‘প্রকৃত বন্ধু’ বেলারুশের প্রশংসা করলেন চীনা প্রেসিডেন্ট

প্রকাশিত: ৬:০১ অপরাহ্ণ, জুন ৪, ২০২৫

বেলারুশকে ‘চীনের প্রকৃত বন্ধু’ বলে প্রশংসা করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। বুধবার বেইজিংয়ে নিষেধাজ্ঞাগ্রস্ত ইউরোপীয় দেশের নেতা আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে বৈঠকে এমন মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় দুই দেশকে ক্ষমতার দাপট ও দাদাগিরির বিরুদ্ধে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান শি। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী ঘোষিত হওয়ার পর এই প্রথম চীন সফরে যান ৩১ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা লুকাশেঙ্কো। তার এই জয় পশ্চিমা দেশগুলো ‘ভুয়া নির্বাচন’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।

রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনে সক্রিয় সমর্থনের কারণে বেলারুশ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও শুল্কের মুখে পড়েছে। পশ্চিমা বাজার থেকে ছিটকে পড়া মিনস্ক ক্রমশ পূর্ব দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এর অংশ হিসেবে ইউক্রেন আক্রমণের সময় রুশ সেনাদের নিজেদের ভূখণ্ড ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছিল তারা।

বেইজিংয়ে লুকাশেঙ্কোকে অভ্যর্থনা জানিয়ে শি জিনপিং বলেন, ‘চীন ও বেলারুশ প্রকৃত বন্ধু এবং ভালো অংশীদার।’ চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানায়, শি আরও বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব অটুট রয়েছে, পারস্পরিক রাজনৈতিক আস্থা অবিচল।’

তিনি বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে আধিপত্যবাদ ও দাদাগিরির বিরোধিতা করব এবং আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার ও সাম্য রক্ষা করব।’

বেলারুশের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বেলটাকে লুকাশেঙ্কো বলেন, ‘আপনি সঠিকভাবে বলেছেন, বর্তমান যুগের মূল বৈশিষ্ট্য হলো আমাদের ওপর পশ্চিমা বিশ্বের নজিরবিহীন চাপ, বিশেষ করে চীনের ওপর।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজ বেলারুশসহ অনেক দেশের নজর এখন আপনাদের দিকে, বেইজিংয়ের দিকে।

গত মাসেই শি জিনপিং রাশিয়া সফরে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং যুক্তরাষ্ট্র-নির্ভর বিশ্বব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে ‘অটল-বন্ধুত্বের’ প্রতিশ্রুতি দেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউজে ফিরে আসার পর চীন ও রাশিয়ার ওপর ওয়াশিংটনের চাপ আরও বেড়েছে। মস্কোকে ইউক্রেন যুদ্ধ দ্রুত বন্ধের আহ্বান জানানো হয় এবং বেইজিংকে নতুন বাণিজ্য শুল্কের মুখে ফেলে যুক্তরাষ্ট্র।

লুকাশেঙ্কো ১৫ বার চীন সফর করেছেন এবং বরাবরই চীনা ঋণ ও বিনিয়োগের ওপর ভরসা করেছেন। যদিও বেলারুশ ঐতিহ্যগতভাবে রাশিয়ার প্রভাববলয়ের অন্তর্ভুক্ত বলে ধরা হয়। কিন্তু গত বছর থেকেই বেইজিংয়ের দিকে আরও বেশি ঝুঁকেছে মিনস্ক। তারা ব্রিকসের অংশীদার এবং সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) পূর্ণ সদস্যও হয়েছে।

তবে এশিয়ার এই উষ্ণ কূটনীতির মধ্যেও অর্থনৈতিক ভারসাম্যহীনতা রয়ে গেছে। ২০২৪ সালে চীনের সঙ্গে বেলারুশের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ৪৭.৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.৭৭ বিলিয়ন ডলারে। চীনের রফতানি করা গাড়ি, ডিজিটাল টিভি রিসিভার ও ওয়াশিং মেশিনের চেয়ে বেলারুশের কৃষিজ সারজাত পণ্যের আমদানি অনেক কম।

চীন সরকার বলছে, তারা দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীর করতে চায় এবং বেলারুশের শিল্প খাত আধুনিকীকরণে সহায়তা করবে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই বন্ধুত্বে যতটা জাঁকজমক, অর্থনৈতিক বাস্তবতায় ততটাই অসমতাপূর্ণ।