মসজিদেও গণহত্যা! ঝালকাঠির ভয়াবহতা একাত্তরের কাগজে

প্রকাশিত: ২:০৩ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৬, ২০২৫

ঝালকাঠির ভয়াবহ গণহত্যার খবর উঠে এসেছিল ১৯৭১ সালে ৯ নম্বর সেক্টর থেকে প্রকাশিত ‌‍‘বিপ্লবী বাংলাদেশ’ পত্রিকায়। নুরুল আলম সম্পাদিত পত্রিকায় শিরোনাম ছিল ‘ঝালকাঠি না মাইলাই’।

ভিয়েতনামের মাইলাই গ্রামে মার্কিন সেনারা ১৯৬৮ সালের ১৬ মার্চ একদিনে যে ৫০৪ জন নারী-পুরুষকে হত্যা করেছিল তাকেও হার মানিয়েছিল তখনকার হিন্দু অধ্যুষিত ঝালকাঠির গণহত্যা। ২৭ এপ্রিল ঝালকাঠি শহরে আগুন দেওয়া থেকে শুরু করে অগাস্ট মাস পর্যন্ত ঝালকাঠি ও নলছিটির বিভিন্ন এলাকায় গণহত্যা চালানো হয়।

সারিবদ্ধভাবে পেছনে হাত বেঁধে নদীর পাড়ে একদিনে ১৯৫ জন সনাতন ধর্মাবলম্বীকে হত্যা কিংবা মসজিদ থেকে বের করে এনে ৯ জনসহ ৩ দিনে ২২ জনকে হত্যা অথবা পার্শ্ববর্তী সব হিন্দু গ্রামের মাঝখানে মুসলিম অধ্যুষিত একমাত্র গ্রাম বেশাইনখানে ২৫ জন মুসলমানসহ ৩০ জনকে হত্যা- এই ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করলে পাকিস্তানিদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার বোঝা যায়। তারা গণহত্যার সময় রক্তের নেশায় হিন্দু বা মুসলিম না বরং বাঙালি নিধনকেই মাথায় রাখত।

১৯৬ জনকে হত্যা, একমাত্র বেঁচে ফেরেন অমল

ঝালকাঠি সদর উপজেলার পোনাবালিয়া থেকে ১২৮ জন ও সাচিলাপুরের আশপাশ থেকে ৬৮ জনসহ মোট ১৯৬ জনকে একাত্তরের ৩০ মে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর পাড়ে (বর্তমান পৌর খেয়াঘাট) হত্যা করা হয়। গণহত্যার স্বীকার ১৯৬ জনের মধ্যে ১৯৫ জনই ছিল হিন্দু। একজন ছিলেন মুসলিম- আনসার আলী খান। তবে ১৯৬ জনের বাইরে শুধু ১৯৭তম ব্যক্তি হিসেবে বেঁচে এসেছেন বরিশালের অমল কংশবণিক। তিনি এই গণহত্যার জীবন্ত সাক্ষী।

অমল কংশবণিক বলেন, আমাদের ১৯৭ জনকে ঝালকাঠি থানায় এক রাত রাখা হয়। ভোর থেকে চার-চারজন করে দীর্ঘ সারিতে সুগন্ধা নদীর পাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। চারজন করে গুলি করে মারা হয়। শেষের দিকে এক পুলিশের দয়া হয় ১০ বছরের আমাকে দেখে। রশি খুলে দিয়ে তিনি আমাকে পালাতে বলেন। আমি নদীর সাঁতরে কোনোমতে ওই পারে উঠলে মাঝিরা আমাকে বাঁচায়।”

ঘটনার দিনটি যে ৩০ মে, এটি জানান ঝালকাঠির স্থানীয় চাঁদ মোহন কংশবণিক। তার আপন বড় ভাই সতীশ চন্দ্র কংশবণিক, ভাইয়ের দুই ছেলে সুধীর চন্দ্র কংশবণিক ও সুনীল চন্দ্র কংশবণিকসহ এই বংশের আরো অনেককে হত্যা করা হয়।

যার মধ্যে আছেন অনিল কংশবণিক, সুবল চন্দ্র কংশবণিক ও রাখাল চন্দ্র কংশবণিক। এ ছাড়া মনোরঞ্জন সাহা, গোপাল সাহা, রামপ্রসাদ চক্রবর্তী, নিরুপদী চক্রবর্তী, গৌরঙ্গ দাস (ধোপা), পরান সাহা, যামিনী সাহা, গুপিনাথ সাহা ও মদন সাহাসহ অনেককে হত্যা করা হয় সেদিন।

মসজিদের মুসল্লিদের গণহত্যা

অন্যদিকে, ঝালকাঠি সদর উপজেলার কীর্ত্তিপাশা ইউনিয়নের পশ্চিম দিকে বেশাইনখান গ্রাম আর পূর্ব দিকের একটি গ্রাম রমানাথপুর। দুটি স্থানে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদাররা গণহত্যা চালিয়েছে। বিশেষত রমানাথপুরের শরীফবাড়ী জামে মসজিদ থেকে মুসল্লিদের বের করে এনে হাত বেঁধে কোলায় (ফসলের মাঠ) দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।