নেপথ্যে দলিল লেখক সমিতি, লাশ নিয়ে অপরাজনীতি চায় না পরিবার প্রকাশিত: ৪:৩৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ২, ২০২৪ আওয়ামী লীগের দুইপক্ষের সংঘর্ষে নিহত দলটির রাজশাহীর বাঘা উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুলের পরিবার লাশ নিয়ে রাজনীতি চায় না। বাবুলের স্ত্রী জরিনা বেগম বেবি বলেন, ‘স্বামীর লাশ নিয়ে অপরাজনীতি হোক, সেটা চাই না। ’লাশ নিয়ে রাজনীতি আহত হওয়ার ৪দিন পর গত ২৬ জুন হাসপাতালে মারা যান আশরাফুল ইসলাম বাবুল। পরদিন জানাজায় বাবুলের লাশ সামনে রেখে স্থানীয় এমপি শাহরিয়ার আলম বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে মদদদাতা আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটির মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আসাদুজ্জামান আসাদ। তিনি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার ঘোষণা দেন। ওই জানাজা থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকারকে বের করে দেওয়া হয়। জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলির ডালা নিয়ে গেলেও তাকে সেটা বাবুলের মরদেহে দিতে দেওয়া হয়নিশাহরিয়ারের ওই বক্তব্যের পর মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এসব ঘটনায় আমার সম্পৃক্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই, সুযোগও নেই। মনে হচ্ছে রাজনীতি করতে শাহরিয়ারের একটা লাশের প্রয়োজন ছিল।’ সংঘর্ষের সময় সবাই বাবুলকে কেন একা ফেলে গেলেন এবং কেন এমপি শাহরিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় নিলেন না সে প্রশ্ন তুলে লিটন অনুসারীরা কর্মসূচি পালন করেছেন। তারাও বাবুল খুনের বিচার চেয়ে এমপি শাহরিয়ারকে রাজশাহী শহরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন। পাশাপাশি লিটন-আসাদকে জড়িয়ে দেওয়া বক্তব্য প্রমাণ করতে শাহরিয়ারকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন। দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আগে থেকেই দুই ধারায় বিভক্ত। জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বাঘা পৌর মেয়র আক্কাস আলী, যুগ্ম সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন লাভলু ও জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বাঘার পাকুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম মেয়র লিটন ও এমপি আসাদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। বাবুল খুনের দিন দুইপক্ষের সংঘর্ষের সময় মেয়র আক্কাস ও ইউপি চেয়ারম্যান মেরাজুল উপস্থিত ছিলেন। সেই কারণে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে লিটন-আসাদকে জড়িয়েছেন শাহরিয়ার। রাজনীতি চান না বাবুলের পরিবার বাবুলের লাশ নিয়ে রাজনীতি চান না বাবুলের পরিবার। দলাদলির কারণে বাবুলের প্রকৃত খুনিরা আড়ালে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা পরিবারের। বাঘার গাওপাড়ায় বাবার বাড়িতে বাবুলের স্ত্রী জরিনা বেগম বেবী রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‘লিটন ভাই ও আসাদ ভাইয়ের সঙ্গে কোনো ধরনের দ্বন্দ্ব ছিল না। একসময় আমার স্বামী তাদের সঙ্গেই রাজনীতি করতেন। সবার সঙ্গেই আমাদের ভালো সম্পর্ক ছিলো। তাদের সঙ্গে আমাদের বিরোধ ছিলো না। আমরা লাশ নিয়ে রাজনীতি চাই না। খুনিদের দ্রুত বিচার চাই।’ নিহত বাবুলের ছেলে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আশিক জাবেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘লিটন-আসাদ ইস্যুতে এখন আলোচনা ভিন্নদিকে। এতে বাবার প্রকৃত খুনিরা আড়ালে চলে যেতে পারে। আমরা এ বর্বর হত্যার বিচার চাই।’ নেপথ্যে দলিল লেখক সমিতি! একপক্ষের মানববন্ধন, অন্যপক্ষের বিক্ষোভ। আগের রাতেই দুইপক্ষের লোকজন নিজ নিজ কর্মসূচির ব্যানার ফেসবুকে পোস্ট করতে থাকেন। একই স্থানে দুইপক্ষের এমন কর্মসূচি থেকে সংঘর্ষের আশঙ্কায় স্থানীয় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করতে চেয়েছিল। কিন্তু ‘রাজনৈতিক চাপে’ তা সম্ভব হয়নি। ফলে দুইপক্ষ মুখোমুখি হয়ে জড়ান রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে। গত ২২ জুনের এ সংঘর্ষে প্রাণ যায় বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুলের। এছাড়া দুইপক্ষের আহত হন অর্ধশতাধিক। এ সংঘর্ষের নেপথ্যের কারণ উপজেলা দলিল লেখক সমিতির অতিরিক্ত টাকা আদায়। ২০১৯ সাল থেকে রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহরিয়ার আলম দলিল লেখক সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ঠিক করে দিচ্ছেন। এ কমিটির নেতারা দলিল লেখার সময় ক্রেতাদের কাছ থেকে লেখকদের অতিরিক্ত টাকা নিতে বাধ্য করে। গত ৯ জুন এমপি শাহরিয়ার আলম দলিল লেখক সমিতির নতুন সভাপতি হিসেবে উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি শাহিনুর রহমান পিন্টু ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পাকুড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শামিউল আলম নয়নের নাম লিখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) মোবাইলে খুদে বার্তা দেন। পরদিন পিন্টু ও নয়ন দায়িত্ব নিতে গেলে দলিল লেখকদের একাংশের বিরোধিতার মুখে পড়েন। সেদিন দলিল লেখকদের সংঘর্ষে দুইপক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হন। বাঘার ২২ জুনের সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় সেদিনই। সরেজমিনে দলিল লেখক, স্থানীয় বাসিন্দা, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। ইউএনও তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘উনি (এমপি) ৯ জুন দলিল লেখক সমিতির সভাপতি-সম্পাদকের নাম মেনশন করে টেক্সট করেছিলেন। আমার কাছে অনেকেই অনেক কিছু পাঠাতেই পারেন।’ দলিল লেখক সমিতির সভাপতি শাহিনুর রহমান পিন্টু বলেন, ‘জমির যে দাম হয়, সে দামের প্রতি এক লাখের জন্য আমরা ক্রেতার কাছ থেকে ৪ হাজার টাকা করে অতিরিক্ত নিয়ে থাকি। এটা সমিতির উন্নয়নের জন্য। সারাদেশেই এটার প্রচলন আছে।’ SHARES সারা বাংলা বিষয়: