মার্কিন-সমর্থিত গাজা সাহায্য গোষ্ঠীর প্রধানের পদত্যাগ

প্রকাশিত: ১২:২৪ অপরাহ্ণ, মে ২৬, ২০২৫

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় সহায়তার জন্য যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সমর্থিত একটি সংগঠন গঠন করা হয়েছিল। বলা হচ্ছিল, জাতিসংঘ নয়, এই সংস্থার মাধ্যমেই গাজায় ত্রাণ দেওয়া হবে। কিন্তু বিষয়টিতে মানবিক উদ্দেশ্য নেই এমন অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করেছেন সংস্থার প্রধান।

গতকাল রবিবার গাজা উপত্যকায় সাহায্য প্রেরণের প্রস্তুতি নেয়ার প্রাক্কালে বিতর্কিত মার্কিন-সমর্থিত গোষ্ঠীর প্রধান তার আকস্মিক পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) এর এক বিবৃতিতে নির্বাহী পরিচালক জ্যাক উড ব্যাখ্যা করেছেন, সংস্থাটি ‘মানবিক নীতি’ মেনে চলার মাধ্যমে তার লক্ষ্য পূরণ করতে পারে না তা নির্ধারণ করার পরে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ হলেন।

ফেব্রুয়ারি থেকে জেনেভায় অবস্থিত এই ফাউন্ডেশনটি তাদের কার্যক্রমের প্রথম ৯০ দিনের মধ্যে প্রায় ৩০ কোটি খাবার বিতরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে জাতিসংঘ এবং ঐতিহ্যবাহী সাহায্য সংস্থাগুলো ইতোমধ্যেই বলেছে, তারা গোষ্ঠীর সাথে সহযোগিতা করবে না। কারণ, তাদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সঙ্গে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে।

গাজার পরিস্থিতি নিয়ে ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধির সাথে সাথে ‘জিএইচএফ’ আত্মপ্রকাশ করেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, ইসরায়েলে হামাসের হামলার প্রতিক্রিয়ায় তারা সামরিক আক্রমণ চালিয়েছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে এই অঞ্চলে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা অবরোধ শিথিল হতে শুরু করেছে। কারণ, সংস্থাগুলো ক্রমবর্ধমান অনাহারের ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করেছিল।

উড বলেছেন, ‘দুই মাস আগে মানবিক কার্যক্রমে আমার অভিজ্ঞতার কারণে জিএইচএফ-এর প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়ে আমার সাথে যোগাযোগ করা হয়েছিল।’

একজন মানবিক নেতা হিসেবে ‘বিশ্বজুড়ে অনেকের মতো আমি গাজার ক্ষুধা সংকটে ভীত এবং হৃদয় ভেঙে পড়েছিলাম এবং দুর্ভোগ লাঘবে আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করতে বাধ্য হয়েছিলাম।’

উড জোর দিয়ে বলেছেন, ‘আমি যে কাজ তদারকি করেছি তাতে গর্বিত, যার মধ্যে রয়েছে একটি বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা তৈরি করা যা ক্ষুধার্ত মানুষকে খাওয়াতে পারে।

ডাইভারশন সম্পর্কে নিরাপত্তা উদ্বেগ মোকাবেলা করতে পারে এবং গাজায় দীর্ঘস্থায়ী এনজিওগুলির কাজের পরিপূরক হতে পারে।’ কিন্তু, তিনি বলেছেন, ‘এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, মানবতা, নিরপেক্ষতা এবং স্বাধীনতার মানবিক নীতিগুলো কঠোরভাবে মেনে চলার সময় এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।’

অন্যদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে এই অঞ্চলে কমপক্ষে ৩ হাজার ৭৮৫ জন নিহত হয়েছে। এতে যুদ্ধে মোট মৃতের সংখ্যা ৫৩ হাজার ৯৩৯ জনে দাঁড়িয়েছে। এদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। সরকারী পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে এএফপি’র এক হিসাব অনুসারে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলের ওপর হামাসের আক্রমণের ফলে ১২১৮ জন নিহত হয়। যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। স্বাধীনতাকামী হামাস যোদ্ধারা ২৫১ জনকে জিম্মি করে, যাদের মধ্যে ৫৭ জন গাজায় রয়ে গেছে, যার মধ্যে ৩৪ জন ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলেছে, মারা গেছে।

উড ইসরায়েলকে ‘সকল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গাজায় সাহায্যের ব্যবস্থা উল্লেখযোগ্যভাবে সম্প্রসারণ করার’ আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি ‘সকল অংশীদারদের বিলম্ব, বিচ্যুতি বা বৈষম্য ছাড়াই সাহায্য সরবরাহের জন্য উদ্ভাবনী নতুন পদ্ধতি খুঁজে বের করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।