জাবিতে গভীর রাতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা

প্রকাশিত: ১১:০১ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৬, ২০২৪

কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে পুলিশ।

আন্দোলনকারী-পুলিশ-ছাত্রলীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষে দুই অধ্যাপক, চার সাংবাদিকসহ আহত হয়েছেন শতাধিক শিক্ষার্থী। আহত শিক্ষার্থীদের সাভারে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সোমবার (১৫ জুলাই) দিনগত রাত তিনটার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে হামলার ঘটনা ঘটে।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, সোমবার সন্ধ্যায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাত ৯টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা হামলার বিচারে দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। পরে তাদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ‘ভিসির বাসায় যখন ছাত্ররা আশ্রয় গ্রহণ করে তখন সন্ত্রাসীরা উপাচার্যের বাসভবনে শিক্ষার্থীদের অবরুদ্ধ করে। উপাচার্য ভবনে আমরা কয়েকজন শিক্ষক প্রবেশ করি এবং প্রক্টর ও কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষকের সাথে কথা বলাকালীন পুলিশের উপস্থিতিতে সন্ত্রাসীরা উপাচার্যের বাসার মেইন গেইট ভেঙ্গে বাসায় প্রবেশ করে। এসময় সশস্ত্র অবস্থায় সাধারণ শিক্ষক শিক্ষার্থীদের উপর নৃশংস হামলা চালায়। আমরা তখন উপাচার্যের বাসার একটি কক্ষে আশ্রয় নেই। কিন্তু সন্ত্রাসী আমাদের শিক্ষক পরিচয় জানার পরেও হামলা চালিয়ে যেতে থাকে। সন্ত্রাসীদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ও বহিরাগতদের উপস্থিতি ছিল। এক পর্যায়ে নিরাপত্তা কর্মকর্তা সজল এসে আমাকে উদ্ধার করে। তবে এর মধ্যে প্রায় সকল শিক্ষক এবং অধিকাংশ শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। সন্ত্রাসীদের হামলার পরেই পুলিশের হামলা শুরু হয়। তারা গুলি, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে চেষ্টা করে। কিন্তু যখন সন্ত্রাসীরা ভিসির বাসা ভাঙচুর ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে তখন পুলিশ নিরব ভূমিকা পালন করে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম তাণ্ডব এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতা আমি কখনো দেখিনি।’

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ সময় বহিরাগতদের নিয়ে ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মী তাদের ওপর হামলা চালায়। আত্মরক্ষার জন্য শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনে আশ্রয় নেন। এ সময় উপাচার্য বাসভবনে ছিলেন। সেখানে আশ্রয় নেওয়া আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। দুটি পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে উপাচার্যের বাসভবনের প্রধান ফটকের লাইটসহ বিভিন্ন লাইট ভাঙচুর করে ছাত্রলীগ। পরে রাত পৌনে দুইটার দিকে ফটক ভেঙে উপাচার্যের বাসভবনে ঢুকে আন্দোলনকারীদের ব্যাপক মারধর করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে রাত সোয়া দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপাচার্য বাসভবনের দিকে যান। এ সময় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেন তারা। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। পরে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।

এর আগে, সোমবার সন্ধ্যার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায় তাদের ওপর হামলা হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহের হোসেন বলেন, ক্যাম্পাসে বহিরাগতরা ঢুকে ছাত্রছাত্রীদের ওপর হামলা করেছে।

ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) আবদুল্লাহ হিল কাফী বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সর্বাত্মক সচেষ্ট রয়েছে পুলিশ।