরিকল্পনা। কিন্তু হুট করেই তা নিয়ে অগ্রসর হলে সেটি বয়ে আনতে পারে বিপর্যস্ত।

পারমাণবিক অস্ত্র

‘’প্রজেক্ট ২০২৫’’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্রাগার আধুনিকরনের পাশপাশি এ কর্মসূচী প্রসারিত করার বিষয়টিকে জোর দিয়েছে।

এ রিপোর্টে বলা হয়, পারমাণবিক উৎপাদন বাড়ানো হতে পারে ট্রাম্পের আমলে। এছাড়াও “সেন্টিনেল আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নয়ন এবং উৎপাদন” এর বিষয়টিও ত্বরান্বিত করা হতে পারে ট্রাম্পের শাসনামলে।

আন্তর্জাতিক সাহায্য

হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের মার্গারেট থ্যাচার সেন্টার ফর ফ্রিডম সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ম্যাক্স প্রাইমোরাক বলেছেন,  ইউএসএইড বা ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট সাহায্য কার্যক্রমগুলো গুটিয়ে আনার সম্ভাবনাও রয়েছে ট্রাম্পের আমলে। এমনকি “লিঙ্গ বৈষম্য” এবং ‘’গর্ভপাত’’ এর মতো গুরুত্বপুর্ণ প্রকল্পগুলোর ওপর থেকে আর্থিক অনুদান কমিয়ে আনা হতে পারে।

এছাড়াও “জেন্ডার”, “জেন্ডার সমতা”, “জেন্ডার ইক্যুইটি”, “জেন্ডার বৈচিত্র্যপূর্ণ ব্যক্তি”, “লিঙ্গ সচেতন”, “লিঙ্গ সংবেদনশীল”, “গর্ভপাত”, “প্রজনন স্বাস্থ্য” এবং “যৌন ও প্রজনন অধিকার” এর মতো বিষয়গুলো থেকেও সরে আসতে পারে ট্রাম্প প্রশাসনের নজর।

‘প্রজেক্ট ২০২৫’ দেশীয় প্রেক্ষাপটে কোন ধরণের প্রস্তাব রাখছে?

ইশতেহারের বেশিরভাগ অংশ জুড়েই ১১ মিলিয়নেরও বেশি নথিপত্রবিহীন অভিবাসীদের নির্বাসন এবং রাজ্যগুলোর শিক্ষার উপর আরও নিয়ন্ত্রণ আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর এটির সাথে ট্রাম্পের পূর্বপরিচিত নীতির সাদৃশ্য বহন করে। অন্যদিকে ‘এলজিবিটিকিউ’ এর মতো বিষয়গুলোকেও সীমিত হারে পরিকল্পনায় রাখা হয়েছে কিংবা এটি সীমিত করণেরও প্রস্তাব আসতে পারে।

তবে ‘প্রজেক্ট ২০২৫’ এ বিশেষ কিছু বিষয় ট্রাম্পের প্রচারণার চেয়েও এগিয়ে রয়েছে। এর মধ্যে পর্নোগ্রাফি নিষিদ্ধ, গর্ভপাতের ক্ষেত্রে পিলের ব্যবহার ইত্যাদি।

বলা হচ্ছে, ‘প্রজেক্ট ২০২৫’ মার্কিনীদের জীবনের কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে তাদের পরিবার প্রথাকে পুনরুজ্জীবিত করতে এবং শিশুদের রক্ষার অধিকারের বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বাইডেনের প্রচারাভিযানের সময় টিভি নাটক ‘দ্য হ্যান্ডমেইডস টেল অন এক্স’ থেকে একটি শট পোস্ট করে প্রজেক্ট ২০২৫’-কে লক্ষ্য করে ব্যঙ্গ করে বলা হয়, দেখুন মহিলারা একটি ক্রসের সামনে দাঁড়িয়ে তাদের পরিচয় প্রকাশ করছে আর এটি হয়তো “ট্রাম্পের প্রজেক্ট ২০২৫’ এর অধীনেই হতে যাচ্ছে ।

ট্রাম্প কি ‘প্রজেক্ট ২০২৫’ অনুমোদন করেছেন?

ট্রাম্প বলেছেন, তার সঙ্গে রূপান্তরিত পরিকল্পনার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, “আমি জানি না এর পিছনে কে বা কারা রয়েছে। তারা যা বলছে তার কিছু বিষয়ের সঙ্গে আমি একমত নই। আবার তাদের বলা কিছু বিষয় রয়েছে যা একেবারেই হাস্যকর।

অন্যদিকে ট্রাম্প ‘প্রজেক্ট ২০২৫’ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখলেও বলা হচ্ছে তার সঙ্গে এই প্রজেক্টের নীতি নির্ধারকদের সংযোগ রয়েছে।

সাংবাদিক জুড লেগুম এ বিষয়ে বলেন, এই প্রজেক্টটি লিখা ও সম্পাদনার সঙ্গে যারা অংশ নিয়েছেন এমন ৩৮ জনের মধ্যে ৩১ জন ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে পূর্বে কোনো না কোনোভাবে কাজ করেছেন। জানা যায় যে ট্রাম্প প্রশাসনের হোয়াইট হাউস প্রেসিডেন্সিয়াল পার্সোনেল অফিসের সাবেক পরিচালক জন ম্যাকঅ্যান্টে এই প্রকল্পের একজন সিনিয়র উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন।

এমনকি এই প্রকল্পের অংশীদারদের মধ্যে ট্রাম্পের প্রচারণার সাথে যুক্ত বেশ কয়েকটি নেতৃস্থানীয় রক্ষণশীল গোষ্ঠীও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে প্রকাশ পেয়েছে। এগুলোর মধ্যে টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ; দ্য সেন্টার ফর রিনিউয়িং আমেরিকা, ট্রাম্পের অফিস অব ম্যানেজমেন্ট এন্ড বাজেটের প্রাক্তন পরিচালক; এবং আমেরিকা লিগ্যাল ফার্স্ট, প্রেসিডেন্টের সাবেক অভিবাসন উপদেষ্টা স্টিফেন মিলার ছাড়াও বেশ কয়েকটি গোষ্ঠী ও সদস্য রয়েছেন।