কোরিয়ান প্রসাধনী কতটা উপকারী?

প্রকাশিত: ৫:৫৪ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৫

বর্তমান সময়ে বিশ্ব জুড়ে কোরিয়ান রূপচর্চার প্রসাধনীর প্রসার ঘটেছে। দেশেও এসব পণ্যের চাহিদা কম নয়।

তবে কথা হচ্ছে, এই উপমহাদেশের মানুষরা কি এসব রূপচর্চার প্রসধানী মাখলে কোরিয়ানদের মতো উজ্জ্বল কাচের মতো চকচকে ত্বকের অধিকারী হতে পারবেন?

কারণ তাদের আবহাওয়া আর ত্বকের ধরন তো গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলের মতো নয়।

এই বিষয়ে ফেমিনা ডটইন’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ভারতীয় ত্বক-বিশেষজ্ঞ ডা. কিরণ সেঠি বলেন, “কোরিয়ান রূপচর্চার প্রসাধনীগুলো একই সাথে অনেকগুলো কাজের দাবী করে। যেমন- তারুণ্যময় ও উজ্জ্বল ত্বক। আর একটা পণ্য ব্যবহারে অনেকগুলো উপকারের কথা বলা হয়, যে কারণে জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে সারা বিশ্বে।”

এছাড়া নান্দনিক উপস্থাপনায় মোড়কীকরণ বিষয়গু্লো ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে।

“তবে কোরিয়া আর ভারতীয় অঞ্চলের মানুষের ত্বকের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। যে কারণে এসব পণ্য কাজ নাও করতে পারে”- মন্তব্য করেন এই ত্বক-বিশেষজ্ঞ।

যেমন – ভারতীয় অঞ্চলের মানুষদের সাধারণত চার ধরনের ত্বক দেখতে পাওয়া যায়- সাধারণ, শুষ্ক, তৈলাক্ত এবং মিশ্র। আর এই অঞ্চলের মানুষের ত্বকে উচ্চ মাত্রায় মেলানিন’য়ের উপস্থিতির কারণে ‘পিগমেন্টেইশন’ ধরনের সমস্যা যেমন- ‘মেলাসমা’ এবং ‘পোস্ট-ইনফ্লামাটোরি হাইপারপিটগমেন্টেইশন’য়ের সমস্যা দেখা দেয়।

এছাড়া পরিবেশগত পার্থক্যের মধ্যে রয়েছে- দূষণ এবং কড়া সূর্যের আলো। যে কারণে এই অঞ্চলের মানুষদের ত্বকের যত্নে আলাদা পদ্ধতি গ্রহণ করতে হয়।

মানে হল, কোরিয়ানদের চাইতে এই উপমহাদেশের মানুষদের ত্বকের যত্নে এমন প্রসাধনী ব্যবহার করতে হয় যেগুলো পিগমেন্টেইশন’য়ের সমস্যা কমায়, দূষণের ক্ষতি পোষায় আর সূর্যের আলোর ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

উপকরণে পার্থক্য

“কোরিয়ান প্রসাধনী বা ‘কে-বিউটি প্রোডাক্ট’য়ে সাধারণত আর্দ্রতা রক্ষা করতে পারে এমন কোনো উপাদান থাকে না। অথচ এই অঞ্চলের রুক্ষ্ম আবহাওয়ার জন্য ত্বকের আর্দ্রতার সামঞ্জস্যতা বজায় রাখা জরুরি”- বলেন ডা. সেঠি।

বেশিরভাগ সময় এসব প্রসাধনীতে ব্যবহার হয়- শামুকের নিসৃত তরল ‘স্নেইল মিউসিন’, গাঁজানো বা ‘ফার্মেন্টেড’ নির্যাস এবং ত্বক ফর্সা করার উপাদান। এগুলো এই উপমহাদেশের মানুষের ত্বকে প্রয়োজনীয় ‘খাদ্য’ সরবরাহ করে না।

কোরিয়ান রূপচর্চার পণ্যে সাধারণত ভারী, ‘ওক্লুসিভ’ বা শুষে নিয়ে ধরে রাখার মতো ‍উপাদান ও তৈলাক্ত উপকারণ ব্যবহার করা হয়। যা এই অঞ্চলের মানুষদের লোমকূপ আটকে দিয়ে ব্রণের মতো সমস্যাগুলো বাড়িয়ে দিতে পারে, বিশেষ করে তরুণদের।

পরিবেশগত বিষয়

কোরিয়ান রূপচর্চার প্রসাধনী শীতল ও শুষ্ক আবহাওয়াতে ব্যবহার উপযোগী করে তৈরি। কারণ সে দেশের আবহাওয়া সেরকম।

অন্যদিকে এই উপমহাদেশের বেশিরভাগ অঞ্চল গ্রীষ্মপ্রধান। সাথে থাকে অতিরিক্ত আর্দ্রতা ও কড়া সূর্যের আলো।

তাই কোরিয়ান প্রসাধানীগুলোতে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতি রোধ করার মতো যথেষ্ট উপাদান থাকে না। এছাড়া ত্বকের তেল বা ‘সিবাম’ ও ঘাম নিয়ন্ত্রণে তেমন একটা কাজ করে না।

তাহলে কি ব্যবহার করা যাবে না?

উত্তরে ডা. শেঠি বলেন, “অন্ধের মতো ট্রেন্ড অনুসরণ না করে বরং ব্যক্তিগত ত্বক পরিচর্যা ও পরিবেশগত বিষয়গুলো বিবেচনা করতে পরামর্শ ‍দিব।”

এক্ষেত্রে ত্বক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে, ত্বকের ধরন অনুযায়ী কোন পণ্য কার্যকর ও উপকারী- সেটা ব্যবহার করতে হবে।

যদি উপকার পেতেই হয়, তবে এই অঞ্চলের আবহাওয়া, পরিবেশ ও ত্বকের ধরনের সাথে মিলিয়ে তৈরি করা প্রসাধনী ব্যবহারেই সর্বোচ্চ ফল পাওয়া যাবে বলে মনে করেন এই ত্বক বিশেষজ্ঞ।