এক রুমিনকে ঠেকাতে ৭ জন প্রার্থীর জোট প্রকাশিত: ৪:০৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৬, ২০২৫ ভোটের মাঠে আগে থেকেই ‘বহিরাগত’ তকমা দিয়ে কোণঠাসা করার চেষ্টা চলছে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাকে। দলের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা এই তকমা ব্যবহার করে মাঠে অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা করছেন। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী রুমিন ফারহানার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন একই আসনের সাতজন মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ নিয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর আশুগঞ্জের একটি রেস্তোরাঁয় তারা বৈঠক করেন। তাদের দাবি, সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা নন—এমন কাউকে যেন দলীয় প্রতীক ‘ধানের শীষ’ না দেওয়া হয়। এ উদ্দেশ্যে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। স্থানীয় বিএনপি সূত্রে জানা যায়, ওই বৈঠকে অংশ নেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ মো. শামীম, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আনিসুল ইসলাম ঠাকুর, আইন সম্পাদক নুরুজ্জামান লস্কর তপু, জেলা বিএনপির সদস্য আহসান উদ্দিন খান শিপন, আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান সিরাজ এবং জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আক্তার হোসেন। ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব এসএন তরুণ দে। বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল রুমিন ফারহানার প্রার্থীতা ঠেকানো। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে দীর্ঘদিন ধরে দলের পাশে থাকা, কারাভোগ করা ও মাঠে কাজ করা স্থানীয় নেতাদের মধ্য থেকেই মনোনয়ন দেওয়া উচিত। তাদের অভিযোগ, রুমিন ফারহানা সরাইল-আশুগঞ্জের স্থায়ী বাসিন্দা বা ভোটার নন। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গেজেটে আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তী ও চান্দুরা ইউনিয়ন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) থেকে কেটে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এই পরিবর্তনের পক্ষে ছিলেন রুমিন ফারহানা, আর বিপক্ষে ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব (শ্যামল)সহ স্থানীয় অনেক নেতা। ‘বিএনপির ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত এই আসনে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগ থেকেই মাঠে সক্রিয় রুমিন ফারহানা বর্তমানে সেখানে প্রভাবশালী অবস্থানে রয়েছেন। তবে দলের একটি অংশ এখনও তাকে ‘বহিরাগত’ হিসেবে বিবেচনা করে। রুমিন ফারহানার পারিবারিক শিকড় ও অবস্থানতার বাবা ভাষাসৈনিক অলি আহাদ ছিলেন বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তী ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা। বর্তমানে রুমিন ফারহানা সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামের ভোটার। বিজয়নগর উপজেলা ২০১২ সালে সদর উপজেলা থেকে পৃথক হয়। ফলে আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের পর তার ‘বহিরাগত’ ইমেজ অনেকটাই কেটে গেছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। বহিরাগত তকমা প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, “আমি বাংলাদেশের নাগরিক। আমার বাবার জন্ম বুধন্তী ইউনিয়নে, যা এখন সরাইলের সঙ্গে যুক্ত। বাবা ভাষাসৈনিক অলি আহাদ ১৯৭৩ সালে এখান থেকেই প্রার্থী হয়েছিলেন। আমাদের পরিবার এখনও সরাইল এলাকায় ১০০ বিঘা পৈতৃক সম্পত্তির মালিক। তাহলে আমি কিভাবে বহিরাগত হই?” তিনি আরও বলেন, “এটি বিএনপির ঐতিহ্যবাহী আসন। সরাইল ও আশুগঞ্জে আমার জনসভাগুলোতে বিপুল সাড়া পাচ্ছি। সম্প্রতি সরাইলে আমার এক জনসভায় প্রায় ৩০–৩৫ হাজার লোক সমাগম হয়েছিল। আমি নিয়মিত এলাকায় যাচ্ছি এবং মনোনয়ন নিয়ে শতভাগ আশাবাদী।” স্থানীয় নেতাদের মতামতসরাইল উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক মশিউর রহমান মাস্টার বলেন, “রুমিন ফারহানা এখন সরাইলের ভোটার। বিজয়নগরের বুধন্তি তার আদি বাড়ি। বিজয়নগরের দুটি ইউনিয়ন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় তাকে আর বহিরাগত বলা যায় না।” অন্যদিকে সরাইল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুজ্জামান লস্কর তপু বলেন, “যারা ১৫–১৬ বছর ধরে দলের জন্য কাজ করেছেন, তাদের মধ্যে থেকেই মনোনয়ন দেওয়া উচিত। তবে দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত—যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, আমরা সবাই তার পক্ষে কাজ করব।” SHARES গণমাধ্যম বিষয়: