সৌদি আরবে নরেন্দ্র মোদির সফর কেন গুরুত্বপূর্ণ?

প্রকাশিত: ৫:৫৭ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২২, ২০২৫

দুই দিনের জন্য সৌদি আরব সফরে গেলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার এই সফর দুই দেশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের আমন্ত্রণে মোদী জেদ্দা গিয়েছেন। গত ৪০ বছরের মধ্যে এই প্রথম কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী জেদ্দা গেলেন।সাধারণত ভারতের প্রধানমন্ত্রী রিয়াদেই যান। গত দুইবার মোদিও সেখানেই গিয়েছেন।

মোদির সফরকালে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, বিদ্যুৎ, প্রতিরক্ষার মতো ক্ষেত্রে চুক্তি হতে পারে। ১২টি এমওইউ বা সমঝোতাপত্র সই হতে পারে। সৌদি আরব চায় তেল কেনা নিয়ে ভারত দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি করুক। ভারত চায়, সৌদি আরব ভারত থেকে আরো হজযাত্রীকে হজ করতে যাওয়ার অনুমতি দিক। এই নিয়ে আলোচনার পর সৌদি আরব ভারতীয় হজযাত্রীর সংখ্যা বাড়াতে রাজি হয়েছে। এই বিষয়টি নিয়েও নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে যুবরাজ সালমানের মধ্যে আলোচনা হতে পারে।

এছাড়া ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ ইকনমিক করিডোর (আইম্যাক) নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে।

নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ‘সৌদি আরব হলো ভারতের বিশেষ বন্ধু এবং দুই দেশের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক আছে। দুই দেশের অংশীদারিত্বকে ভারত ভারত খুবই মূল্য দেয়।’

সৌদির খবরের চ্যানেল আরব নিউজকে মোদি বলেছেন, ‘ভারত ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্কের সীমাহীন সম্ভাবনা আছে।’

সৌদি আরবে ভারতের রাষ্ট্রদূত সুহেল আয়াজ খান সংবাদসংস্থা পিটিআইকে বলেছেন, ‘ভারত-সৌদি আরব যোগাযোগের ক্ষেত্রে জেদ্দা খুবই গুরুত্বপূর্ণ শহর। বহু শতক ধরে জেদ্দা বন্দর থেকে দুই দেশের বাণিজ্য হয়েছে। তাছাড়া জেদ্দা হলো হজ ও উমরাহ করতে যাওয়ার গেটওয়ে। এখান থেকেই সবালে মক্কা যান।’

তিনি বলেছেন, ভারত হজযাত্রীদের সংখ্যা বাড়ানোর উপর খুবই জোর দিয়েছিল। ২০২৫ সালে ভারতীয়দের জন্য হজের কোটা ঠিক করা হয়েছিল এক লাখ ৩৬ হাজার ২০ জন। এই বিষয়টি নিয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ভারতীয় কর্মকর্তারা দীর্ঘ বৈঠক করেছেন। এখন ঠিক হয়েছে ভারত থেকে এবার এক লাখ ৭৫ হাজার ২৫ জন হজ করতে যেতে পারবেন।

প্রধানমন্ত্রী মোদি ও যুবরাজ সালমান ভারত-সৌদি আরব স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ মিটিং দ্বিতীয় বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন।

কেন এই সফর গুরুত্বপূর্ণ?

ভারতের পররাষ্ট্র বিশেষজ্ঞ রবীন্দ্র সচদেব বলেছেন, ‘অনেকগুলি কারণে এই সফর খুবই গুরুত্ব পাচ্ছে। সৌদি ভারত ও ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বাড়ানো ছাড়াও আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ আর্থিক করিডোর(আইম্যাক)।’

ভারত থেকে সমুদ্রপথে আমিরাত, তারপর রেলপথে সৌদি আরব, জর্ডার্ন, ইসরায়েল হয়ে গ্রিসে যাবে এই করিডোর। ভারতের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী ও য়ুবরাজ সালমান এই প্রকল্প নিয়ে কথা বলবেন।

রবীন্দ্র সচদেব বলেছেন, ‘আজ হোক বা কাল গাজার পুনর্গঠন করতে হবে। সেখানে আইম্যাক করিডোর বড় ভূমিকা নিতে পারে। সৌদি আরবের হাতে অর্থ আছে। ভারতের কাছে বাজার আছে, যেখানে বিনিয়োগ করে লাভ ওঠাতে পারে সৌদি আরব। সেদিক থেকেও সফরের গুরুত্ব অপরিসীম।’

সৌদির যুবরাজ সালমানের নিওমকে ভবিষ্যতের স্বপ্নের শহর হিসাবে গড়ে তুলতে চান। এটা ৫০ হাজার কোটি ডলারের প্রকল্প। সেখানে ভারতের ইঞ্জিনিয়ার, প্রযুক্তিবিদ, প্রযুক্তি, শ্রমিকদের সৌদির প্রয়োজন হবে বলে মনে করেন তিনি।

সৌদি আরবের জেলে আড়াই হাজার ভারতীয় বন্দী আছেন। হয় ঠিকভাবে নিয়ম না জানায় বা লঘু অপরাধে তারা জেলে বন্দি। তাদের মুক্তি নিয়েও আলোচনা হতে পারে বলে সচদেব জানিয়েছেন। তাছাড়া অপ্রচলিত শক্তি, বিকল্প শক্তি, গ্রিন হাইড্রোজেন নিয়ে কথা হবে।