ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানি ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ২:১৫ অপরাহ্ণ, মার্চ ৩০, ২০২৪

রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুকের সঙ্গে বৈঠকে ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানিতে বাংলাদেশের আগ্রহের কথা আগ্রহ প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ।

গত ২৫ মার্চ (সোমবার) ঢাকার একটি হোটেলে ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুকের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় মন্ত্রী জলবিদ্যুৎ আমদানি ও প্রক্রিয়ায় ভারতের প্রত্যাশিত সহযোগিতার বিষয়ে চলমান আলোচনার কথা উল্লেখ করেন।

রাজা ওয়াংচুক ও রানি জেটসুন পেমা বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের জন্য ঢাকা সফর করেন। এ সময় রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন বিমানবন্দরে তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান।

২০২২ সালের সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে রাষ্ট্রীয় সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতের মাধ্যমে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আমদানির সুবিধার্থে সম্মত হন।

এ বিষয়ে ভুটান, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় আলোচনা চলছে। বাংলাদেশ ২০২৩ সালে ভুটান থেকে প্রাথমিকভাবে প্রায় ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা করেছিল। এরই মধ্যে ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটানের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) উন্নয়নের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এ চুক্তির লক্ষ্য একটি পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণের জন্য যৌথ বিনিয়োগকে সহজতর করা।

ভুটানের স্থাপিত ক্ষমতা ছিল ২ হাজার ৩৩৫ মেগাওয়াট, যা দেশের মোট জলবিদ্যুৎ সম্ভাবনার ৭ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে। ২০২১ সালে মোট উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ০৫৯ গিগাওয়াট/ঘণ্টা, যার ৭৩ দশমিক ৯ শতাংশ বা ৮ হাজার ১৭৮.৩৮ গিগাওয়াট/ঘণ্টা ভারতে রফতানি হয়েছে।

সে সময় তিনটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প- পুনা-১, পুনা-২ ও নিকাছু এর কার্যক্রম শুরু হয়, যা যথাক্রমে এ বছর জুলাই এবং ডিসেম্বর ২০২৩-এর মধ্যে সম্পন্ন জন্য নির্ধারিত ছিল। একইভাবে তিনটি মিনি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প- বুরগাংছু (৫৪ মেগাওয়াট), ইউঙ্গিছু (৩২ মেগাওয়াট) এবং সুছু (১৮ মেগাওয়াট) সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী যথাক্রমে ডিসেম্বর ২০২৪, মার্চ ২০২৫ এবং জুলাই ২০২৪ এর মধ্যে চালু হওয়ার জন্য নির্ধারিত ছিল।

ভুটান থেকে শক্তি আমদানির বৈশিষ্ট্য বোঝার জন্য ভারত ও ভুটানের মধ্যে শক্তি সহযোগিতার প্রকৃতি উপলব্ধি করা অপরিহার্য। এই দুই দেশের মধ্যে শক্তির সহযোগিতা গভীরভাবে একটি দীর্ঘস্থায়ী এবং পারস্পরিকভাবে উপকারী অংশীদারিত্বের মধ্যে নিহিত, যা প্রাথমিকভাবে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রিক।

ভারত ও ভুটানের মধ্যে বিদ্যুৎ বিনিময়ের দিক ঋতু অনুসারে পরিবর্তিত হয়। গ্রীষ্মকালে ভুটান ভারতে বিদ্যুৎ রফতানি করে। শীতকালে ভুটান ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করে। বিশেষ করে আর্দ্র ঋতুতে ভারত ও ভুটানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিদ্যুতের লেনদেন হয়।

বর্ষা ঋতু ভুটানে পানির স্তর বৃদ্ধির দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। এর ফলে বিশেষ করে জুন, জুলাই এবং আগস্ট মাসে বিদ্যুৎ প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। তবে আগস্ট থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত শীত শুরু হওয়ায় বিদ্যুৎ ব্যবসায় ক্রমশ কমতে থাকে। ভুটানে শুষ্ক শীতের অভিজ্ঞতা হয় যেখানে গড় বৃষ্টিপাত কমে যায় এবং গরম করার জন্য উচ্চ বিদ্যুতের চাহিদা থাকে। বছরের পর বছর ধরে ভুটান থেকে রফতানি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ২০০০ সালে ১,৪৬০.৫ গিগাওয়াট/ঘণ্টা থেকে বেড়ে ২০১৯ সালে ৬,১৮২.৫ গিগাওয়াট/ঘণ্টা এ পৌঁছেছে।

ভুটানে অসংখ্য জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ভারতের বিনিয়োগের লক্ষ্য হল দেশে উপলব্ধ স্বল্পমূল্যের নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ অ্যাক্সেস করা, যা উভয় দেশের জন্য পারস্পরিক সুবিধা প্রদান করে।

ভুটান ও ভারত পাঁচটি স্বতন্ত্র ট্রান্সমিশন লাইনের মাধ্যমে যুক্ত। ভারতের মধ্যে দুটি অঞ্চল জুড়ে কাজ করছে উত্তর-পূর্ব অঞ্চল এবং পূর্বাঞ্চল। পূর্বাঞ্চলের (ইআর) সঙ্গে সংযোগের সুবিধা প্রদানকারী ট্রান্সমিশন লাইনগুলোর মধ্যে রয়েছে ৪০০kV মাংদেছু-আলিপুরদুয়ার ১ এবং ২ লাইন। ১৩২KV-গেইলেগফু-সালাকাটি এবং ১৩২kV মোটাঙ্গা-রাঙ্গিয়া ট্রান্সমিশন লাইনের মাধ্যমে ভুটান ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের (NER) সঙ্গেও সংযুক্ত।

পূর্বে উল্লিখিত হিসাবে, ভুটান প্রাথমিকভাবে ভারতে বিদ্যুৎ রফতানি করে একটি নিট রফতানিকারক অবস্থা বজায় রাখে। ভুটান ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান অবকাঠামো ভুটান থেকে বাংলাদেশে জ্বালানি আমদানি সহজতর করার জন্য একটি দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করে। ভুটান ও ভারতের মধ্যে সুপ্রতিষ্ঠিত ট্রান্সমিশন লাইন এবং আন্তঃসংযুক্ত গ্রিড সহ, শক্তি বিনিময়ের জন্য ভৌত কাঠামো ইতিমধ্যেই রয়েছে। এই অবকাঠামো শুধু ভুটানকে ভারতে উদ্বৃত্ত জলবিদ্যুৎ রফতানি করতে সক্ষম করে না বরং বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোতে জ্বালানি বাণিজ্য নেটওয়ার্ক প্রসারিত করার জন্য একটি বাহকও প্রদান করে। বাংলাদেশের সীমান্তের সঙ্গে ভুটানের ভৌগোলিক নৈকট্য শক্তি আমদানির জন্য কানেক্টিভিটি অবকাঠামো নির্মাণের কাজকে সহজ করে। ভুটান এবং বাংলাদেশের মধ্যে স্বল্প দূরত্বের পরিপ্রেক্ষিতে সঞ্চালন লাইন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ আরো সম্ভাব্য এবং সাশ্রয়ী হয়ে ওঠে। এই প্রক্সিমিটি ট্রান্সমিশন লস কমিয়ে দেয় এবং দুই দেশের মধ্যে শক্তি স্থানান্তরের দক্ষতা বাড়ায়।