যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘সম্পর্ক বজায় রাখতে যথাসাধ্য চেষ্টা’ করবে ইউক্রেইন

প্রকাশিত: ৯:১৬ অপরাহ্ণ, মার্চ ৪, ২০২৫

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প কিইভে সব সামরিক সহায়তা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়ার পর ইউক্রেইন বলেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে সম্ভব সব কিছু করবে।

জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসা ট্রাম্প যে এখন প্রতিনিয়ত রাশিয়ার আরও কাছে ঘেঁষার চেষ্টা করছেন, ইউক্রেইনে সামরিক সহায়তা বন্ধের নাটকীয় পদক্ষেপই তার প্রমাণ।

রাশিয়া ও ইউক্রেইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এতদিনের নীতি উল্টে দেওয়া রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্ট শুক্রবার হোয়াইট হাউজে জেলেনস্কির সঙ্গে তুমুল বাকবিতণ্ডায় জড়িয়েছিলেন। বলেছিলেন, ওয়াশিংটন যে পরিমাণ সমর্থন দিয়েছে তার তুলনায় ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ‘যথেষ্ট কৃতজ্ঞ নন’।

“প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার নজর যে শান্তির দিকে সে বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন। আমরা চাই, আমাদের অংশীদাররাও এই লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হোক। সমাধান নিশ্চিত করতে আমরা খানিক বিরতি দিচ্ছি এবং সহায়তা পর্যালোচনা করছি,” সোমবার মার্কিন এক কর্মকর্তা এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

ইউক্রেইনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস স্মিহাল বলেছেন, কিইভের এখনও যুদ্ধক্ষেত্রে সেনাদের প্রয়োজনীয় রসদ সরবরাহের সক্ষমতা আছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা খুবই মূল্যবান, তা হাজার হাজার প্রাণও বাঁচাচ্ছে; তাই ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে যা করা যায় কিইভ তার সবই করবে, বলেছেন তিনি।

“আমরা খোলা থাকা সব চ্যানেলের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ধীরস্থিরভাবে কাজ চালিয়ে যাবো। আমাদের একটিই পরিকল্পনা- জয়ী হওয়া ও টিকে থাকা। হয় আমরা জিতবো, নয়তো প্ল্যান বি অন্য কেউ লিখবে,” সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন ইউক্রেইনের প্রধানমন্ত্রী।

ক্রেমলিন বলেছে, তারা এখন পর্যন্ত ট্রাম্পের পদক্ষেপ সম্পর্কে নিশ্চিত না হলেও ইউক্রেইনে সামরিক সহায়তা বন্ধই হতে পারে শান্তির লক্ষ্যে সবচেয়ে সেরা পদক্ষেপ।

অবশ্য ট্রাম্প সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দিলেও তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়বে না।

গত বছরও কংগ্রেসের রিপাবলিকানরা বেশ কয়েক মাস ইউক্রেইনের সামরিক সহায়তা আটকে রেখেছিলেন, তাতে প্রথম দিকে ইউক্রেইনের বিমান প্রতিরক্ষায় ঘাটতি দেখা দিয়েছিল, তারা রাশিয়ার ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ভূপাতিত করতে পারছিল না। কিছুদিন পরে পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধ করা ইউক্রেইনীয় বাহিনী তাদের গোলাবারুদের সংকটের কথাও জানায়।

যুক্তরাষ্ট্র সামরিক সহায়তা স্থগিত করায় সবচেয়ে বেশি চাপ সৃষ্টি হবে ইউক্রেইনের ইউরোপীয় মিত্রদের ওপর। তার মধ্যে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের নেতারা গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউজে গিয়ে ট্রাম্পকে বোঝাতে চেষ্টা করেছিলেন, পরে ওভাল অফিসে বাকবিতণ্ডার পর জেলেনস্কিকে সাহসও যুগিয়েছেন।

ইউরোপিয়ানরা এখন কিইভকে সহায়তার পাশাপাশি নিজেদের সামরিক ব্যয় বাড়ানো নিয়েও চিন্তিত। তারা ভাবছে কোনো যুদ্ধবিরতি হলে ইউক্রেইনে শান্তিরক্ষী পাঠানোর কথাও, কিন্তু তাতেও তাদের কোনো না কোনোভাবে ওয়াশিংটনের সহায়তা লাগবে।

ইউক্রেইনে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা বন্ধের নিন্দা জানিয়েছে প্যারিস।

“এ সহায়তা বন্ধ শান্তিকে আরও দূরে ঠেলে দিয়েছে, কেননা এই পদক্ষেপ একমাত্র আগ্রাসনকারীকেই শক্তিশালী করেছে, আর সেটি হচ্ছে রাশিয়া,” বলেছেন ফ্রান্সের ইউরোপ বিষয়ক জুনিয়র মন্ত্রী বেনজামিন হাদাদ।

যুক্তরাজ্য অবশ্য এই তুলনায় বেশ সতর্ক। দেশটির সরকারের এক মুখপাত্র বলেছেন, ইউক্রেইনের শান্তি নিশ্চিত করতেই লন্ডন বদ্ধপরিকর।

যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপকে ইউক্রেইনের অনেকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবেও দেখছেন।

“দেখে মনে হচ্ছে, ট্রাম্প আমাদেরকে আত্মসমর্পণের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন,” বলেছেন ইউক্রেইনের পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির প্রধান ওলেকান্দর মেরেঝকো।

“হ্যাঁ, এটা বিশ্বাসঘাতকতা। এভাবেই বলা উচিত। তবে আশা করা যায় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক সমাজ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভিজাতরা আমাদেরকে একা ফেলে যাবে না,” বলেছেন কিইভের ৪৭ বছর বয়সী আইনজীবী ওলেনা বিলোভা।