খাগড়াছড়ির পাহাড়ে কফির আবাদ, সম্ভাবনার হাতছানি

প্রকাশিত: ২:৩৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৫, ২০২৪

‘২০২১ সালে কফি চাষ শুরু করি। বর্তমানে পাঁচ একর জমিতে কফির বাগান রয়েছে। প্রথম বছরে লাগানো চারাগুলোর মধ্যে ৫০০ থেকে ৬০০ চারায় কফি আসে। সেই গাছগুলো থেকে পাঁচ থেকে ছয় কেজি কফি সংগ্রহ করি। এক কেজি কফি ব্লেন্ড করে পাউডার করেছি। এই কফির স্বাদ ও ঘ্রাণ বাজারের প্রচলিত কফির চেয়ে অনেক ভালো। বর্তমানে বাগানের প্রায় পাঁচ হাজার গাছের সবগুলোতেই ফুল এসেছে। বাগানটি এখন ফুলে ফুলে পূর্ণ। আশা করছি, এ বছর কফির ভালো ফলন পাওয়া যাবে।’

সারাবাংলাকে কথাগুলো বলছিলেন পাবর্ত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার মরাটিলা গ্রামের ননী গোপাল ত্রিপুরা। পাহাড়ের স্থানীয় এই বাসিন্দা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। শিক্ষকতার পাশাপাশি পৈত্রিক সম্পত্তিতে গড়ে তুলেছেন কফির বাগান।

সম্ভবনাময় এই ফসল নিয়ে এখন স্বপ্ন বুনছেন ননী গোপাল। আরও অনেকেই সেই সম্ভাবনার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে কফি চাষ অনেক সম্ভাবনাময়। আমার দেখাদেখি এই এলাকার অনেকেই কফি চাষে এগিয়ে এসেছেন।’

দেশে কাজুবাদাম ও কফির আবাদ বাড়াতে কয়েক বছর আগে ‘কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অধীন এ প্রকল্পের আওতায় চলছে প্রর্দশনী, দেওয়া হচ্ছে নানা সহায়তা।২০২১ সালের জুনে শুরু হওয়া পাঁচ বছর মেয়াদি এই প্রকল্পটির কাজ ২০২৫ সালে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় পার্বত্য অঞ্চলের তিন জেলার ২৫টি উপজেলাসহ অন্যান্য উপযোগী এলাকায় কফি ও কাজুবাদাম চাষ সম্প্রসারণ, উৎপাদন বৃদ্ধি, প্রক্রিয়াজাত ও বিপণনের মাধ্যমে কৃষকের আয় ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং আর্থসামাজিক অবস্থার টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য রয়েছে। পাহাড়ের অনাবাদি জমিকে আবাদযোগ্য করে তোলাও এই প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য। এ প্রকল্পের আওতায় কফির চারা ও সারসহ বিভিন্ন সহায়তা পেয়ে আসছেন খাগড়াছড়ির ননী গোপাল ত্রিপুরাও।

পৈত্রিক ৫ একর জমিতে কফির বাগান গড়ে তুলেছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ননী গোপাল ত্রিপুরা। পাহাড়ের আদি এই বাসিন্দা একইসঙ্গে আম ও কফির বাগান করেছেন। ননী গোপাল বলেন, ‘প্রকল্প শুরু হওয়ার প্রথম দিকে, অর্থাৎ ২০২১ সালে স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সহযোগিতায় এ অঞ্চলে আমিই প্রথম কফি চাষ শুরু করি। প্রকল্পের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে কফির চারা ও সার দেওয়া হয়। বাগান পরিচর্চার জন্য আর্থিক সহায়তাও দেওয়া হয়। এলাকায় আগে কখনো কফি চাষ দেখিনি। আমাদের ভারত থেকে কফির চারা এনে দেওয়া হয়। দেশে কফি চাষের সম্ভাবনা অনেক। এ ছাড়া আম ও কলা বাগানে একইসঙ্গে কফি চাষ করা যাচ্ছে। এ কারণেই কফি চাষে এগিয়ে এসেছি।’

ননী গোপাল আরও বলেন, ‘কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসেছিলেন। তারা জানিয়েছেন, আকিজ গ্রুপ এখানে বাণিজ্যিকভাবে কফি প্রক্রিয়াজাত করবে। কফি চাষে বেশ লাভ হবে বলে প্রত্যাশা করছি। ইউটিউবে অনেক ভিডিওতে দেখেছি, সমতলে যারা কফি চাষ করছে তারা প্রতি কেজি কফির পাউডার দুই হাজার টাকায় বিক্রি করছে। প্রথম বছরে আবাদ করা কফির চারা থেকে যে পাঁচ-ছয় কেজি কফি ফল পেয়েছি, তা ব্লেন্ড করে এক কেজির মতো পাউডার করেছি। দেশীয় এই কফির স্বাদ ও ঘ্রাণ বেশ ভালো। বাজার থেকে কিনে আমরা যে কফি খাই তার চেয়ে এই কফির স্বাদ ও ঘ্রাণ অনেক ভালো।’

প্রথম বছর তথা ২০২১ সালে দুই হাজার কফির চারা লাগিয়েছিলেন ননী গোপাল ত্রিপুরা। এর মধ্যে পাঁচ থেকে ছয় শ গাছে ফল আসে গত বছর। এর আগে কখনো তারা কফি গাছ বা ফল দেখেননি। তাই কিছু ফল এখনো সংগ্রহে রেখে ছিলেন ননী। জানালেন, এরপর ধীরে ধীরে কফির পাঁচ হাজার চারা লাগিয়েছিলেন বাগানে।